• স্কুলের ক্লাসরুমে গলায় ফাঁস বিএলও প্রধান শিক্ষকের
    আজকাল | ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: এসআইআর প্রক্রিয়া ঘিরে একের পর এক মর্মান্তিক ঘটনা বাংলায়। কেউ দেশছাড়া হওয়ার আতঙ্কে আত্মঘাতী, কেউ বা কাজের চাপে নাজেহাল হয়েই আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছেন। বছরের শেষভাগে অতিরিক্ত কাজের চাপে আরও এক বিএলও আত্মঘাতী হলেন। 

    এবার ঘটনাস্থল বাঁকুড়া। রানিবাঁধ এলাকায় আত্মঘাতী হয়েছেন হারাধন মণ্ডল নামের এক ব্যক্তি। জানা গেছে, রানিবাঁধ বিধানসভার রাজাকাটা এলাকায় ঘটনাটি ঘটেছে। তিনি এক প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। রানিবাঁধ বিধানসভার ২০৬ নম্বর বুথে বিএলও-র দায়িত্ব সামলাচ্ছিলেন তিনি। রবিবার সকালে তাঁর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার হয়েছে একটি সুইসাইড নোট। 

    মৃত বিএলও-র পরিবারের তরফে জানা গেছে, এসআইআর শুরু হওয়ার পর থেকেই অতিরিক্ত কাজের চাপ ছিল। একাধিকবার জানিয়েও ছিলেন। রবিবার সকালে কাজের অজুহাতে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন তিনি। দীর্ঘক্ষণ বাড়ি না ফেরায় শুরু হয় খোঁজাখুঁজি। কিছুক্ষণ পর স্কুলের একটি ক্লাসরুম থেকে তাঁর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়‌। রানিবাঁধ থানার পুলিশ দেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজে পাঠিয়েছে। 

    এই ঘটনার পরেই রবিবার দুপুরে এক্স হ্যান্ডেলে একরাশ ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক ব্যানার্জি। তাঁর কথায়, 'মৃত্যুর সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। নির্বাচন কমিশন-এর অধীনে নিযুক্ত ও কাজে যুক্ত আরেকজন বিএলও অমানবিক চাপ সহ্য করতে না পেরে নিজের জীবন শেষ করেছেন। বিশৃঙ্খল ও স্পষ্টতই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এসআইআর প্রক্রিয়ার নির্মম পরিণতি এটি।' 




    অভিষেকের আরও বক্তব্য, 'ইতিমধ্যেই ৫০ জনের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। আতঙ্ক, উৎকণ্ঠা, চরম মানসিক চাপ, ক্লান্তি ও ভয়ের কাছে হার মেনে। এই ভয় ও চাপ কোনও দুর্ঘটনা নয়, এটি পরিকল্পিতভাবে তৈরি করা হয়েছে ‘ভোটার-তালিকা সংশোধনের’ অভিযানের নামে, যার একমাত্র লক্ষ্য বিজেপির নির্বাচনী স্বার্থ। যে প্রক্রিয়া হওয়ার কথা ছিল ধীর, স্বচ্ছ ও পদ্ধতিগত, তা বুলডোজার চালিয়ে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন কমিশন এখানে আর সাংবিধানিক নিরপেক্ষতার প্রতীক নয়, বরং এক দল ও এক ব্যক্তির রাজনৈতিক অঙ্ক মেলাতে মেরুদণ্ড বেঁকিয়ে দেওয়া এক আজ্ঞাবহ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।' 

    বিজেপিকে কটাক্ষ করে তৃণমূল সাংসদ আরও লিখেছেন, 'আর বিজেপির কাছে? মানুষ যদি ক্লান্তিতে, হতাশায় বা ভয়ে মারা যায় তাহলে তা তাদের ক্ষমতার খেলায় 'সামান্য ক্ষতি', ক্ষমতা দখলের লোভের কাছে এক তুচ্ছ ঘটনা মাত্র। ইতিহাস সব দেখছে। বাংলা ক্ষমা করবে না। বাংলা ভুলবে না।'

    গত নভেম্বরে মুর্শিদাবাদের খড়গ্রাম থানার অন্তর্গত দীঘা গ্রামে জাকির হোসেন (৫৫) নামের এক বিএল ও মারা যান। তিনি খড়গ্রামের ঝিল্লি গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত ১৪ নম্বর বুথে বিএলও হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি দীঘা গ্রামে একটি প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক ছিলেন। 

    সূত্রের খবর গত কয়েকদিন ধরেই জাকির হোসেন এনুমারেশন ফর্ম ডিজিটাইজেশন করার জন্য রাত জেগে কাজ করছিলেন। সেই কাজ করার সময় বৃহস্পতিবার গভীর রাতে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। হাসপাতাল নিয়ে যাওয়ার আগেই বাড়িতে ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয়। বাড়িতে তাঁর স্ত্রী ছাড়াও এক কন্যা এবং দুই পুত্র রয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। 

    পরিবারের লোকেরা জানিয়েছেন, এলাকায় ইন্টারনেট সংযোগ খারাপ থাকায় এবং যে অ্যাপের মাধ্যমে বিএলও–দের ফর্ম ডিজিটাইজেশন করতে হচ্ছে তাতে সমস্যা দেখা দেওয়ার জন্য দিনের বেলায় তিনি এই কাজ করতে পারছিলেন না। ফলে গত কয়েকদিন ধরে প্রায় প্রতিদিনই রাত বারোটার পর থেকে তিনি ফর্ম ডিজিটাইজেশন কাজ করছিলেন। 

    পরিবারের লোকেদের অভিযোগ, নিজের সাধ্যমতো দ্রুত কাজ করার চেষ্টা করলেও নির্বাচন কমিশনের তরফ থেকে তাঁকে দ্রুত কাজ শেষ করার জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছিল। প্রতিদিন রাত জেগে কাজ করতে গিয়ে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন জাকির হোসেন। বৃহস্পতিবার রাতে এসআইআর–এর কাজ করার সময় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়। 

    মৃত বিএলও-র ভাই জোসেফ হোসেন জানিয়েছেন, ক্ষতিপূরণের বিষয়ে রাজ্যের সিইও দপ্তর আশ্বাস দিয়েছে। মৃত বিএলও স্থানীয় প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক ছিলেন। পরিবারের কেউ যাতে সেই চাকরি পান সেই ব্যাপারে সিইও দপ্তরে এসে আবেদন রাখা হয়েছিল। জোসেফ হোসেনের দাবি, যেহেতু রাজ্যের সিইও দপ্তরের চাকরি দেওয়ার এক্তিয়ার নেই, তাই এই বিষয়ে সরাসরি কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না বলে জানানো হয়।
  • Link to this news (আজকাল)