‘সমর্থক’ কর্মচারী চিহ্নিত করতে উদ্যোগী তৃণমূল, চাওয়া হচ্ছে ঘোষণাপত্র
আনন্দবাজার | ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫
রাজ্য সরকারের পক্ষে ‘ডিজিটাল’ প্রচারে যুক্ত হতে সরকারি কর্মচারী ও আধিকারিকদের কাছে সম্মতি চাইল তৃণমূল কংগ্রেস। ঘোষণাপত্রের আকারে তৃণমূল প্রভাবিত রাজ্য সরকারি কর্মচারী সংগঠন এই প্রক্রিয়ায় উদ্যোগী হয়েছে। প্রশাসনিক মহলে একাংশের ধারণা, ভোটের আগে সরকারি আধিকারিক ও কর্মীদের মন বুঝতেই এই বিশেষ কৌশল নিয়েছে শাসক দল। সে ক্ষেত্রে এই প্রচার-দলে যুক্ত হতে না চাইলে কর্মচারী ও আধিকারিকদের ‘সরকার-বিরোধী’ হিসেবে চিহ্নিত করা হতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।
নির্বাচন পরিচালনার সিংহ ভাগ দায়িত্বই থাকে রাজ্য সরকারের কর্মচারীদের উপরে। ভোটের প্রস্তুতি, ভোট-গ্রহণ ও গণনাপ্রক্রিয়ায় নানা স্তরের কর্মচারী ও আধিকারিক বাছাই করা হয়। এ বারের ভোট-পর্বে তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ভোটার তালিকার নিবিড় বিশেষ সংশোধন বা এসআইআর। এই কাজেরমধ্যেই সরকারি কর্মচারীদের কাছে একটি বিশেষ বার্তা পাঠিয়েছে তৃণমূল প্রভাবিত রাজ্য সরকারি কর্মচারী ফেডারেশন। সেই বার্তায় সংশ্লিষ্ট কর্মচারীর কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে, তাঁরা ‘বাংলার ডিজিটাল প্রচার কর্মসূচিকে সমর্থনে আগ্রহী কি না।’ আগ্রহ থাকলে তাঁরা কী ভাবে, সমাজমাধ্যমের কোনশাখায় যুক্ত হতে চান, তা-ও জানতে চাওয়া হয়েছে ফেডারেশনের তরফে। এই উদ্যোগের কথা মেনেই সংগঠনের রাজ্য আহ্বায়ক প্রতাপ নায়ক বলেছেন, ‘‘এই মুহূর্তে আমাদের সংগঠনের সদস্য সংখ্যা তিন লক্ষ। তাঁরা ‘মা-মাটি-মানুষ’-এর সরকারের জনমুখীপ্রকল্পে আস্থা রেখে এই সদস্যপদ নিয়েছেন। তাঁদের কাছেই জানতে চাওয়া হয়েছে, তাঁরা সরকারের কাজের প্রচারে সময় দিতেপারবেন কি না। অন্য কারও কাছে জানতে চাইনি।’’ তবে এই সম্মতির সঙ্গে রাজনৈতিক ভাবে চিহ্নিত করার আশঙ্কা অমূলক বলে মনে করছেন তিনি।
প্রশাসনিক মহলের একাংশের মতে, ভোটের মুখে রাজ্য সরকারের প্রচারের অংশ হিসেবে এই আবেদন ‘অনৈতিক’। কারণ, ভোটের পরিপ্রেক্ষিতে এই রকম সম্মতি সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে কর্মচারী বা আধিকারিকদের উপরে ঘুরিয়ে রাজনৈতিক চাপ তৈরি করা হয়। সংশ্লিষ্ট কর্মচারী সম্মতি দিলে তাঁকেকার্যত শাসক দলের পক্ষে কাজের সম্মতি জানাতে হয়। আর অন্যথায় ওই সরকারি কর্মচারীকে শাসকের বিরোধী বলে চিহ্নিত করার আশঙ্কা থাকে। শাসক দলের কর্মচারী সংগঠনের এই উদ্যোগে সরকারি কর্মীদের ব্যক্তিগত রাজনৈতিক মতামতের পরিসরে ‘নাক গলানো’ বলেই মনে করছেন আধিকারিকদের অনেকে। এই বার্তা নিয়ে কর্মচারীদের উদ্বেগ পৌঁছেছে রাজ্য সরকারের শীর্ষ স্তরের আমলাদের কাছেও। এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘ভোটের আগে সরকারি কর্মচারীদের নিয়ে এই উদ্যোগ বাঞ্ছনীয় নয়। কারণ, রাজনৈতিক মত গোপন রাখা সকলের অধিকার। আর সরকারি কর্মচারীদের কাছে তা দায়িত্ব। ফলে, এতে ভুল বোঝাবুঝি তৈরিহতে পারে।’’
কর্মচারীদের জন্য ঘোষণাপত্রের আকারে এই সম্মতি দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে ফেডারেশন। তাতে সংশ্লিষ্ট কর্মচারী কোন জেলার কোন দফতরে এবং কোন পদে কর্মরত, সে কথাও জানাতে হবে। একই সঙ্গে যে বিধানসভা কেন্দ্রে বাস করেন, ঠিকানা সহ তারও বিবরণ দিতে বলা হয়েছে ওই ঘোষণাপত্রে। সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত নেতা তথা রাজ্যের মন্ত্রী মানস ভুঁইয়ার বক্তব্য, ‘‘আমরা সদস্যদের তালিকা ডিজিটাইজ় করতে চেয়েছি। এর সঙ্গে দলের সম্পর্ক নেই।’’