মৃত্যুঞ্জয় দাস: 'আমি আর চাপ নিতে পারছি না'। SIR-র কাজের চাপে আত্মঘাতী BLO। প্রাথমিক স্কুলের ক্লাস থেকে মিলল ঝুলন্ত দেহ। ঘটনাকে কেন্দ্র করে চাঞ্চল্য ছড়াল বাঁকুড়ার রানীবাঁধে।
স্থানীয় সূত্রে খবর, মৃতের নাম হারাধন মণ্ডল। রানীবাঁধের রাজাকাটা মাঝেরপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষক ছিলেন তিনি। রানীবাঁধ বিধানসভার ২০৬ নম্বর বুথে বিধানসভা কেন্দ্রের ২০৬ নম্বর BLO-র দায়িত্ব সামলাচ্ছিলেন হারাধন। SIR-র প্রথম পর্বের কাজ শেষ। এবার শুরু হবে হিয়ারিং। যে বুথের BLO ছিলেন ওই শিক্ষক, সেই বুথের বেশ কয়েকজন ভোটারকে হিয়ারিংয়ে ডাকা হয়েছে।
পরিবারের লোকেদের জানিয়েছেন, ঘড়িতে তখন ১০টা। সকালে ভোটারদের নথি সংগ্রহ করবেন বলে বাড়ি থেকে বের হন হারাধন। এরপর থেকে তাঁর কোনও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। খোঁজাখুঁজি করতে করতে শেষে স্কুলে এসে হাজির হন তাঁরা। এরপর স্কুলের একটি ক্লাসরুমে BLO-র ঝুলন্ত দেহ দেখতে পান। ঘটনাটি জানাজানি হতেই চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে এলাকায়।
খবর দেওয়া হয় থানায়। মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য় বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজে পাঠিয়েছে পুলিস। ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া গিয়েছে একটি সুইসাইড নোট। তাতে লেখা, 'আমি আর চাপ নিতে পারছি না বিদায়। BLO র কাজের জন্য আমিই দায়ী। অন্য কারও যোগ নেই। সব ঠিক করেও আমি ভুল করলাম। ক্ষমা করো আমাকে'। পরিবারের লোকেদের দাবি, SIR-র কাজের চাপ নিতে পারছিলেন না হারাধন। কয়েকদিন ধরেই নাকি মানসিক অবসাদের ভুগছিলেন!
এর আগে, কৃষ্ণনগরে আত্মহত্যা করেছিলেন এক BLO। সুইসাইড নোটে স্প্ষ্ট করে লিখে গিয়েছিলেন, 'আমার এই পরিণতির জন্য নির্বাচন কমিশন দায়ী... এই অমানুষিক কাজের চাপ আমি নিতে পারছি না।' আত্মঘাতী এক বিএলও নাম রিঙ্কু তরফদার। বয়স প্রায় ৫৪ বছর। পেশায় একজন পার্শ্বশিক্ষিকা ছিলেন তিনি। আর বছর পাঁচেক চাকরি ছিল।
নদিয়ার চাপড়া বাঙালঝি এলাকার ২০১ নম্বর বুথের BLO ছিলেন রিঙ্কু তরফদার। আদি বাড়ি নদিয়ার চাপড়া ব্লকের বাঙালঝি গ্রামে। বছর পনেরো আগে কৃষ্ণনগরের ষষ্ঠীতলায় নতুন বাড়ি করেছিলেন তিনি। সেখানেই থাকতেন স্বামী ও দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে। পার্শ্বশিক্ষিকার চাকরি করতেন চাপড়া বাঙালঝি স্বামী বিবেকানন্দ বিদ্যামন্দিরে। এরপর যখন SIR শুরু হয়, তখন চাপড়া বাঙালঝির মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় ২০১ নম্বর বুথে BLO-এর দায়িত্ব পান রিঙ্কু।
পরিবারের লোকেরা জানিয়েছেন, BLO-র দায়িত্ব পাওয়ার পরই থেকেই মানসিক চাপে ছিলেন ওই শিক্ষিকা। প্রায়ই বলতেন, আর চাকরি করব না, আর পারছি না এই BLO-এর কাজ। এরপরই শনিবার ভোরে কৃষ্ণনগর নিজের বাড়িতে ফ্যানের সঙ্গে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মঘাতী হন রিঙ্কু। বাড়ির লোকই প্রথম ঝুলন্ত দেহ দেখতে পায়। তারপর থানায় খবর দিলে, পুলিস এসে মৃতদেহ উদ্ধার করে কৃষ্ণনগর পুলিস মর্গে নিয়ে যায়। মৃতের কাছ থেকে একটি সুইসাইড নোট উদ্ধার করে পুলিস।