উন্নাও ধর্ষণ কাণ্ডে ‘দোষী’ কুলদীপ সেনগারের জামিনে স্থগিতাদেশ দিল শীর্ষ আদালত। একইসঙ্গে দিল্লি হাইকোর্টের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বাতিলের নির্দেশেও স্থগিতাদেশ সুপ্রিম কোর্টের।
সোমবার আদালত জানিয়েছে, বিষয়টি POCSO আইনের অধীনে একজন সরকারি কর্মচারীর সংজ্ঞা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তুলছে। দিল্লি হাইকোর্টের এই ব্যাখ্যাটি বহাল থাকলে, এক জন MLA, POCSO আইনে বর্ণিত সরকারি কর্মচারীর সংজ্ঞার ব্র্যাকেটের বাইরে থাকবেন কি না তা গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনার প্রয়োজন রয়েছে। ভারতের প্রধান বিচারপতি সূর্য কান্ত, বিচারপতি জে কে মহেশ্বরী এবং বিচারপতি অগাস্টিন জর্জ মাসিহের বেঞ্চে সোমবার এই মামলার শুনানি ছিল। ২৩ ডিসেম্বর দিল্লি হাইকোর্ট সেনগারের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা স্থগিত করেন। সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে আবেদন করেছিল CBI।
সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সূর্য কান্তের পর্যবেক্ষণ,‘আমরা উদ্বিগ্ন। যে আইনের অধীনে এক জন কনস্টেবল, একজন সরকারি কর্মচারী সাজার যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন, কিন্তু আইনসভার এক জন সদস্য, বিধায়ক বা এমপি অব্যাহতি দাবি করতে পারবেন! এই বিষয়টি অবশ্যই বিবেচনার যোগ্য।’ এই বিষয়ে নোটিসও জারি করেছে শীর্ষ আদালত।
দিল্লি হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করে আদালত স্পষ্ট করে জানিয়েছে যে সেনগার কারাগারেই থাকবেন। যদিও উন্নাও ধর্ষণ মামলায় জামিন পেলেও তাঁর জেলমুক্তির সুযোগ ছিল না। ইতিমধ্যেই তিনি অন্য একটি ফৌজদারি মামলাতেও সাজা ভোগ করছেন।
এ দিন সুপ্রিম কোর্টে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা মামলাটির বর্ণনায় বলেন, ‘এটি একটি নাবালিকাকে ধর্ষণের ভয়াবহ ঘটনা। আমরা নির্যাতিতার কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য।’ তিনি জানান, ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৬ ধারা এবং পকসো আইনের ৫ ও ৬ ধারায় দোষী সাব্যস্ত হন কুলদীপ সেনগার। সে সময়ে তিনি সেই এলাকার এক জন অত্যন্ত শক্তিশালী বিধায়ক ছিলেন এবং তাঁর বিরুদ্ধে প্রভাব খাটানোরও অভিযোগ রয়েছে। এস জি মেহতা স্পষ্ট করে বলেন যে, ‘একজন সরকারি কর্মচারীর ধারণাটিকে প্রাসঙ্গিকভাবে বোঝা উচিত, অপরাধের সময়ে যিনি একজন প্রভাবশালী ছিলেন।’ এর পরেই পকসো আইনের অধীনে এক জন সরকারি কর্মচারীর ব্যাখ্যা নিয়ে তিন বিচারপতির বেঞ্চ গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তুলেছে।
উন্নাওয়ের নাবালিকাকে চাকরি দেওয়ার নামে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে তৎকালীন বিজেপি বিধায়ক কুলদীপ সেনগারের বিরুদ্ধে ২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের বাসভবনের বাইরে নির্যাতিতা আত্মহত্যার চেষ্টা করার পর এই মামলাটি আলোচনায় আসে। কয়েকদিন আগে, নির্যাতিতার বাবাকে অস্ত্র আইনের মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়। পরে পুলিশ হেফাজতে তাঁকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। পরে মামলা আদালতে উঠলে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে কুলদীপ সেনগারকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা শোনানো হয়।
২৩ ডিসেম্বর দিল্লি হাইকোর্টের বিচারপতি সুব্রহ্মণ্যম প্রসাদ ও বিচারপতি হরিশ বৈদ্যনাথন শঙ্করের ডিভিশন বেঞ্চ জানায়, পকসো আইনের ৫(সি) ধারা ও ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৬(২)(বি) ধারায় সেনগারকে ‘পাবলিক সার্ভেন্ট বা ‘সরকারি কর্মী’ হিসেবে চিহ্নিত করা যায় না। পাশাপাশি, পকসো আইনের ৫(পি) ধারায় বলা হয়েছে ‘বিশ্বাস বা কর্তৃত্বের অবস্থানে থাকা কোনও ব্যক্তি’ — সেই পরিধির মধ্যেও সেনগার পড়েন না। তাই সেনগারের যাবজ্জীবন শাস্তি স্থগিত করার সিদ্ধান্ত জানান তাঁরা।