বিধানসভা ভোটের প্রাক্কালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সঙ্গে জীবন সিংহের আলোচনা শুরু, জল্পনা
বর্তমান | ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫
সংবাদদাতা, দিনহাটা ও ধূপগুড়ি: এসআইআর ইস্যুতে বেসুরো অনন্ত মহারাজ! বিধানসভা ভোটের আগে নিষিদ্ধ সংগঠন কামতাপুর লিবারেশন অর্গানাইজেশনের (কেএলও) প্রধান জীবন সিংহই এখন ভরসা বিজেপির! বছর ঘুরলেই বাংলায় বিধানসভা নির্বাচন। মায়ানমারের গোপন ঘাঁটি থেকে ভারতের ‘সেফ হাউসে’ আশ্রয় নেওয়ার প্রায় তিন বছর পর জীবন সিংহের সঙ্গে শান্তি চুক্তির আলোচনা শুরু করল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। জীবন ও তাঁর ন’জন সঙ্গীর সঙ্গে সোমবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের আধিকারিকদের একদফা বৈঠক হয়েছে। জীবন সিংহ ছাড়াও এই দলে রয়েছে আছেন ডিএল কোচ, মালখান সিং সহ কামতাপুর স্টেট ডিমান্ড কাউন্সিলের প্রতিনিধিরাও।
চব্বিশের লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যসভার সাংসদ অনন্ত মহারাজের ভূমিকা ভালোভাবে নেয়নি বিজেপি। কোচবিহারে অমিত শাহের তৎকালীন ডেপুটি নিশীথ প্রামাণিক পরাজিত হতেই অনন্তের ভূমিকা ‘স্ক্যানারে’ নিয়ে আসে পদ্ম শিবির। এই আবর্তেই এসআইআরের শুনানিতে কোচবিহারের ভূমিপুত্র রাজবংশী ও নস্যশেখ সম্প্রদায়ের প্রচুর মানুষ ডাক পেয়েছে। ঘটনায় ক্ষুব্ধ অনন্ত মহারাজ দেশের প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতিকে বাংলাদেশি-পাকিস্তানি বলে আখ্যায়িত করেন। বেসুরো অনন্তকে ঠিক কতটা বাগে আনা যাবে, তা নিয়ে চিন্তায় রয়েছে বিজেপি। ঠিক এই অবহে দিল্লিতে বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা জীবন সিংয়ের সঙ্গে শান্তি চুক্তির আলোচনা শুরু করল কেন্দ্র সরকার। কেএলও সুপ্রিমো জীবন সিংহ, ডিএল কোচ, কেএসডিসি’র সভাপতি তপতী রায় মল্লিক, প্রাক্তন কেএলও জঙ্গি ধনঞ্জয় বর্মন, মালখান সিংহ, মঞ্চলাল সিংহ সহ কেন্দ্রীয় সরকারের অবসরপ্রাপ্ত আধিকারিকরাও রয়েছেন দলে।
পৃথক কামতাপুর রাজ্যের দাবিতে ১৯৯৫ সালের কেএলও প্রতিষ্ঠা করেন জীবন। দীর্ঘদিন জঙ্গলে থেকে সশস্ত্র আন্দোলনের পরে ২০২৩ সালে আত্মসমর্পণ করেন তিনি। অসমের ‘সেফ আউসে’ রয়েছেন তারপর থেকেই। দীর্ঘসময় ধরে কেন্দ্রের আশ্রয় থাকার পরেও আলোচনা এগয়নি কিছুই। বরং মাঝেমধ্যে ভিডিও বার্তা ছড়িয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ে ‘আদ্যশ্রাদ্ধ’ এবং বিজেপি’র ‘প্রশংসা’ করাটা রুটিন বানিয়ে ফেলেছিলেন জীবন সিংহ। হঠাৎই বাংলার বিধানসভা ভোটের আগে শান্তি চুক্তির জন্য কেএলও জঙ্গিদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক ডেকে পাঠিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক বৈঠকে বসায়, রাজনৈতিক মহলে আলোড়ন শুরু হয়েছে। এতদিন ধরে কেন্দ্রের ‘অতিথি’ হয়ে থাকার পর হঠাৎ বিধানসভা ভোটের আগে আলোচনা কেন, তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন।
সম্প্রতি কেন্দ্র সরকারের শান্তি চুক্তি নিয়ে ঢিলেমির প্রতিবাদে আন্দোলনের নেমেছিল জীবন সিংহের অনুগামীরা। উত্তরবঙ্গ ও অসমজুড়ে অনশন করেন তাঁরা। পরবর্তীতে ১৬ ডিসেম্বর অনির্দিষ্টকালের জন্য রেল অবরোধের প্রস্তুতি নেন। তখনই তাঁদের কেন্দ্র সরকারের পক্ষ থেকে শান্তি চুক্তির আলোচনার বিষয়ে বার্তা দেওয়া হয়। এবারে সেই আলোচনার জন্য দিল্লি পৌঁছেছেন তাঁরা। কামতাপুর স্টেট ডিমান্ড কাউন্সিলের সভাপতি তপতী রায় মল্লিক জানিয়েছেন, প্রথম দিনের বৈঠক অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে হয়েছে। এই আলোচনা এখন চলবে।