• পিকনিকের মেজাজে শেষ রবিবার, ভিক্টোরিয়া থেকে ইকো পার্ক, ছুটি কাটাল শহর-শহরতলি
    বর্তমান | ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: বছরের শেষ রবিবার। ঠান্ডাও উপভোগ করার মতো। সঙ্গে মিঠে রোদ, আর মৃদু শীতল বাতাস। এমন দিনে বাঙালি অন্তত বাড়িতে থাকে না। বিছানা-কম্বল, ভাত ঘুমকে তুড়ি মেরে তারা চলে আসে চিড়িয়াখানা-ময়দান-ভিক্টোরিয়ায়। এসব যাঁদের কাছে একঘেয়ে, তাঁদের জন্য ইকো পার্কে। আবার নিক্কো পার্কেও এদিনের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। বাড়ি থেকে আনা খাবারে ময়দানে বসে পিকনিক, তারপর খোলা আকাশের নীচে চোখে একটা রুমাল দিয়ে শুয়ে পড়া... এই নিয়েই সাধারণের বছর শেষের রবিবার হয়ে উঠল অসাধারণ।

    চিড়িয়াখানা পেরিয়ে চন্দননগরের খুদে চন্দ্রাণী যখন ময়দানে এসেছে, তার চোখে তখনও ‘এলিফ্যান্টে’র ঘোর কাটেনি। ঘোড়া চলছে দেখে সে চেঁচিয়ে উঠে বলল, ‘মা, ওই দেখো হর্স! এটাও কি চিড়িয়াখানা?’ মা-বাবা-মাসি-মেসোর হাসির কলোরলে চন্দ্রাণী একটু লজ্জাই পেল। তারপর বায়না, সে ঘোড়ার পিঠে উঠবে। যদিও সেই বায়না মিলিয়ে গেল হাতে প্রিয় চকোলেট পাওয়ার পর। সেন্ট পলস ক্যাথিড্রাল, বিড়লা তারামণ্ডলের সামনে ততক্ষণে লম্বা লাইন। নিজের সেরা ছবিটা তখনও তোলা হয়নি বারাসতের তরুণীর। সেই রাগ গিয়ে পড়ছে সঙ্গে থাকা বন্ধু-বান্ধবীর উপর। বজবজের বাসিন্দা শ্যামল রায় বলছিলেন, ‘এ বছর আর পাড়ার পিকনিকে যাইনি। পরিবারের সবাইকে নিয়ে শহর ঘুরতে বেরিয়েছি। একেবারে সকাল থেকে। চিড়িয়াখানা, ভিক্টোরিয়া, চার্চ ঘুরে এখন ময়দানে একটু বিশ্রাম। তারপর ট্রেন ধরে বাড়ি ফিরে যাব।’ এরই মধ্যে আবার সকালের দিকে মেট্রো বন্ধ ছিল। তার জন্য দক্ষিণ শহরতলি থেকে অনেকেরই শহরমুখী হতে সময় লেগেছিল। যদিও সাময়িক সেই বিরক্তি ত্যাগ করে মানুষ যখন চিড়িয়াখানায় এসে দেখলেন বাঘ একেবারে রাজকীয়ভাবে হেঁটে চলেছে, হাসি ফুটল মুখে। ভিড়ে ঠাসা ছিল ইকো পার্ক থেকে নিক্কো পার্ক। সেখানেও পিকনিক, আর ছুটির মেজাজ। দক্ষিণ বারাসতের বাসিন্দা কুন্তল নস্কর বলছিলেন, ‘আমরা তো তাড়াতাড়ি আসার জন্য মেট্রো ধরব বলে ভেবেছিলাম। কিন্তু গড়িয়ায় এসে শুনি মেট্রো বন্ধ। তারপর বাসেই চিড়িয়াখানায় এলাম। বাসে চেপেই কলকাতা ঘোরা হল।’ ঘুরতে ঘুরতে তো খিদেও পায়। তরুণী-তরুণীরা যেমন রেস্তোরাঁয় প্রবেশ করলেন। তেমনই মধ্যবিত্ত সংসারি মানুষজন টিফিন বাক্স ভরে আনা খাবার নিয়ে বসে পড়লেন ঘাস খুঁজে। কী ছিল মেনুতে? ময়দানে বসে হুগলির বাসিন্দা তপন রায় বলছিলেন, ‘আমরা ১১ জন এসেছি। বাড়ির সামনে একজনকে ফ্রায়েড রাইস, আর চিকেন কষা তৈরি করতে বলে দিয়েছিলাম। সেসবই সকলে মিলে খাওয়া হচ্ছে।’ এদিন কলকাতার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বোচ্চ ২২.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আনন্দে মেতে ওঠা লোকজন বলছেন, এমন চমত্কার আবহাওয়ায় ঘরে থাকতে ইচ্ছে হয় নাকি?

    বড়দিনের সঙ্গে শেষ রবিবারের ভিড় অন্তত চিড়িয়াখানায় অনেকখানি বেশি। বড়দিনে ভিড় হয়েছিল ৪৪ হাজারের কিছু বেশি। আর এদিন তা ছাপিয়ে গেল ৭১ হাজার। একইভাবে সায়েন্স সিটি, বিড়লা তারামণ্ডলেও ভিড় বেড়েছে। খুদেদের কাছে এই একদিনই বই, টিভির বাঘ-ভল্লুক চোখের সামনে উঠে আসে। ‘কী দেখলে?’ মধ্যমগ্রামের বছর পাঁচেকের রিম্পাকে জিজ্ঞেস করলে তার উত্তর, ‘বাঘ দেখেছি। লায়ন দেখেছি। জেব্রা দেখেছি।’ জেব্রা কী বলল তোমাকে? বলল, ‘আবার আসবে।’কোথায় কত ভিড়?আলিপুর চিড়িয়াখানা ৭১১৩৯

    ইকো পার্ক ৪৯৮০০

    সায়েন্স সিটি  ২৩৭৮৮

    জাদুঘর ৭৮৮৯

    বিড়লা প্ল্যানেটোরিয়াম ৫৬২৮   
  • Link to this news (বর্তমান)