নিজস্ব প্রতিনিধি, জলপাইগুড়ি: চা নিয়ে কেন্দ্রের নির্দেশিকায় বড়সড় ধাক্কা খেতে পারে দেশের প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার ফিউশন ও হার্বাল টি’র ব্যবসা। এমনটাই মনে করছে উত্তরবঙ্গের চা শিল্প মহলের একাংশ। চায়ের নাম করে কোনও ‘হার্বাল টি’ বিক্রি করা যাবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে ফুড সেফটি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্স অথরিটি অব ইন্ডিয়া।
তাদের স্পষ্ট বক্তব্য, চা মানে শুধুমাত্র ন্যাচারাল টি। এরসঙ্গে কোনও উপাদান মিশিয়ে সেটিকে ‘চা’ বলে বিক্রি করা যাবে না। এফএসএসএআই’র (ফ্যাসাই) এই নির্দেশিকার জেরে হার্বাল টি’র ব্যবসা মার খেতে পারে বলে মনে করছে ডুয়ার্সের একাধিক চা বাগান কর্তৃপক্ষ। তাদের দাবি, স্বাস্থ্য সচেতন মানুষ এখন হার্বাল চায়ের দিকে ঝুঁকছে। এই চা কার্যত ট্রেন্ডিং হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিবছর ১৩ শতাংশ হারে ব্যবসা বাড়ছে। সমীক্ষা বলছে, ২০৩২ সালের মধ্যে দেশে সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে হার্বাল টি’র ব্যবসা। এই পরিস্থিতিতে তুলসী টি, টারমারিক টি কিংবা রোজ টি বা জিঞ্জার টি’কে যদি চা বলা না যায়, তাহলে বিক্রি মার খাবে বলে দাবি উৎপাদকদের। যদিও ফ্যাসাইয়ের নির্দেশকে স্বাগত জানিয়ে উত্তরবঙ্গের চা শিল্প মহলের অপর অংশের দাবি, চায়ের স্বতন্ত্র পরিচয় বজায় রাখা জরুরি। চায়ের সঙ্গে অন্য কিছু মেশালে সেই স্বতন্ত্রতা নষ্ট হয়।
কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান স্মল টি গ্রোয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বিজয়গোপাল চক্রবর্তী বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমরা বিভিন্ন ফোরামে বলে আসছিলাম, চায়ের নাম করে যেসব ফিউশন টি এবং হার্বাল টি বিক্রি হচ্ছে, তা বন্ধ হোক। অবশেষে কেন্দ্রীয় সরকার আমাদের বক্তব্য মেনে নিয়েছে। এই নির্দেশিকার ফলে ন্যাচারাল চায়ের বিক্রি অনেকটাই বাড়বে বলে মনে করি।
ফ্যাসাইয়ের নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, ক্যামেলিয়া সিনেনসিস ছাড়া সেটিকে কোনওভাবে চা বলা যাবে না। নিয়ম না মানলে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হবে। ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত জরিমানা কিংবা জেল হতে পারে। যদিও কেন্দ্রের এ হেন সিদ্ধান্তে ক্ষোভপ্রকাশ করে আলিপুরদুয়ারের মাঝেরডাবরি চা বাগানের সিনিয়র ম্যানেজার চিন্ময় ধর বলেন, আমরা তো কোনও ফ্লেভার ব্যবহার করছিলাম না। চায়ের সঙ্গে পিওর হার্বাল ইনগ্রিডিয়েন্ট যোগ করছিলাম। সেক্ষেত্রে অসুবিধার কী হচ্ছিল, এটাই বুঝতে পারলাম না। এতে দেশজুড়ে হার্বাল টি’র যে বিরাট ব্যবসা, তা মার খাবে।
গোটা উত্তরবঙ্গের মধ্যে সবচেয়ে বেশি হার্বাল টি উৎপাদন করে থাকে আলিপুরদুয়ারের মাঝেরডাবরি বাগান। এদের অন্তত ২৫ ধরনের হার্বাল ও ফিউশন টি রয়েছে। এরমধ্যে গোলাপ চা, অপরাজিতা চা, সজনে চা, আদা চা, হলুদ চা, ক্যামোমাইল চা থেকে সম্প্রতি লাখ টাকা কেজি দরের গোল্ড টি বিশেষ উল্লেখযোগ্য। আগামী দিনে এই চায়ের বাজার কোথায় দাঁড়াবে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় বাগান কর্তৃপক্ষ। ইন্ডিয়ান টি প্ল্যান্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের উপদেষ্টা অমৃতাংশু চক্রবর্তীর বক্তব্য, চায়ের স্বতন্ত্র পরিচয় জরুরি। কেউ চায়ের সঙ্গে কোনও উপাদান মিশিয়ে খেতে চাইলে, সেটা আলাদা ব্যাপার।