মহিলা হোমগার্ডের রহস্যমৃত্যুতে অভিযুক্ত এসআই, সাসপেন্ড
বর্তমান | ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, দক্ষিণ ২৪ পরগনা: ক্যানিং থানার পুলিশ কোয়ার্টার থেকে শনিবার সন্ধ্যায় এক মহিলা হোমগার্ডের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। সেই ঘটনা এবার চাঞ্চল্যকর মোড় নিল। মৃত হোমগার্ডের পরিবারের অভিযোগ, ক্যানিং থানার এসআই সায়ন ভট্টাচার্য তাদের মেয়েকে খুন করেছেন। তিনি বিবাহিত হওয়া সত্ত্বেও গুলজান পারভিন মোল্লা ওরফে রেশমি (২২) নামে ওই হোমগার্ডের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন। সেই সম্পর্কের টানাপোড়েনেই রেশমিকে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ। ইতিমধ্যে ওই এসআইয়ের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। বিষয়টি জানাজানি হতেই নড়েচড়ে বসেছেন বারুইপুর পুলিশ জেলার কর্তারা। সংশ্লিষ্ট এসআইকে সাসপেন্ড করে তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ক্যানিং থানার পিছনেই রয়েছে পুলিশ কোয়ার্টার। সেখান থেকেই উদ্ধার হয় রেশমির ঝুলন্ত দেহ। প্রথম থেকেই এই মৃত্যু ঘিরে রহস্য তৈরি হয়। এই ঘটনা আত্মহত্যা বলে মানতে চাননি পরিবারের লোকজন। মৃতার কাকা শোয়েব মোল্লা বলেন, ‘আমার ভাইঝি আত্মহত্যা করার মেয়ে নয়। থানার এসআই সায়ন ভট্টাচার্যের সঙ্গে ওর প্রেম-ভালোবাসার সম্পর্ক ছিল। দু’জনে এদিক-ওদিক ঘুরতেও যেত। সম্পর্কে ঝামেলার কারণেই ওকে খুন করা হয়েছে। এই ঘটনার পিছনে গভীর চক্রান্ত রয়েছে।’
ইতিমধ্যে জানা গিয়েছে, বছর দুয়েক আগে পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় ভাঙড়ে রাজনৈতিক সংঘর্ষে খুন হয়ে যান গুলজানের বাবা রশিদ মোল্লা। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে অসহায় পরিবারের পাশে দাঁড়ায় নবান্ন। সরকার থেকে তাঁর মেয়েকে হোমগার্ডের চাকরি দেওয়া হয়। ক্যানিং থানাতেই তাঁর পোস্টিং ছিল। সেখানেই ওই সাব-ইনসপেক্টরের সঙ্গে আলাপ হয়েছিল রেশমির। ছ’মাসের বেশি সময় ধরে চলে দু’জনের দেদার মেলামেশা। মৃত হোমগার্ডের পরিবারের সদস্যদের দাবি, তাঁরা এই দু’জনের সম্পর্কের ব্যাপারে জানতেন। কিন্তু এর বাইরে আরও লোক জানাজানি হতেই রেশমিকে খুন করেছেন ওই পুলিশ অফিসার।
কীভাবে মৃত্যু হয়েছে ওই হোমগার্ডের, তা ময়নাতদন্তের রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত স্পষ্ট হবে না বলে মনে করছে পুলিশ। তদন্তের ক্ষেত্রে তারা কোনও সম্ভাবনাই বাতিল করে দিচ্ছেন না। গলা টিপে বা ফাঁস লাগিয়ে শ্বাসরোধ করে মেরে ফেলার পর ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে কি না, খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে পরিবার সরাসরি খুনের অভিযোগ তুললেও এখনই কোনও সিদ্ধান্তে আসতে নারাজ তদন্তকারীরা। তদন্ত এগলেই বিষয়টি স্পষ্ট হবে বলে জানাচ্ছেন তাঁরা। এদিকে, রবিবার সকালে ওই হোমগার্ডের জীবনতলা থানার মৌখালির বাড়িতে যান ক্যানিং পূর্বের বিধায়ক শওকত মোল্লা। মেয়ের সঙ্গে সায়নের সম্পর্কের ব্যাপারে তাঁকে সবটাই জানান মৃতার মা। বিধায়ক তাঁদের সবরকম সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন।