• কনকনে শীতে কাবু বীরভূমের বাসিন্দারা, রাস্তা-বাজারে ভিড় কম
    বর্তমান | ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, সিউড়ি ও সংবাদদাতা, রামপুরহাট: বর্ষশেষে কনকনে শীত পড়ল বীরভূমে। জেলাজুড়ে শৈত্যপ্রবাহ চলছে। গত শুক্রবার চলতি মরশুমে জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল। তারপর তাপমাত্রা ৮ থেকে ১০ডিগ্রির আশেপাশেই ঘোরাফেরা করছে। আবহাওয়া দপ্তরের রিপোর্ট অনুযায়ী, সোমবার শ্রীনিকেতনে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১০.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে ঝাড়খণ্ড লাগোয়া রামপুরহাট, মুরারই ও নলহাটিতে তাপমাত্রার পারদ আর একটু নীচে ছিল। বইছে উত্তুরে হাওয়া। পাশাপাশি ভোর থেকেই জেলাজুড়ে ঘন কুয়াশা দেখা যাচ্ছে। দৃশ্যমানতা কমে যাওয়ায় রাস্তায় যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। দূরপাল্লার ট্রেনও কিছুটা দেরিতে চলছে। আগামী কয়েকদিনে তাপমাত্রা এমনই থাকবে বলে আবহাওয়া দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে। আর এতেই দোকানগুলিতে রুমহিটার, গিজারের খোঁজে ভিড় জমাচ্ছেন ক্রেতারা। শীতের পোশাকের দোকানগুলিতেও ভিড় বাড়ছে। 

    দিনকয়েক ধরেই জেলায় তাপমাত্রার পারদ নামছে। এদিন তীব্র ঠান্ডা অনুভূত হয়। সকালে অনেকে প্রাতঃভ্রমণে বেরতে পারেননি। মোটরবাইকে কাজে বেরিয়ে সমস্যায় পড়েন অনেকে। প্রায় সারাদিনই তীব্র ঠান্ডা ছিল। সন্ধ্যা হতেই জাঁকিয়ে বসে শীত। সকাল-সন্ধ্যা পাড়ার মোড়ে মোড়ে কাঠ-খড় জ্বালিয়ে আগুন পোহানোর ছবি দেখা যায়। কনকনে ঠান্ডায় হাতমোজার বিক্রি বেড়েছে। বিক্রেতারা জানান, কয়েকদিন আগে পর্যন্ত বাচ্চাদের হাতমোজার চাহিদা ছিল। কিন্তু এদিন থেকে বড়রাও হাতমোজার খোঁজ করছেন। শীতের ঠেলায় লেপ, কম্বল, সোয়েটার, শৌখিন চাদরের চেয়ে মাঙ্কিক্যাপ, মাফলার, জ্যাকেটের মতো পোশাকের বিক্রি বেড়েছে। সবথেকে বেশি বিক্রি হচ্ছে রুমহিটার, জল গরম করার ইমারশন রড ও গিজার। রামপুরহাটের বৈদ্যুতিন সামগ্রীর ব্যবসায়ী গণেশ দত্ত বলেন, প্রতি বছর এইসময় অল্পকিছু রুমহিটার বিক্রি হয়। বিশেষ করে যাঁদের বাড়িতে বৃদ্ধ বা শিশু আছে তাঁরাই ওইসব কিনতেন। কিন্তু এখন রুম হিটারের চাহিদা অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। আরও কয়েকদিন এমন আবহাওয়া থাকবে, তাই নতুন করে রুম হিটার ও ব্লোয়ারের অর্ডার করেছি। পোশাক বিক্রেতারা জানান, উলিকটের পোশাক ও শীতের জ্যাকেটের চাহিদা বেড়েছে। 

    তীব্র ঠান্ডার কারণে সকাল ৯টার আগে শহরের রাস্তায় তেমন ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। কনকনে শীতের কারণে রাত ৮টার মধ্যেই রাস্তাঘাট ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। প্রাতঃভ্রমণকারী অমিত মণ্ডল বলেন, আমি খুব ভোরে উঠি। অন্যদিন সাধারণত ৬টার মধ্যে প্রাতঃভ্রমণ সেরে ফেলি। কিন্তু এই  ঠান্ডায় সাতটার পর হাঁটতে বের হচ্ছি। টোটো চালক সাইফুল আলম বলেন, সকালের দিকে ট্রেনগুলিতে অন্য দিনের তুলনায় কম ভিড় হচ্ছে। যে কারণে আমরা স্টেশন থেকে যত সংখ্যক যাত্রী পাই এখন তা অনেক কমে গিয়েছে। বাজারেও অন্যান্য দিনের তুলনায় কম ভিড় হয়েছে বলে দাবি বিক্রেতাদের। রামপুরহাটে ছ-ফুঁকো এলাকার সবজি বিক্রেতা আইনুল শেখ বলেন, এতই ঠান্ডা পড়েছে যে ৭টার আগে বাজারে ঢুকতে পারছি না। এদিকে পাইকারি মার্কেটে ভোরবেলায় সবজি না কিনলে দাম বাড়তে থাকে। এই ঠান্ডায় সকাল ৯টার আগে বাজারে একদম ভিড় হচ্ছে না। 

    প্রবল ঠান্ডায় জেলেরা জলে নামতে না পারায় বাজারে দেশি মাছের জোগান কমেছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। জেলা কৃষিদপ্তরের এক আধিকারিক বলেন, কনকনে ঠান্ডা এবং রোদ ঝলমলে আকাশ আলু চাষের জন্য অত্যন্ত আশীর্বাদস্বরূপ। এতে ফলন ভালো হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে অত্যধিক ঠান্ডায় বোরো ধানের বীজতলার ক্ষতি হতে পারে। চারার বৃদ্ধি থমকে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
  • Link to this news (বর্তমান)