পশ্চিমবঙ্গে শুরু হয়েছে SIR-এর শুনানি প্রক্রিয়া। নির্বাচন কমিশন রাজ্যের বিপুল সংখ্যক ভোটারকে 'আনম্যাপড' বলে উল্লেখ করেছেন। তাঁদের নাম মেলেনি ২০০২ সালের ভোটার লিস্টে। রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দফতরের তরফে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, সম্পূর্ণরূপে যাচাই না হওয়া পর্যন্ত আপাতত এই 'আনম্যাপড' ভোটারদের ব্যক্তিগত শুনানি বন্ধ রাখা হবে।
তবে এই নিষেধাজ্ঞা সেই সমস্ত ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে যেখানে নির্বাচন কমিশনের সফ্টওয়্যারে ভোটারদের 'আনম্যাপড' হিসেবে দেখানো হয়েছে কিন্তু হার্ড কপির সঙ্গে সেটির মিল নেই। তবে ERO-রা হাতেকলমে যাচাই করে যে সব আনম্যাপড ভোটার চিহ্নিত করেছেন, তাদের ক্ষেত্রে এই নির্দেশ কার্যকর হবে না।
রাজ্য প্রশাসনের আধিকারিকদের বক্তব্য,হার্ড কপি ২০০২ সালের তালিকা খতিয়ে দেখে দেখা গিয়েছে, অনেক ভোটার বা তাঁদের সন্তানদের নাম সফটওয়্যারে 'আনম্যাপড' দেখালেও বাস্তবে ওই তালিকায় ছিল। ফলে কেন্দ্রীয়ভাবে তৈরি হওয়া নোটিশের জন্য স্থানীয় ERO-দের দোষারোপ করা ঠিক নয়, কারণ এই নোটিশ তৈরিতে তাঁদের কোনও ভূমিকা ছিল না।
উল্লেখ্য, ২৭ অক্টোবর জারি করা নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গে SIR চলাকালীন সব ভোটারকে ফর্ম পূরণ করে নিজেদের বা পরিবারের কোনও সদস্যকে ২০০২ সালের SIR তালিকার সঙ্গে ম্যাপ করতে বলা হয়েছিল। এই শর্ত পূরণ না হলে ভোটার হিসেবে নাম বজায় রাখা যাবে না, তা-ও বলা হয়েছিল।
১৬ ডিসেম্বর খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশের পর পশ্চিমবঙ্গে প্রায় ৫৮ লক্ষ ভোটার মৃত, স্থানান্তরিত বা অনুপস্থিত হিসেবে তালিকা থেকে বাদ পড়েন। পাশাপাশি, আরও প্রায় ৩১ লক্ষ ভোটারকে নির্বাচন কমিশনের সফটওয়্যার ২০০২ সালের তালিকায় পায়নি। এদেরই 'আনম্যাপড' হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে এবং তাঁদের ব্যক্তিগত শুনানিতে হাজির হয়ে নাগরিকত্বের যোগ্যতা প্রমাণ করার জন্য নোটিশ জারি করা হচ্ছে।
ব্যক্তিগত শুনানি শুরু হয় ২৭ ডিসেম্বর থেকে। এর আগেই, ২৪ ডিসেম্বর রাজ্যের পরিষেবা আধিকারিকদের একটি সংগঠন রাজ্যের CEO এবং নির্বাচন কমিশনকে চিঠি লিখে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তাদের অভিযোগ, আইনসম্মতভাবে ERO-দের ভূমিকা উপেক্ষা করে 'সিস্টেম চালিত' উপায়ে ব্যাপক হারে ভোটারদের নাম বাদ দেওয়া হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, প্রতিনিধিত্ব আইন, ১৯৫০ অনুযায়ী, কেবল সংশ্লিষ্ট বিধানসভা কেন্দ্রের ERO-ই কোনও ভোটারের যোগ্যতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করতে এবং শুনানির জন্য নোটিশ জারি করতে পারেন। ২৭ ডিসেম্বর শাসকদল তৃণমূল এই 'সিস্টেম জেনারেটেড' নোটিশের বিরুদ্ধে স্মারকলিপি জমা দেয়।
রাজ্যের অতিরিক্ত মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক সব জেলা নির্বাচন আধিকারিকদের নির্দেশ দেন, সিস্টেম থেকে নোটিশ জারি হয়ে থাকলেও যে সব ভোটারকে ২০০২ সালের তালিকায় 'আনম্যাপড' দেখা হয়েছে, তাঁদের ব্যক্তিগত শুনানির জন্য আপাতত ডাকা হবে না।
অতিরিক্ত CEO-র চিঠিতে বলা হয়েছে, অনেক ভোটারকে 'আনম্যাপড' দেখানো হয়েছে কারণ, ২০০২ সালের ভোটার তালিকার Pdf ফাইল পুরোপুরি CSV (প্লেন টেক্সট) ফরম্যাটে রূপান্তর করা যায়নি। এর ফলে নির্বাচন কমিশনের BLO অ্যাপ বহু ভোটারের লিঙ্কেজ খুঁজে পায়নি, যদিও জেলা নির্বাচন আধিকারিকদের দ্বারা প্রমাণিত ও CEO-র ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হার্ড কপি তালিকায় তাঁদের নাম ছিল। চিঠিতে আরও জানানো হয়েছে, BLO, ERO এবং অতিরিক্ত ERO-দের ২০০২ সালের তালিকার প্রাসঙ্গিক হার্ড কপি সরাসরি আপলোড করার অনুমতি দিতে নির্বাচন কমিশনের কাছে অনুরোধ জানানো হয়েছে, যাতে এই ভোটারদের সঠিকভাবে ম্যাপ করা যায়।
নির্দেশ অনুযায়ী, এমন ক্ষেত্রে যদিও সিস্টেম থেকে শুনানির নোটিশ তৈরি হয়ে থাকতে পারে, তবুও ওই ভোটারদের শুনানিতে ডাকা যাবে না এবং নোটিশগুলি ERO বা AERO-র কাছেই রেখে দিতে হবে, সার্ভ করা যাবে না। সংশ্লিষ্ট ২০০২ সালের তালিকার অংশ জেলা নির্বাচন আধিকারিকের কাছে যাচাইয়ের জন্য পাঠানো হবে। যাচাইয়ের পর ERO/AERO সিদ্ধান্ত নিয়ে নথি আপলোড করে কেস নিষ্পত্তি করতে পারবেন। প্রয়োজনে BLO-দের পাঠিয়ে ভোটারের সঙ্গে ছবি তুলে তা আপলোড করার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।
নির্বাচন কমিশনের এক শীর্ষ আধিকারিক বলেন, 'শুনানি পুরোপুরি বন্ধ হচ্ছে না। যাঁরা ইতিমধ্যে নোটিশ পেয়েছেন, তাঁরা হাজির হলে তাঁদের কেস নিষ্পত্তি করা হবে। তবে যাঁরা এখনও নোটিশ পাবেন না।'
যেসব ভোটার সিস্টেমে ‘আনম্যাপড’ হলেও হার্ড কপি তালিকায় রয়েছেন, যার সংখ্যা লক্ষাধিক হতে পারে, তাঁদের ক্ষেত্রে ব্যক্তিগতভাবে হাজির হওয়ার শর্ত শিথিল করা হবে।