জি-রাম-জি আইন কার্যকরে রাজি নয় একাধিক বিরোধী শাসিত রাজ্য, কাজের দিন বাড়ানো কি জুমলা, উঠছে প্রশ্ন
বর্তমান | ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, নয়াদিল্লি: বিজেপি বিরোধী রাজ্যগুলি মোদি সরকারের ‘বিকশিত ভারত-জি রাম জি’ আইন কার্যকর করতে নারাজ। চড়ছে বিরোধিতার পারদ। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দেখানো পথেই এবার বিরোধী শাসিত রাজ্যগুলি মহাত্মা গান্ধী ন্যাশনাল রুরাল এমপ্লয়মেন্ট গ্যারান্টি আইন (মনরেগা) ফিরিয়ে আনার পক্ষে। সংসদে জোর করে ‘বিকশিত ভারত-গ্যারান্টি ফর রোজগার অ্যান্ড আজীবিকা মিশন (গ্রামীন)’ বিল (সংক্ষেপে ভিবি-জি রাম জি) পাশ করিয়েছে মোদি সরকার।
কেরল, কর্ণাটক, তামিলনাড়ু, হিমাচল প্রদেশ সরকারও নতুন আইন কার্যকর করার বিরুদ্ধে। আম আদমি পার্টির শাসনে চলা পাঞ্জাবও কেন্দ্রীয় আইনের বিরুদ্ধে বেঁকে বসেছে। আগামী কাল (৩০ ডিসেম্বর) পাঞ্জাব বিধানসভার বিশেষ অধিবেশন ডাকা হয়েছে। যেখানে পাশ হবে বিকশিত ভারত-জি রাম জি আইনের বিরুদ্ধে প্রস্তাব (রেজলিউশন)। দাবি করা হবে, মনরেগা ফিরিয়ে আনার। পাশাপাশি আগামী ৫ জানুয়ারি থেকে দেশব্যপী আন্দোলনে নামছে কংগ্রেসও। দেশের প্রতিটি ব্লকে হবে বিক্ষোভ। বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে চড়ানো হবে সুর। পাঞ্জাবের গ্রামোন্নয়নমন্ত্রী তরুণপ্রীত সিং সন্ধ বলেছেন, এই আইনে কাজের অধিকার থাকছে না। এটি একটি প্রকল্পে পরিণত হয়েছে। তাই বিরোধী রাজ্যগুলিকে কাজই দেবে না কেন্দ্র। পশ্চিমবঙ্গে যেমন তিন বছর কাজ, পয়সা সবই বন্ধ করে দিয়েছে। মনরেগাতেই এই হাল। নতুন আইনে কী হবে, সহজেই অনুমেয়।
তাই ১৭ এবং ১৮ ডিসেম্বর যথাক্রমে লোকসভা ও রাজ্যসভায় বিল পাশ করানোর তিনদিনের মাথায় রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুকে দিয়ে বিলে সম্মতি আদায় করে নিয়েছে কেন্দ্র। বিলটি আইনে পরিণত হলেও মোটেও স্বস্তিতে নেই নরেন্দ্র মোদি। সরকারের উপর চাপ বাড়ছে। কারণ, যে উদ্দেশ্যে বিল আনা হয়েছে বলে মোদি সরকারের প্রচার, সেটিই ধোপে টিকছে না। গ্রামোন্নয়নমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান বারবার প্রচার করছেন, আগে ছিল ১০০ দিনের কাজের গ্যারান্টি। এখন তা ১২৫ দিন। কিন্তু সেই ‘গ্যারান্টি’রই কোনও গ্যারান্টি আদতে নেই বলেই ওয়াকিবহাল মহলের মত। কারণ, খোদ গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের রিপোর্টই বলছে, গোটা দেশে গত পাঁচ বছরে গড়ে পরিবার পিছু কাজ পেয়েছে ৪৮ দিন। চলতি আর্থিক বছরে (২০২৫-২৬) এখনও সেটি ৩৬ দিন।
এমনকি স্বয়ং শিবরাজ সিং চৌহানের রাজ্য মধ্যপ্রদেশে গত পাঁচ বছরের গড় ৪৯ দিন। চলতি বছরে এখনও পর্যন্ত ৪১ দিন। একইভাবে মোদি-শাহর রাজ্য গুজরাতের গড় ৪৬ দিন। চলতি বছরে শ্রমিকরা কাজ পেয়েছেন মাত্র ৩৮ দিন। তার ওপর নতুন আইনে কৃষি মরশুমে ৬০ দিন এই আইন কার্যকর হবে না। ফলে ৩৬৫ দিনের বছরেই যেখানে গড়ে ১০০ দিনের কাজ মিলছে না, সেখানে ৩০৫ দিনের মধ্যে ১২৫? আদতে মোদি সরকারের আরও একটা ‘জুমলা’ হিসেবেই থেকে যাবে না তো? উঠছে প্রশ্ন। কারণ, দিন সংখ্যা বাড়িয়েছি বলে মোদি সরকার প্রচারের ঢাক পেটালেও কেন্দ্রের রিপোর্টই যে তা নস্যাৎ করে দিচ্ছে।