ডিজিটাল অ্যারেস্ট! ফাঁদে কোর্টের প্রাক্তন পেশকার, মেয়েকে গ্রেফতারির হুমকি, গয়না বিক্রি করে মেটালেন ৬৫ লক্ষ
বর্তমান | ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫
বিশ্বজিৎ মাইতি, বরানগর: ফের ডিজিটাল অ্যারেস্ট! এবার প্রতারকদের শিকার হলেন আদালতের প্রাক্তন পেশকার। দুষ্কৃতীদের পাতা ফাঁদে পা দিয়ে সর্বস্বান্ত হয়েছেন তিনি। জীবনের শেষ সঞ্চয় ফিক্সড ডিপোজিট ভেঙে সব টাকা পাঠিয়েছেন প্রতারকদের দেওয়া ব্যাংক অ্যাকাউন্টে। এখানেই শেষ নয়! স্ত্রীর গা থেকে গয়না খুলে তা বিক্রি করেও টকিা পাঠিয়েছেন। প্রতারণার অঙ্ক প্রায় ৬৫ লক্ষ টাকা। এমনকি, দিল্লিতে থাকা ওই দম্পতির মেয়েকে গ্রেফতারের হুমকি দিয়ে ব্ল্যাকমেল করে তারা। বৃদ্ধ দম্পতি আতঙ্কে এতটাই গুটিয়ে ছিলেন যে ঘটনার প্রায় একমাস পর পুলিশের দারস্থ হন। নাগেরবাজারের কাজীপাড়া এলাকার এহেন ঘটনা জানাজানি হতেই চাঞ্চল্য ছড়ায়। একের পর এক এই ধরনের ঘটনায় যেভাবে প্রবীণ নাগরিকরা শিকার হচ্ছেন, তাতে আশঙ্কার মেঘ ঘনীভূত হচ্ছে সব মহলেই।
কাজীপাড়ার বাসিন্দা বছর ৭৫-এর প্রবীর চট্টোপাধ্যায় (নাম পরিবর্তিত) কোর্টের পেশকার ছিলেন। তাঁর স্ত্রীও সত্তোরোর্ধ্ব। পড়াশোনার জন্য তাঁদের একমাত্র মেয়ে দিল্লিতে থাকেন। বৃদ্ধ দম্পতি থাকেন কাজীপাড়ার অভিজাত আবাসনে। গত ৭ নভেম্বর তাঁর মোবাইলে একটি কল আসে। নিজেকে ইডি অফিসার পরিচয় দিয়ে ফোনের অপর প্রান্ত থেকে এক ব্যক্তি প্রবীরবাবুকে জানায়, তাঁর ও তাঁর স্ত্রীর আধার নম্বর ও ফোন নম্বর ব্যবহার করে কয়েক কোটি টাকার অবৈধ লেনদেন হয়েছে। ওই মামলায় ইতিমধ্যে তাঁদের নামে জারি হয়েছে গ্রেফতারি পরোয়ানা। এরপর ইডির লোগো ও সিল নকল করে তৈরি বিভিন্ন নথি পাঠানো হয় তাঁর ফোনে। বলা হয়, তদন্তে সহযোগিতা করতে হবে। তাঁরা দু’জন বয়স্ক বলে এখনই গ্রেফতার করে থানায় উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে না। তাই তাঁদের আপাতত ‘হাউস অ্যারেস্ট’ করা হল। এরপর হোয়াটসঅ্যাপে ভিডিও কল করে সবসময় তাঁদের উপর নজরদারি শুরু হয়। মাঝেমধ্যে সুপ্রিম কোর্টের ভুয়ো অর্ডার কপি পাঠানো হয়। এমনকি, সিবিআইয়ের স্ট্যাম্প ও সিল নকল করে পাঠানো হয় চার্জশিটের কপি। তদন্তে সহযোগিতার পাশাপাশি টাকা পাঠাতে বলা হয় প্রবীরবাবুকে। প্রতারকরা বলে, এই টাকা ‘সিকিউরিটি ডিপোজিট’ হিসেবে রাখা থাকবে। তদন্তের শেষে সামান্য প্রসেসিং ফি কেটে বাকিটা ফেরত দেওয়া হবে। ততক্ষণে বৃদ্ধ দম্পতি পুরোপুরি প্রতারকদের ফাঁদে পড়ে গিয়েছেন। ফিক্সড ডিপোজিট ভেঙে লক্ষ লক্ষ টাকা পাঠাতে থাকেন তিনি। আরও টাকা হাতাতে তাঁদের মেয়েকে গ্রেফতার করা হবে বলে হুমকি দেওয়া হয়। শেষ পর্যন্ত স্ত্রীর সোনার গয়না বিক্রি করে টাকা দিতে বাধ্য হন দম্পতি। গত ২৬ নভেম্বর থেকে প্রতারকরা ফোন করা বন্ধ করে দেয়। এর প্রায় একমাস পর ২৪ ডিসেম্বর তাঁরা নাগেরবাজার থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশকে তাঁরা জানিয়েছেন, মোট সাত দফায় ৬৪ লক্ষ ৮৭ হাজার ২০৫ টাকা পাঠিয়েছেন। বেশ কয়েকটি অ্যাকাউন্ট বিদেশি ব্যাংকের। পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে।