এই সময়, জগদ্দল: এক সময়ে এলাকায় ছিল বিশাল আমবাগান। রাতারাতি সেই বাগান সাফ! গাছ কেটে রীতিমতো ম্যাপ টাঙিয়ে প্লট করে জমি বিক্রি হচ্ছে। শ্যামনগর কাউগাছি–১ গ্রাম পঞ্চায়েতের নীলতলা এলাকার এই ঘটনায় শোরগোল পড়েছে। পঞ্চায়েত প্রধানের অসহায় স্বীকারোক্ত, ‘আমার হাত পা বাঁধা। জমির চরিত্র বদল করা হয়েছে, বন দপ্তরও অনুমতি দিয়েছে। তাই বাধ্য হয়েই আমরা ছাড়পত্র দিয়েছি।’
কাউগাছি–১ গ্রাম পঞ্চায়েতের নীলতলা এলাকায় গত কয়েকদিন ধরে নির্বিচারে কাটা হচ্ছে একের পর এক প্রাচীন গাছ। পঞ্চায়েতের প্রধান সমীর চক্রবর্তী বলেন, ‘আগে একবার অভিযোগ পেয়ে আমরা কাজ বন্ধ করে দিয়েছিলাম। কিন্তু এ বার জমির চরিত্র বদল করে বাস্তু জমি হিসেবে দেখাচ্ছে, বন দপ্তরের অনুমতিও রয়েছে ওদের কাছে। তাই আমরা ছাড়পত্র দিতে বাধ্য হই।’ যারা ওই জমি প্লটিং করে বিক্রি করছেন তাঁদের একজন মৈনাক বিশ্বাসের দাবি, তাঁর কাছে সব ধরনের কাগজপত্র রয়েছে। তাঁর কথায়, ‘এই বাগানগুলি জঙ্গলে ভরে গিয়েছিল, এলাকায় সাপের উপদ্রপ বেড়েছিল। তাই আমরা কয়েকটা গাছ কেটে জমি পরিষ্কার করছি। বন দপ্তর ১১টা আমগাছ, তিনটে নারকেল গাছ ও একটি জামগাছ কাটার অনুমতি দিয়েছে। এর জন্য প্রয়োজনীয় টাকা জমা দেওয়া হয়েছে।’
কিন্তু এই জমি যে প্লট করে বিক্রির বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে সেই বিষয়ে মুখে কুলুপ মৈনাকের। এলাকাবাসীর দাবি, এই এলাকায় জমি মাফিয়াদের দৌরাত্ম্য এতটাই যে কারও কিছু বলার ক্ষমতা নেই। স্থানীয়দের কথায়, একটা সময় কাউগাছি এলাকার হিমসাগর আমের খ্যাতি এতটাই ছিল যে এখানকার আম রাষ্ট্রপতি পুরস্কার পেয়েছিল। গোটা এলাকায় অসংখ্য বাগান ছিল, আমের পাশাপাশি জাম, কাঁঠাল ও অন্যান্য বহু শতাব্দীপ্রাচীন গাছ ছিল। কিন্তু আজ প্রায় সব শেষ।
বন দপ্তরের এক কর্তার কথায়, ‘বাস্তু জমিতে গাছ কাটার অনুমতি দিতে বাধা নেই। গাছ কাটলে আবার গাছ লাগানোর মুচলেকা দিতে হয়। সেই সঙ্গে কিছু টাকা জমা করতে হয়। এ ক্ষেত্রে তা হয়েছিল কি না দেখা হচ্ছে।’ বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছেন ব্যারাকপুরে প্রাক্তন সাংসদ বিজেপি নেতা অর্জুন সিং। তাঁর দাবি, তৃণমূলের মদতে জমি মাফিয়ারা এলাকায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। অর্জুনের দাবি, আদালত খুললেই তিনি মামলা দায়ের করবেন এ নিয়ে।
জগদ্দলের তৃণমূল বিধায়ক সোমনাথ শ্যাম বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই৷ আমার বিধানসভা অনেক বড়। কোনও বেআইনি কাজ হলে পদক্ষেপ করি। ভূমি সংস্কার দপ্তর এবং বন দপ্তরের থেকে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করছি। বেআইনি কিছু হয়ে থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’