• শুনানিতে ডাক নবতিপর, ক্যানসার আক্রান্তকেও, এসআইআর আবহে ফিরল নোটবন্দির স্মৃতি
    বর্তমান | ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি ও সংবাদদাতা: হেনস্তার নামান্তর! ভোটার তালিকা শুদ্ধিকরণের নামে অত্যাচার ছাড়া কিছুই নয়। সোমবার গৌড়বঙ্গের তিন জেলায় এসআইআর শুনানি কেন্দ্রগুলিতে কনকনে ঠান্ডায় লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা অনেকের এরকম কথাবার্তা অত্যুক্তি বলে মনে হয় না। তাঁদের আলোচনায় কারও মুখে উঠে এসেছে কেন্দ্রের ‘জুমলা’ নোটবন্দির কথাও। সেবার ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়ানো, চরম উত্কণ্ঠার প্রহর কাটানোর স্মৃতি ফিরিয়ে আনল এসআইআর। ক্যানস্যার আক্রান্ত, হার্টে ফুটো, পক্ষাঘাতগ্রস্ত-এমন ভোটারদেরও রেহাই মেলেনি। তাঁদেরও ডাকা হয়েছে শুনানিতে। তাই প্রশ্ন উঠছে, জনগণের ভালো করার জন্য তাঁদেরই কেন হাঁড়িকাঠে তোলা হচ্ছে? এর শেষ কোথায়?

    এদিন যেমন উত্তর দিনাজপুরের ইটাহার বিডিও অফিসে নথি নিয়ে শুনানিতে এসেছিলেন রানাপুর বুথের বাসিন্দা ক্যানসার আক্রান্ত ঝর্না বিবি ও কেওটাল সংসদের কুষ্ঠ রোগের শিকার বৃদ্ধা মরিয়ম বেওয়া। তাঁরা গড়ে ১৫ কিমি পথ পেরিয়ে হাজির হয়েছিলেন। ঝর্নার সঙ্গে এসেছিলেন তাঁর ছেলে সাহেব ও মরিয়মকে নিয়ে আসেন তাঁর মেয়ে মমেনা বিবি। ২০২১ সাল থেকে অসুস্থ ঝর্না। বলেন, খুব অসুস্থ হলেও নাম বাদ যাওয়ার আশঙ্কায় শুনানিতে আসতে হল।  প্রচন্ড ঠান্ডায় অসুস্থ মরিয়মকে দেখা যায় অফিস চত্বরে বসে থাকতে। থরথর করে কাঁপছেন। ঠিকমতো হাঁটতেও পারেন না। কিন্তু উপাই নেই। যদি ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ চলে যায়! সেই ভয়েই আসতে বাধ্য হয়েছেন।

     ষাট পেরনো ছেলেকে নিয়ে কোনও রকমে মালদহ জেলা স্কুলে এসে পৌঁছলেন নবতিপর বৃদ্ধা। 

    অভিযোগ, ফ্যামিলি পেনশনভোগী ওই বৃদ্ধা এসআইআর ফর্মে পিপিও নম্বর না দেওয়ায় তাঁকে ডেকে পাঠানো হয়েছে। 

    মালদহের ইংলিশবাজার শহরের ১১০ নম্বর পার্টের বিভূতিভূষণ হাইস্কুলে ভোট দেন ঝর্না দাস। বয়সের ভারে সোজা হয়ে হাঁটতে পর্যন্ত পারেন না। তাঁর ছেলে খোকন দাসের অভিযোগ, মা সত্তর বছর ভোট দিয়ে আসছেন। পিপিও নম্বর দেওয়া হয়নি বলে শুনানিতে ডাকা হয়েছে। 

    ঝর্নার মেয়ে অঞ্জনা দাস পক্ষাঘাতগ্রস্ত। তাঁকেও এদিন শুনানিতে ডাকা হয়। মায়ের বয়স এবং বোনের শারীরিক সমস্যার কথা জানানোর পরেও শুনানি কেন্দ্রে হাজির হতে বলা হয়েছে বলে অভিযোগ খোকনের। 

    এদিকে ইংলিশবাজার ব্লকের জন্য শহরের মডেল মাদ্রাসা ও জেলা স্কুলে শুনানি হয়। এদিন শুনানি চলাকালীন জেলা স্কুলের ২ নম্বর কাউন্টারে ঢুকে পড়েন জেলা পরিষদের সভাধিপতি লিপিকা বর্মন ঘোষ। এনিয়ে সমালোচনায় সরব হয় বিরোধীরা।  হরিশ্চন্দ্রপুরের পরিযায়ী শ্রমিকদের আবার অন্য সমস্যা। তাঁরা রয়েছেন ভিনরাজ্যে। একদিন পরেই শুনানিতে হাজিরার নোটিশ পেয়ে মাথায় হাত তাঁদের। 

    হরিশ্চন্দ্রপুর ১ ব্লকের হরিশ্চন্দ্রপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের খেজুরবাড়ি ধুমসা ডাঙ্গি প্রাইমারি স্কুল ২৫৯ ও ২৫৪ নং বুথের কুর্শাডাঙ্গিতে মুসাহার সম্প্রদায়ের বসবাস। বেশিরভাগই পরিযায়ী শ্রমিক। গ্রামের  জুলি মিশর, সুমিত্রা মিশরদের মতো অনেকে ভিনরাজ্যে। ফুলো বলেন, দিল্লিতে আছি। নোটিশ বাড়িতে দিয়ে গিয়েছেন বিএলও। হঠাত্ বাড়ি ফিরতে পারব না। জুলির কথায়, ২০ হাজার টাকা অগ্রিম নিয়ে দু’মাসের জন্য গুজরাতে দাদনে এসেছি। মাস শেষ হয়নি। ঠিকাদারকে বিষয়টি জানাব। যেতে দিলে তবেই ফিরতে পারব। ঠিকাদার আব্দুল বারি ও মহম্মদ আলাউদ্দিন বলেন, শুনানির জন্য বাড়ি ফিরতে পারেন। ফের তাঁদের কাজে যেতে হবে। হরিশ্চন্দ্রপুর ১ এর বিডিও সৌমেন মণ্ডল বলেন, পরিবারের কেউ শুনানির তারিখ পিছিয়ে দেওয়ার আবেদন করতে পারেন। আর যাঁরা এসআইআর‌ ফর্ম জমা করেননি, ৬ নং ফর্ম জমা করতে বলা হয়েছে।
  • Link to this news (বর্তমান)