• পুণ্যার্থী শিবির তৈরির জন্য গঙ্গাসাগর যাচ্ছে হোগলার চাদর, ব্যস্ততা কোলাঘাটে
    এই সময় | ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫
  • দিগন্ত মান্না, পাঁশকুড়া

    আগামী জানুয়ারিতে শুরু হচ্ছে গঙ্গাসাগর মেলা। পুণ্যার্থী শিবির তৈরির কাজ চলছে জোর কদমে। বরাবর সেই শিবির তৈরি হয় হোগলার চাদর দিয়ে। যা পাঠানো হয় কোলাঘাট থেকে। নাওয়াখাওয়া ভুলে এখন হোগলার চাদর তৈরি করছেন কোলাঘাটের হোগলা শিল্পীরা। তাঁরা জানাচ্ছেন, জলপথে বেশিরভাগ হোগলার চাদর পাঠানো হয়েছে। অন্য বারের তুলনায় এ বার চাহিদা অনেকটাই বেড়েছে।

    স্থানীয় শিল্পীরা জানাচ্ছেন, কোলাঘাটের নগুরিয়া থেকে বহু বছর ধরে হোগলার চাদর যায় গঙ্গাসাগরে। প্রতি বছর কার্তিক মাস থেকে নগুরিয়ার শিল্পীরা ব্যস্ত হয়ে পড়েন চাদর তৈরি করতে। স্থানীয় সূত্রের খবর, মূলত তমলুক, শহিদ মাতঙ্গিনী, কোলাঘাট ও গেঁওখালি এলাকায় রূপনারায়ণের চরে জন্মায় হোগলা ঘাস। কার্তিকের প্রথম দিকে সেগুলো কাটা হয়। স্থানীয়দের থেকে প্রয়োজন মতো পাতা কিনে নেন নগুরিয়ার হোগলা ব্যবসায়ীরা। তা থেকেই তৈরি হয় দু'রকম হোগলার চাদর। মকর সংক্রান্তির বেশ কিছুদিন আগেই সেগুলো নৌকোয় পাঠানো হয় গঙ্গাসাগরে।

    নগুরিয়ার প্রায় তিনশো শিল্পী ওই চাদর তৈরির কাজ করেন। গ্রামের বিশ্বজিৎ আদক, গোপাল কারক, প্রদীপ আদকেরা পৈতৃক সূত্রে এই ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। তাঁদের বাবা-কাকারা ৪৫ বছর আগেও গঙ্গাসাগরে হোগলা পাতার চাদর সরবরাহের কাজ করতেন। বিশ্বজিৎ জানাচ্ছেন, আগে প্রতি বান্ডিল হোগলা কিনতে খরচ হতো ৪০০ টাকা। এ বার বান্ডিল পিছু হোগলার দাম বেড়েছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা। এক বান্ডিল হোগলা থেকে সাতটি বড় এবং তিনটি ছোট চাদর তৈরি করা যায়। চাদর তৈরির জন্য কাঁচা হোগলাকে রোদে শুকনো করতে হয়। তার পরে প্রয়োজন মতো আকারে সেগুলো কেটে ফেলা হয়। সুতোর সাহায্যে এক একটি হোগলা ঘাসকে জুড়ে তৈরি করা হয় চাদর। সাড়ে ৮ ফুট বাই ৬ ফুট এবং সাড়ে ৭ ফুট বাই ৫ ফুট এই দু'রকম চাদর তৈরি হয়।

    প্রায় সাড়ে চার দশক আগে গঙ্গাসাগরে হোগলার চাদর সরবরাহের কাজ শুরু করেছিলেন কোলাঘাটের নগুরিয়ার বাসিন্দা নিমাই আদক। কয়েক বছর ধরে নিমাইয়ের দুই ছেলে বিশ্বজিৎ ও দীপক চাদর নিয়ে পাড়ি দেন গঙ্গাসাগরে। নৌকোপথে কোলাঘাট থেকে গঙ্গাসাগর যেতে ন'ঘণ্টা সময় লাগে। এ বার গঙ্গাসাগর মেলায় ছাউনির জন্য প্রায় ৯০ হাজার হোগলার চাদরের বরাত আছে। গত বারের মতো এ বারও বড় হোগলার চাদর ১৪০ টাকা এবং ছোট চাদর ১২৫ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। কাঁচামালের দাম বাড়লেও হোগলার চাদরের দাম সে ভাবে বাড়েনি। তবে দাম না বাড়লেও চাহিদা বেড়েছে। হোগলার উৎপাদনও ভালো হওয়ায় কাঁচামাল পেতে খুব একটা বেগ পেতে হয়নি ব্যবসায়ীদের। সব মিলিয়ে গঙ্গাসাগর মেলার আগে হোগলা ব্যবসায়ীদের মুখে চওড়া হাসি।

    হোগলা ব্যবসায়ীদের কথায়, 'পূর্ব মেদিনীপুরের পাশাপাশি উলুবেড়িয়া থেকেও হোগলার পাতা কিনতে হয়েছে এ বার। চাহিদা ভালো থাকায় আয়ও ভালো হচ্ছে।' যাঁরা হোগলার চাদর তৈরি করেন তাঁদের ১০০ থেকে ২০০ টাকা করে দৈনিক মজুরি জোটে। সারা বছর চাষের কাজের পাশাপাশি হোগলার চাদর তৈরি করে বাড়তি আয় করেন নগুরিয়ার বাসিন্দারা। সেই কাজে মহিলারাও সাহায্য করেন। তাঁদের এক জন নীলিমা আদক বলছেন, 'গঙ্গাসাগর মেলার তিন মাস আগে থেকে হোগলার চাদর তৈরি করি। সংসারের কাজ সামলে এই কাজ করে বাড়তি আয় হয়।'

  • Link to this news (এই সময়)