যান্ত্রিক ত্রুটিতে স্তব্ধ টালিগঞ্জ লাইন, দেড় ঘণ্টা বন্ধ মেট্রো, দুর্ভোগ
বর্তমান | ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: বছরের শেষ রবিবার। কনকনে শীতের আমেজ। স্বভাবতই ছুটির মুডে আম জনতা। সপরিবারে কাছেপিঠে ঘুরতে বেরিয়ে পড়ার সময় এখন। তাই রাস্তঘাটে ছিল উৎসবমুখর মানুষের ভিড়। রবীন্দ্রসদন, ময়দান বা পার্ক স্ট্রিটে ঢুঁ মারার প্ল্যান ছিল অনেকের। সকাল সকাল বাড়ি থেকে বেরিয়ে মেট্রোর এসিতে কাঁপছিলেন কেউ কেউ। তখনও অবশ্য তাঁরা জানতেন না, বর্ষশেষের আনন্দ উদযাপনের বদলে তাঁদের জন্য অপেক্ষা করছে সীমাহীন দুর্ভোগ! এদিন বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ নেতাজি (কুঁদঘাট) থেকে টালিগঞ্জ ঢোকার মুখে ভয়াবহ অভিজ্ঞতার সাক্ষী থাকতে হয় মেট্রোযাত্রীদের। টালিগঞ্জ স্টেশনের কিছুটা আগে মেট্রো চালক অজানা কারণে এমার্জেন্সি ব্রেক কষেন। পুরোপুরি থমকে যায় মেট্রোর চাকা। তারপর সেই মেট্রো চালুর চেষ্টা চলে দীর্ঘক্ষণ। কিন্তু চাকা গড়ায়নি। অগত্যা শহিদ ক্ষুদিরাম থেকে ময়দান পর্যন্ত আপ-ডাউনে মেট্রো চলাচল বন্ধ করে দিতে হয়। রেলের দাবি, দেড় ঘণ্টা পর, দুপুর ১টা নাগাদ গোটা রুটে মেট্রো পরিষেবা চালু হয়েছে।
জানা গিয়েছে, আধুনিক রেকগুলিতে আপদকালীন পরিস্থিতিতে এমার্জেন্সি ব্রেক ব্যবহার করলে আটটি কোচের প্রতিটি চাকাকে লাইনের সঙ্গে কামড়ে ধরে রাখে ব্রেক শ্যু। ব্রেক রিলিজ করলে দু’পাশ থেকে শ্যুগুলি খুলে যায়। কিন্তু এদিন কোনও কারণে সেগুলি খোলেনি। ততক্ষণে যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। তবে আর পাঁচটা এরকম ঘটনার চেয়ে এদিনের পরিস্থিতি ছিল আলাদা। রেকে ভিড় ছিল মূলত কচিকাঁচা ও উৎসবের মুডে থাকা অনিয়মিত যাত্রীদের। ফলে কোচের ভিতরে আলো-এসি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় উৎকন্ঠাও ছিল কয়েক গুণ বেশি। দীর্ঘক্ষণ দমবন্ধ পরিবেশে থাকতে না পেরে কেউ কেউ মেট্রোর দরজা ভেঙে ফেলার চেষ্টা করেন। এভাবে প্রায় ৩০ মিনিট কাটলেও মেট্রো কর্তৃপক্ষের কোনও তৎপরতা চোখে পড়েনি বলে অভিযোগ। বেলা ১২টা নাগাদ ম্যানুয়ালি রেকের দরজা খুললেও নামতে গিয়ে নয়া বিপত্তির মধ্যে পড়েন যাত্রীরা। কারণ, টালিগঞ্জ স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম থেকে কিছুটা আগে ট্রেনটি দাঁড়িয়েছিল। প্ল্যাটফর্ম ও মেট্রোর রেকের মধ্যবর্তী অংশ টপকাতে সমস্যায় পড়েন যাত্রীরা। খোলা দরজার সামনে রীতিমতো জটলা তৈরি হয়। কয়েকজন যাত্রীকে প্রাণ বাঁচাতে চোখ বন্ধ করে লাইনের উপর লাফিয়ে পড়তে দেখা যায়। তারপর মেট্রো লাইনের পাশ দিয়ে হাঁটতে শুরু করেন তাঁরা। সেই দৃশ্য দেখে আতঙ্ক আরও বাড়ে। অনেকেই গলা চড়িয়ে লাইনে হাঁটতে নিষেধ করেন তাঁদের। কারণ, পাশ দিয়ে গিয়েছে হাই ভোল্টেজ থার্ড লাইন। তার সংস্পর্শে এলে মৃত্যু নিশ্চিত। যদিও ততক্ষণে লাইনে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।