• মনোনয়ন জমা শেষ, কিন্তু বাংলাদেশ জুড়ে সন্দেহ-সংশয়
    এই সময় | ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫
  • কুদ্দুস আফ্রাদ, ঢাকা

    আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে জাতীয় সংসদের ভোট। মনোনয়ন পত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন আজ, সোমবার। কিন্তু ভোটের ঢাকে কাঠি পড়ে গেলেও উৎসবের পরিবেশের দেখা নেই বাংলাদেশে। বরং রয়েছে, সন্দেহ অবিশ্বাস— শেষ পর্যন্ত ভোটটা আদৌ হবে তো? গত দু'দিন ধরে অনেকটা নীরবেই নির্বাচন কমিশনের বিভিন্ন দপ্তরে মনোনয়ন পত্র জমা দেওয়া হচ্ছে। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, রবিবার বিকেল পর্যন্ত সারা দেশে ৩০০টি আসনের জন্য মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করা হয়েছে ২৭৮০টি এবং জমা পড়েছে ৩১টি।

    শুরু থেকেই আওয়ামি লিগ ও তাদের সমমনস্ক রাজনৈতিক দলগুলিকে রাখা হয়েছে ভোটের বাইরে। নির্বাচন কমিশন আওয়ামি লিগের নিবন্ধন ও তাদের দলের নির্বাচনী প্রতীক শুধু স্থগিত-ই করেনি, ভোট নিয়ে কমিশনের প্রস্তুতিমূলক আলোচনাতেও প্রগতিশীল ও মুক্তিযুদ্ধের প্রতি আস্থাশীল দলগুলিকে ডাকা হয়নি। রবিবার কাদের সিদ্দিকীর কৃষক শ্রমিক জনতা পার্টি, পার্বত্য চট্টগ্রামের সন্তু লারমার জন সংহতি সমিতি-সহ বেশ কয়েকটি দল ভোট থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা করেছে। এরশাদের জাতীয় পার্টির উভয় অংশের তরফে দলের প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হলেও এরশাদ অনুজ জি এম কাদেরের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি বলেছে, ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ না থাকলে, তারা ভোট বর্জন করছে। আবার, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে দেশে ফিরে আসার পর থেকে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বীদের জোটে যোগ-বিয়োগ শুরু করেছে। জামায়াতে ইসলামির সঙ্গে জোটবদ্ধ হওয়ায় ছাত্রদের নেতৃত্বে গড়া দল, জাতীয় নাগরিক পার্টিতে (এনসিপি) গণইস্তফা শুরু হয়েছে। চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি গড়া নতুন এই দলটি আট মাসের মাথায় নেতাশূন্য হয়ে বিলীন হতে চলেছে।

    আদৌ ভোট হবে কিনা, তা নিয়ে খোদ বিএনপির মতো বড় দলেও দেখা দিয়েছে সংশয়। এ দিন ঠাকুরগাঁও শহরের আলেম-ওলামাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, 'দেশ এখন ক্রান্তিকাল পার করছে। দেশকে অস্থিতিশীল করতে কিছু লোক পেছন থেকে কাজ করছে। এই নির্বাচনকে বানচাল করার চেষ্টা হচ্ছে।' সকলকে সতর্ক ও ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান তিনি।

    গত ১৭ ডিসেম্বর ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদির মৃত্যুকে ঘিরে একটি মহলের ‘ঘোলা জলে মাছ শিকার’-এর কথা বলেছিলেন তিনি কয়েক দিন আগে। এর মধ্যেই আবার, ‘আগে হাদির খুনের বিচার, তার পরে ভোট'— এই দাবিও তোলা হয়েছে। গত শুক্রবার থেকে ঢাকার শাহবাগে হাদির বিচারের দাবিতে শুরু হয়েছে ইনকিলাব মঞ্চের অবস্থান কর্মসূচি। রাজনীতির অন্দর মহল সূত্রের খবর, তারা ২০১৩ সালের 'গণ জাগরণ মঞ্চ' এর মতো আর একটি বড় সমাবেশ করে ভোট ঠেকিয়ে দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে। শনিবার গভীর রাতে তাদের এই সমাবেশে উপস্থিত হয়ে হাদি হত্যার বিচার দ্রুত শুরু করার আশ্বাস দিয়েছেন তথ্য উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেন, ‘ভারত থেকে আসামি ফেরত এনে দ্রুত মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হবে। চার্জশিট থেকে রায়– সব ধাপেই দ্রুত অগ্রগতি নিশ্চিত করা হবে। দেশের মানুষ ন্যায়বিচার পাবে, এ ব্যাপারে আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ।’ এই রাতেই ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার সাজ্জাদ আলী খানও সমাবেশে হাজির হয়ে নিশ্চয়তা দিয়েছেন, জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই হাদির খুনের মামলার চার্জশিট দেওয়া হবে। পুলিশকর্তা জানান, ইতিমধ্যে ১১ জনকে এই মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শহরবাসীর দুর্দশার কথা জানিয়ে আন্দোলনকারীদের শাহবাগ মোড়ের এই সমাবেশ তুলে নেওয়ার অনুরোধ জানালেও, কেউ তাতে কর্ণপাত করেনি। বরং রবিবার ঢাকার পাশপাশি চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, সিলেট-সহ সব বিভাগীয় শহরে অবস্থান ও ঘেরাও কর্মসূচি করা হয়েছে।

    এ দিন চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে দুপুরের পর থেকে আন্দোলকারীরা অবরোধ করায় শত-শত যানবাহন আটকে পড়ে। বছর শেষে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে বেড়াতে যাওয়া হাজার-হাজার যাত্রী শীতের কনকনে ঠান্ডায় দুর্ভোগের শিকার হলেও পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসন নির্বিকার।

    রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ মনে করছেন, শাহবাগে ইনকিলাব মঞ্চের এই অবস্থান কর্মসূচিকে গণ অবস্থানে উন্নীত করতে বড় একটি দলের সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে। পেশাজীবীদের বিভিন্ন সেক্টরে চিঠি পাঠিয়ে এই সমাবেশকে সফল করার আহ্বান জানানো হচ্ছে। গত বছরের জুলাই আন্দোলন যে ভাবে ‘পড়ুয়াদের কোটা’ সামনে রেখে নির্দলীয় চরিত্রে শুরু করা হয়েছিল, এ বারও একই কৌশল নেওয়া হচ্ছে।

  • Link to this news (এই সময়)