এই সময়, আলিপুরদুয়ার ও কোচবিহার: গত এক বছরে ট্রেনচালক ও রেলকর্মীদের তৎপরতায় উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলে ১৬০টি হাতির প্রাণ রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে বলে দাবি করেছে রেল। উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক কপিঞ্জল কিশোর শর্মা এই বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন। তিনি বলেন, 'আমরা রেলপথে হাতির মৃত্যু রুখতে ইতিমধ্যেই আলিপুরদুয়ার ডিভিশনের ডুয়ার্স রুট, রঙ্গিয়া, লামডিং এবং তিনসুকিয়া ডিভিশনে আইডিএস প্রযুক্তি প্রতিস্থাপন করেছি। ধাপে ধাপে ওই পরিধি আরও বাড়ানো হবে।'
যদিও রেলের এই পরিসংখ্যানের সঙ্গে একমত নয় বন দপ্তর। বনকর্তাদের পাল্টা অভিযোগ, রেল ওই নথি কিংবা তথ্য বন দপ্তরের সঙ্গে শেয়ার করেনি। উত্তরবঙ্গের মুখ্য বনপাল (বন্যপ্রাণ শাখা) ভাস্কর জেভি বলেন, '১৬০টি হাতির প্রাণ বাঁচানোর যে তথ্য রেল সামনে এনেছে, তার কোনও খুঁটিনাটি আমাদের জানানো হয়নি। তবে একথা ঠিক যে, আইডিএস প্রযুক্তি প্রতিস্থাপনের ফলে রেললাইনে হাতি মৃত্যুর হারে লাগাম টানা সম্ভব হয়ছে। আমরা চাই রেল ওই কাজে আরও সমন্বয় আনুক। আমাদের সঙ্গে তথ্য বিনিময় করুক।'
উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের জন্য ২০২২-এ আইডিএস (ইনট্রুশন ডিটেকশন সিস্টেম) প্রকল্পের অনুমতি দেয় রেল। পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে রেলের আলিপুরদুয়ার ডিভিশনের মাদারিহাট থেকে নাগরাকাটার মাঝে ৩৫টি রেলপথে বন্যপ্রাণীদের দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা করতে ও হাতির মৃত্যু ঠেকাতে অত্যাধুনিক এই প্রকল্প ২০২৪-এ শুরু হয়েছিল। তবে এই প্রকল্পের সমস্ত হাতির করিডরে বাস্তবায়ন আজও শত হস্ত দূরে। এখনও পর্যন্ত সব মিলিয়ে প্রায় ২০৯ কিলোমিটার হাতির করিডরের মধ্যে মাত্র ৬৩ কিলোমিটারে আইডিএস বসেছে। বাকি আরও ১৪৬ কিলোমিটার রেলপথে এই কাজ কবে শেষ হবে, তা হলফ করে বলতে পারছেন না রেলকর্তারা।
কী এই আইডিএস? এই সিস্টেমে রেল লাইনের দু'পাশে ফাইবার অপটিক লাগানো থাকবে। রেললাইনের ধারে হাতি-সহ বন্যপ্রাণীরা চলে এলে সেই ফাইবার অপটিকের মাধ্যমে ওই পথ দিয়ে চলা ট্রেনের চালকরা বুঝতে পারবেন। তার সঙ্গে স্থানীয় ডিভিশনের কন্ট্রোল রুম ও নিকটবর্তী রেল স্টেশনের ম্যানেজারের কাছেও বার্তা যাবে। শুধু তাই নয়, কতগুলি হাতি রয়েছে, কতটা দূরত্বে রয়েছে, সবই জানা যাবে। ফলে আগে থেকেই সতর্ক হয়ে যাবেন ট্রেনচালকরা। রোখা যাবে দুর্ঘটনা। তবে রেলপথে হাতির করিডরে কবে সম্পূর্ণ ভাবে আইডিএস বসবে, সেটাই লাখ টাকার প্রশ্ন।