কমবে দূষণ, পুনর্ব্যবহারযোগ্য হবে জামাকাপড় ধোয়া জলও, ধোবিঘাট-এর কথা মাথায় রেখে অভিনব আবিষ্কার বঙ্গকন্যার
বর্তমান | ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫
দিব্যেন্দু বিশ্বাস, নয়াদিল্লি: কমবে জলের অপচয়। শুধু তাই নয়। পাশাপাশি নোংরা জল নদী-নালা, পুকুর কিংবা অন্যান্য জলাশয়ে মিশে দূষণও বাড়াবে না। বরং জামাকাপড় ধোয়ার পর সেই জল বিশেষ প্রাকৃতিক পদ্ধতিতেই পরিশুদ্ধ হয়ে পুনর্ব্যবহারযোগ্য হবে। দেশের বিভিন্ন ধোবিঘাটের কথা মাথায় রেখে এমনই অভিনব আবিষ্কার করেছেন এক বঙ্গকন্যা। তিনি এনআইটি (ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি) রাউরকেল্লার ডিপার্টমেন্ট অব বায়ো-টেকনোলজি অ্যান্ড মেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের অধ্যাপক কস্তুরি দত্ত। তাঁর দাবি, এই বিশেষ ব্যবস্থায় যত খুশি জল পরিশুদ্ধ করা সম্ভব। এর কোনও সীমারেখা থাকছে না।
বর্তমানের জল সঙ্কট পরিস্থিতি এবং দূষণের প্রেক্ষিতে এমন আবিষ্কারকে তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে বিশেষজ্ঞ মহল। তাদের মতে, এর পুরোদস্তুর বাণিজ্যিক ব্যবহার শুরু হলে বহু সমস্যার সুরাহা হবে। অধ্যাপক দত্ত তাঁর দুই সহযোগী পিএইচডি স্কলার দিব্যানি কুমারি এবং এম টেক কার্তিকা সনমুগমকে সঙ্গে নিয়ে এই উদ্ভাবন করেছেন। মহিলা বিজ্ঞানী এবং গবেষক দলের নেতৃত্বে রয়েছেন এই বঙ্গকন্যা।
তাঁদের দাবি, দেশের বিভিন্ন শহরে এখনও ধোবিঘাট আর্থ-সামাজিক দিক থেকে পিছিয়ে পড়া মানুষের অন্যতম অর্থনৈতিক ভরসাস্থল। তাছাড়া ধোবিঘাটের প্রয়োজনীয়তাও অপরিহার্য। কিন্তু এই মুহূর্তে যেভাবে জনবসতি বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাতে উপযুক্ত পরিকাঠামো সমেত ধোবিঘাট টিকিয়ে রাখাই দায় হয়ে পড়ছে। কারণ পর্যাপ্ত জলের জোগান ক্রমশ কমছে। জামাকাপড় ধোয়া জল পুকুর, নদীতে মেশা নিয়ে পরিবেশবিদদের আপত্তিও যথেষ্ট সঙ্গত। ফলে রুটিরুজি হারানোর আশঙ্কাও তৈরি হচ্ছে এই পেশায় যুক্তদের।
অধ্যাপক কস্তুরি দত্তের দাবি, তাঁদের আবিষ্কার এক নিমেষে সমস্যার সমাধান করে দিতে পারবে। উদ্ভাবকেরা জানিয়েছেন, নুড়ি, সুড়কি, মাটি, বালির মতো প্রাকৃতিক উপাদানই জামাকাপড় ধোয়া জল পরিশুদ্ধির পর পুনর্ব্যবহারযোগ্য করে তোলার ব্যবস্থা তৈরিতে ব্যবহৃত হয়েছে। ব্যবহার হয়েছে গ্রাফাইটেরও। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে কিছু বিশেষ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি। জানা যাচ্ছে, উদ্ভাবনের পর বিজ্ঞানী-গবেষকদের ওই দল এর প্রথম প্রয়োগ ঘটায় এনআইটি রাউরকেল্লার ধোবিঘাটেই। ওই ধোবিঘাটে প্রতিদিন প্রায় দেড় হাজার লিটার জামাকাপড় ধোয়া জল বেরোয়। বিশেষ ওই পদ্ধতির ব্যবহার করে দেখা যায়, জলে কেমিক্যাল অক্সিজেন ডিম্যান্ড (সিওডি) ব্যুরো অব ইন্ডিয়ান স্ট্যান্ডার্ডস নির্ধারিত সহনীয় সীমার মধ্যে চলে এসেছে। অর্থাৎ, জল পরিশুদ্ধ হয়ে পুনর্ব্যবহারযোগ্য হয়েছে। ‘বর্তমান’কে অধ্যাপক কস্তুরি দত্ত বলেন, এর খরচ নিতান্তই কম। সবক্ষেত্রে যে জল ধরে রাখার জন্য ট্যাঙ্ক প্রয়োজন হবে, তাও নয়। সেক্ষেত্রে খরচ আরও কমবে। আমরা ইতিমধ্যেই বিভিন্ন পুর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এই ব্যাপারে কথাবার্তা শুরু করেছি। তারা এগিয়ে এলে আরও সুবিধে হবে।