• বছরশেষের ফল প্রকাশ্যে, পাখা মেলেই ‘প্রজাপতি’র কোটি আয় ! দ্বিতীয়, তৃতীয় স্থানে কোন ছবি?
    আনন্দবাজার | ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫
  • আদিত্য ধরের ‘ধুরন্ধর’ ছবির গতি অপ্রতিরোধ্য। তার চক্করেই কি বড়দিনে মুক্তি পাওয়া তিনটি ছবির ভাগ্য বিড়ম্বিত? এ বছর দর্শককে বিনোদন দিতে প্রেক্ষাগৃহে অভিজিৎ সেনের ‘প্রজাপতি ২’, সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ‘লহ গৌরাঙ্গের নাম রে’, অরিন্দম শীলের ‘মিতিন: একটি খুনির সন্ধানে’।

    বড়দিনের আগের সন্ধ্যায় তিনটি ছবিই মুক্তি পেয়েছে। ‘প্রজাপতি ২’ যদি মিঠুন চক্রবর্তী-দেবের ছবি হয়, তা হলে ‘লহ গৌরাঙ্গ’ সৃজিত মুখোপাধ্যায়-শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায়ের ছবি। একই ভাবে ‘মিতিন’ অরিন্দম শীল-কোয়েল মল্লিকের ছবি। এই হিসাব বলছে, ‘ধূমকেতু’ মুক্তির পর বছরশেষে আরও একবার মুখোমুখি দেব-শুভশ্রী। ‘স্বার্থপর’ ছবির সাফল্যের পর আরও একবার ময়দানে কোয়েল। তিন জনেই তিন জনের সাফল্য কামনা করেছেন। একাধিক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, তাঁরা তিনটি ছবিরই ভাল বাণিজ্য আশা করেন। কারণ, তা হলেই টলিউডের সার্বিক লাভ।

    তার পরেও প্রশ্ন থেকে যায়, সান্টাক্লজ় কার ভাগ্যে উপহারের ঝুলি উপুড় করল? কার মুখে চওড়া হাসি বছরশেষে? কে-ই বা একটুর জন্য টলিউডের ‘ফার্স্ট বয়’ হতে পারলেন না?

    আনন্দবাজার ডট কম এই প্রশ্ন করেছিল পরিবেশক এবং এসএসআর সিনেমাচেনের মালিক শতদীপ সাহাকে। তিনি বলেছেন, “১৮৩টি হল পেয়েছে প্রযোজক অতনু রায়চৌধুরীর ‘প্রজাপতি ২’। ৭০টি করে হল পেয়েছে ‘লহ গৌরাঙ্গ’ এবং ‘মিতিন’। ব্যবসার নিরিখে প্রথম স্থানে মিঠুনদা-দেব। ‘প্রজাপতি ২’ দেখতে দলে দল ভিড় জমাচ্ছেন দর্শক।” সূত্রের খবর, মাত্র তিন দিনেই কয়েক কোটির ব্যবসা করে ফেলেছে ছবিটি! তাঁর কথায়, “অবশ্যই ব্যবসার নিরিখে ‘প্রজাপতি ২’ এগিয়ে। তবে বাকি দুটো ছবিও খারাপ ব্যবসা দিচ্ছে না। তাই সব ছবির শো-সংখ্যা বেড়েছে।”

    যদিও ব্যবসার অঙ্ক জানাতে রাজি নন অতনু। তবে, নিজের এবং দেব-অভিজিতের দু’বছরের অপেক্ষা যে সার্থক, সে কথা জানাতে ভোলেননি অতনু।

    অতনুর কথায়, “দর্শক দেখে তৃপ্তি পাচ্ছেন, এটাই বড় কথা। ‘প্রজাপতি ২’ প্রমাণ করে দিয়েছে, পারিবারিক ছবি দেখতে এখনও বাঙালি ভালবাসে। আমরা যা আশা করেছিলাম তার থেকেও কয়েক গুণ বেশি ফল পেলাম। আমরা খুশি।”

    একই কথা শোনা গিয়েছে হলমালিক অরিজিৎ দত্ত, জয়দীপ মুখোপাধ্যায়, সুরঞ্জন পাল, বিদিশা বসুর কথায়।

    বিনোদিনীর (সাবেক স্টার থিয়েটার) মালিক জয়দীপ যেমন বলেছেন, “আমার এখানে প্রথম দিনেই সকালের শো-এ ‘প্রজাপতি ২’ প্রায় হাউসফুল। ১০টা টিকিট বিক্রি হয়নি। তার থেকেও বড় কথা, দেবের ফ্যানক্লাবের থেকেও সাধারণ দর্শকের সংখ্যা ছিল বেশি।” দ্বিতীয় দিনে দর্শকসংখ্যা আরও বেড়েছে সেখানে। টিকিটঘরে তৃতীয় দিনের টিকিট না পেয়ে হতাশ হয়েছেন দর্শক, এমন ঘটনারও সাক্ষী আনন্দবাজার ডট কম। প্রসঙ্গত, এই হলে ৪৮০টি আসন। জয়দীপের মতে, “বাংলা ছবিও যে সকালের শো-এ দর্শক টানতে পারে দেখিয়ে দিল ‘প্রজাপতি ২’।” বাংলা ছবির স্বার্থে একটি শো বাড়িয়েছেন তিনি। তার ফলে, দুটো শো দেব পেলে বাকি একটি করে শো পেয়েছে ‘লহ গৌরাঙ্গের নাম রে’, ‘মিতিন’, ‘ধুরন্ধর’। বাকি দুটো বাংলা ছবির ব্যবসা তুলনায় কম, এ কথা তিনিও জানিয়েছেন।

    প্রিয়া সিনেমাহলের মালিক অরিজিত দুটো শো দিয়েছেন ‘প্রজাপতি ২’কে। তাঁর কথায়, “প্রেক্ষাগৃহ হাউসফুল। ভাল ব্যবসা দিচ্ছে। দর্শক হলে সিনেমা দেখতে আসছেন। বছরশেষে এর থেকে ভাল খবর আর কী হতে পারে?” তিনি যে দুটো শো দেবকে দিয়ে ভুল করেননি, সে কথাও জানিয়েছেন। একই কথা প্রাচী সিনেমাহলের মালিক বিদিশারও। তিনি একটি করে শো দিয়েছেন ‘প্রজাপতি ২’, ‘মিতিন’কে। দুটো শো-তে চলছে ‘ধুরন্ধর’। তাঁর কথায়, “আমার প্রেক্ষাগৃহে ২১১ জন দর্শক ছবি দেখতে পারেন। দুটো কি চারটে আসন ফাঁকা থাকছে দেবের ছবির বেলায়। কোয়েলের ছবি দেখতে এখনও পর্যন্ত ভিড় জমাচ্ছেন না দর্শক।”

    বাকি দুটো ছবির তা হলে ব্যবসা কেমন? মিনার-বিজলি-ছবিঘর প্রেক্ষাগৃহের মালিক নিরঞ্জন পাল জানালেন, তাঁর মিনার সিনেমাহলে ‘প্রজাপতি ২’ এবং ‘মিতিন’ চলছে। স্বাভাবিক ভাবেই দেব ‘ফার্স্ট বয়’। হু-হু করে টিকিট বিক্রি হচ্ছে। প্রথম দিন থেকে ছবি হাউসফুল। তাঁর দ্বিতীয় প্রেক্ষাগৃহ বিজলিতে তিনটি ছবিই চলছে। সেই সিনেমাহলে দ্বিতীয় এবং তৃতীয় স্থানে যথাক্রমে ‘লহ গৌরাঙ্গ’, ‘মিতিন’। নিরঞ্জনের কথায়, “গৌরাঙ্গের অন্তর্ধানরহস্য নিয়ে আজও বাঙালি কৌতূহলী। পাশাপাশি, ছবির গান অনবদ্য। তাই এই ছবি দেখতেও দর্শক আসছেন।” প্রসঙ্গত, মিনারে ৭১১ এবং বিজলিতে ৮৫০টি দর্শকাসন

    কথা বলেছেন নবীনা সিনেমাহলের মালিক নবীন চৌখানি। তাঁর প্রেক্ষাগৃহে ‘প্রজাপতি ২’ চলছে না। নবীন বলেছেন, “আমার হলে কোয়েল এগিয়ে। চতুর্থ সপ্তাহেও নতুন ছবির পাশাপাশি ভাল ব্যবসা করছে ‘ধুরন্ধর’।” তাঁর প্রেক্ষাগৃহে শো না পাওয়ায় অভিমানী দেব। প্রযোজক-অভিনেতা যদি ছবি ব্যবসার ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারেন, তা হলে কি ‘প্রজাপতি ২’ নবীনায় জায়গা পাবে? নবীনের বক্তব্য, “নতুন বছর পর্যন্ত ছবি যা চলছে, সেটাই চলবে। নতুন বছর পড়ার পর ফলাফল দেখব। বাকি দুটো ছবির প্রযোজকদের সঙ্গে কথা বলব। তার পর সব দিক বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেব।”

    টলিউডের মতে, ছবির ব্যবসার নিরিখে বছরশেষের পরীক্ষায় সৃজিত আপাতত ‘সেকেন্ড বয়’। কী বলছেন ‘লহ গৌরাঙ্গের নাম রে’ ছবির অন্যতম প্রযোজক রানা?

    আনুষ্ঠানিক ঘোষণার সময়েই ছবির অন্যতম জানিয়েছিলেন, এটি তাঁর স্বপ্নের ছবি এবং একটু অন্য ধারার। তাই দর্শক হয়তো তুলনায় কম আসবে। মুক্তির পরে অন্যতম প্রযোজক বলেছেন, “এই ছবির ব্যবসা ধীর গতিতে বাড়বে। আমরা তাই অপেক্ষা করছি।” ইতিমধ্যেই ছবিটির প্রেক্ষাগৃহ এবং শো-সংখ্যা বেড়েছে। এই মুহূর্তে ৯০টি হলে ১২০টি শো পেয়েছে ‘লহ গৌরাঙ্গের নাম রে’। যদিও ছবির ব্যবসা তিন দিনে কত, সে প্রসঙ্গে এখনই মুখ খুলতে নারাজ রানা।

    রবিবার ছুটির দিন। তাই শনিবারেই শহরের অধিকাংশ প্রেক্ষাগৃহে টিকিট বিক্রি শেষ। সপ্তাহান্তে হাইসফুল বোর্ড ঝুলবে আবার, আশা হলমালিকদের। তবে আপাতত ‘পাখির চোখ’ সোমবার। বিনোদনদুনিয়ার ভাষায় এই দিন ‘অ্যাসিড টেস্ট’-এর দিন। এই দিন যে ছবি পেরিয়ে যেতে পারবে সেই ছবিই বাজিমাত করবে।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)