• বাঙালিদের বধ্যভূমি ওড়িশা! বাংলা বলায় ফের মার মুর্শিদাবাদের পরিযায়ী শ্রমিককে
    বর্তমান | ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, বহরমপুর ও মেদিনীপুর: বিজেপি শাসিত ওড়িশা কার্যত বাংলা-বাঙালির ‘বধ্যভূমি’তে পরিণত হচ্ছে। বাংলা ভাষায় কথা বলা যেন অপরাধ হয়ে উঠছে সেখানে! পেটের টানে কাজে গিয়ে শুক্রবার রাতে ভুবনেশ্বরে বঙ্গভাষী পরিযায়ী শ্রমিকরা আক্রান্ত হলেন। বাংলার শ্রমিকদের বাংলাদেশি তকমা সেঁটে আক্রমণকারীরা তাণ্ডব চালায়। তারা বিজেপি আশ্রিত দুষ্কৃতী বলেই অভিযোগ। গোপনাঙ্গে রড ভরে দেওয়ার অভিযোগ উঠছে দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে। আতঙ্কে কাজ ছেড়ে মুর্শিদাবাদের ভগবানগোলার বাড়িতে ফিরে এসেছেন ছয় পরিযায়ী শ্রমিক। অপরদিকে বাংলাদেশি সন্দেহে ভদ্রকে পুলিশের সামনেই পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশপুরের এক যুবকের হাত বেঁধে বেধড়ক মারধরের ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে। এই দুই ঘটনায় রাজ্যজুড়ে শোরগোল শুরু হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সহ তৃণমূল এ প্রসঙ্গে সোচ্চার হলেও, ভোটের মুখে ‘বাঙালি’ সাজার মরিয়া চেষ্টা চালানো বিজেপি মুখে কুলুপ এঁটেছে। ক্ষোভে ফুঁসছেন পরিযায়ী শ্রমিকদের পরিবারের সদস্যরা। তাঁদের প্রশ্ন, বাংলায় তো লক্ষ লক্ষ ওড়িয়াভাষী মানুষ কাজ করে খাচ্ছে। আমাদের ঘরের ছেলেরা আক্রান্ত হলে, তাঁরা কেন ছাড় পাবে? 

    ভুবনেশ্বরের চন্দ্রশেখরপুর থানার অন্তর্গত পাহাড়পুর এলাকায় কাজে গিয়ে নৃশংস হামলার শিকার হয়েছেন ভগবানগোলার বাসিন্দা রফিকুল শেখ। ৪০ দিন আগে ওড়িশার ভুবনেশ্বরের এক কনস্ট্রাকশন সাইটে কাজ নেন তিনি এবং তাঁর এলাকার আরও পাঁচ যুবক। শুক্রবার রাতে সাইটের একটি ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন রফিকুল ও তাঁর সঙ্গীরা। সে সময় ঘরের বাইরে ছিলেন বঙ্গভাষী লেবার ঠিকাদারও। এই সময় একদল দুষ্কৃতী প্রথমে ঠিকাদারকে মারধর করে এরপর ঘরে ঢুকে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন রফিকুলের উপর হামলা চালায়। বেধড়ক মারধর করে। সঙ্গীরা পালিয়ে রক্ষা পান। হামলায় গুরুতর জখম হন রফিকুল। প্রাথমিক চিকিৎসার পর তাঁকে ভগবানগোলায় ফিরিয়ে আনা হয়। রবিবার ভগবানগোলার কানাপুকুর হাসপাতালে তাঁর চিকিৎসা করা হয়। চিকিৎসকরা জানান, শরীরের বিভিন্ন অংশে গভীর আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। জখম রফিকুল বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গের বঙ্গভাষী লোক হলেই মারধর করছে। ওই রাতে দুষ্কৃতীরা ঘরে ঢুকে আমাকে বিছানা থেকে চ্যাংদোলা করে তুলে বাইরে আনে। তারপর ব্যাপক মেরেছে। বাংলায় কথা বলেছি বলে বাংলাদেশি ভেবে মারধর করল। সঙ্গীরা পালিয়ে গিয়ে সারারাত জঙ্গলে লুকিয়ে ছিল।’  

    অপরদিকে, কেশপুরের কলাগ্রামের বাসিন্দা আরশেদ মল্লিকও ব্যবসা করতে গিয়ে হেনস্তা ও হামলার শিকার হয়েছেন। গত ২৬ ডিসেম্বর ভদ্রকের রাস্তায় ফেরি করার সময় বাংলায় কথা বলায় তাঁকে কয়েকজন ঘিরে ফেলে। এরপর বেধড়ক মারধর করা হয়। দীর্ঘক্ষণ তাঁর হাত বেঁধে রাখা হয়েছিল বলে খবর। সে সংক্রান্ত একটি ভিডিও ভাইরাল (সত্যতা যাচাই করেনি বর্তমান) হয়েছে।  জানা গিয়েছে, এই ঘটনার সময় পৌঁছে গিয়েছিল ওড়িশা পুলিশ। আরশেদকে  উদ্ধার করে তারা। রবিবার আরশেদ বলেন, ‘খুব ভয়ে আছি। এমন দিন দেখতে হবে, তা স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি। পুলিশের সামনে হাত বেঁধেছিল। পুলিশকেও হুমকি দিচ্ছিল আক্রমণকারীরা।’ 
  • Link to this news (বর্তমান)