• নামেই এমার্জেন্সি, বিপদের সময়ে খুলল না মেট্রোর আপৎকালীন দরজা
    প্রতিদিন | ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫
  • সুচেতা সেনগুপ্ত: কলকাতা মেট্রো যে দিনদিন ভরসার বদলে ভয়াবহ হয়ে উঠছে, সে অভিজ্ঞতা অল্প বিস্তর ছিল। কিন্তু রবিবার বেলা ১১ টার পর ব্লু লাইনের শহীদ ক্ষুদিরাম থেকে দক্ষিণেশ্বরগামী মেট্রোর যাত্রী হিসেবে যে চূড়ান্ত আতঙ্ক ‘উপহার’ পেলাম, তা জীবনে ভুলব না। সমস্যার সূত্রপাত মহানায়ক উত্তম কুমার ( টালিগঞ্জ) মেট্রো স্টেশনে ঢোকার ঠিক আগে। হঠাৎ ঝাঁকুনি দিয়ে মেট্রো দাঁড়িয়ে পড়ল। বন্ধ হয়ে গেল কামরারা সব আলো, এসি। তখনি বোঝা গিয়েছিল, বড়সড় কোনও সমস্যা হয়েছে। এই উদ্বেগে কেটে গেল প্রায় ১২-১৩মিনিট। মেট্রোর তরফে না আছে কোনও ঘোষণা, না মেট্রো চালুর কোনও ইঙ্গিত।

    এভাবে কাটল আরও মিনিট ১০। বদ্ধ কামরায় এসি না চলায় শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা। ততক্ষণে কেউ কেউ হাসফাঁস করছেন। বলাবলি চলছে, ”অন্তত দরজা খোলার ব্যবস্থা হোক, আমরা শ্বাস নি। ” কিন্তু কোথায় কী? মেট্রো ‘বাবু’দের হুঁশ নেই। যাত্রী সুরক্ষার বালাই নেই কোনও। কিছুক্ষণ পর এই দমবন্ধকর পরিস্থিতি আরও বাড়ল। এবার শুরু হলো যাত্রীদের অসন্তোষ, ক্ষোভের বহিপ্রকাশ। কেউ কেউ  দুই প্রান্তিক কামরা থেকে চালকের সঙ্গে যোগাযোগ করলেন। চালকের নির্লিপ্ত উত্তর, ”গাড়িটা খারাপ হয়ে গেছে।” প্রতিকার কী? এতজন যাত্রী যে ভিতরে আটকে, তাঁদের কী হবে? এই জবাব স্বভাবতই চালকের কাছে নেই। এই অবস্থা থেকে উদ্ধারের কোনও রাস্তা না পেয়ে আরও খেপে গেলেন যাত্রীরা। কেউ কেউ কাচের জানলা ধাক্কা দিয়ে বলছেন, ”শ্বাস নিতে পারছি না, গরম লাগছে। এবার এই জানলা ভেঙে ফেলব আমরা।”

    ততক্ষণে মিনিট ৩৫ কেটে গিয়েছে। কামরার আপৎকালীন দরজা খোলার চেষ্টা করলেন অনেকে, খুলল না। বোঝা গেল, ওটা নামমাত্র এমার্জেন্সি ডোর, বিপদের সময় কোনও কাজ করে না। এতক্ষণে মেট্রো কর্তৃপক্ষের হুঁশ ফিরল বুঝি! মেট্রোর কোনও একজন জানালেন, যাত্রীরা সকলের টালিগঞ্জ মুখী কামরার দিকে এগিয়ে যান, সেখান থেকে তাঁদের বের করা হবে। কিছুটা আশ্বাস পেয়ে শুরু হলো অনন্ত হাঁটা। কামরার ভিতর তখন স্রেফ কালো মাথা ছাড়া কিছুই দেখা যায় না। এরপর আস্তে আস্তে দরজা খুলে দেওয়া হলো। কেউ কেউ খোলা দরজা দিয়ে লাফিয়ে ট্র্যাকে নেমে পড়তে চাইলেন। আসলে তখন সবাই ভিতর থেকে বাইরে আসতে মরিয়া। কিন্তু লোকাল ট্রেনের মতো ট্র্যাকে নেমে যাওয়া সম্ভব না। কারণ, থার্ড লাইনে রয়েছে বিদ্যুৎ, তখনো বিচ্ছিন্ন করা হয়নি।

    কিন্তু এভাবে মেট্রোর কামরার ভিতর দিয়ে হেঁটে শেষপ্রান্তে গিয়ে বাইরে বেরনো যে বিস্তর সময়ের ব্যাপার, তা বুঝেই বোধহয় কর্তৃপক্ষ স্লাইডিং সিঁড়ির ব্যবস্থা করল। একটি মাত্র কামরার সঙ্গে তা যুক্ত করা হলো, ধীরে ধীরে সেখান দিয়ে নেমে যেতে পারলেন অনেকে। কিন্তু বয়স্কদের সেই উপায় নেই। তাঁদের জন্য এই সিঁড়ি যথেষ্ট ঝুঁকির। ফলে তাঁদের আরও কিছুটা হাঁটা ছাড়া গতি নেই।

    প্রায় একঘন্টা ধরে টালিগঞ্জে মেট্রো বিভ্রাটের এই ঘটনা কলকাতা মেট্রো নিয়ে বহু প্রশ্ন তুলে দিল। কেন মাঝপথে মেট্রো বিভ্রাট হলে আপতকালীন ব্যবস্থা থাকবে না? যাত্রীদের নিরাপত্তায় এত উদাসীনতা কেন? কেন খুলল না আপৎকালীন দরজা? কেন যাত্রীদের বদ্ধ কামরা থেকে উদ্ধার করতে এত সময় লাগল? এ কি সত্যিই ঘটনার গুরুত্ব বুঝতে ভুল নাকি কর্তৃপক্ষের উপস্থিত বুদ্ধির অভাব নাকি নিছক উদাসীনতা? জবাবগুলো ভেবে রাখবেন কলকাতা মেট্রো।রোজ দিনভর পরিশ্রম করে একটু আগে বাড়ি ফিরবেন বলে যাঁরা আপনাদের পরিষেবায় অগাধ আস্থা রাখেন আজও, তাঁদের কাছে জবাবদিহি করতেই হবে।
  • Link to this news (প্রতিদিন)