• শুনানিতে রামকৃষ্ণ মিশনের মহারাজরা, ৫০ বছর ধরে আশ্রমে থাকা সাধুরাও লাইনে!
    বর্তমান | ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, বর্ধমান: শুনানিতে ডাক পেলেন রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রমের মহারাজরা। এদিন গেরুয়া পোশাক পরে লাইনে দাঁড়িয়ে তাঁরা নথি দেখালেন। শুনানি কেন্দ্র থেকে বের হয়ে এসে তাঁদের আক্ষেপ, সাধুদের না ডাকলেই ভালো হত। আমরা কোনও নির্বাচনেই ভোট দিই না। তারপরও কেন ফর্ম দেওয়া হল বা শুনানির জন্য ডাকল, বোঝা গেল না। সাধুরা সবসময় শৃঙ্খলা মেনে চলেন। তাই কেউ নোটিশ অমান্য করেননি। সোমবার বর্ধমানে মহকুমা শাসকের দপ্তরে তাঁদের শুনানির জন্য ডাকা হয়েছিল। এদিন আটজন কেন্দ্রে হাজির ছিলেন।

    শান্তানন্দ মহারাজ বলেন, শুনানির জন্য নোটিশ পেয়েছিলাম। তা অমান্য করিনি। আমাদের কাছে মাধ্যমিক ও অন্যান্য পরীক্ষার অ্যাডমিট কার্ড রয়েছে। এছাড়া, আরও একাধিক নথি রয়েছে। সেসব দেখিয়েছি। ৫০ বছর ধরে বর্ধমানের রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রমে রয়েছি। এভাবে নোটিশ না করলেই ভালো হত। স্বামী অসীমানন্দ এদিন শুনানি কেন্দ্রের বাইরে দাঁড়িয়ে বলেন, আমরা কোনওদিনই নির্দেশ অমান্য করি না। শৃঙ্খলা মেনে চলি। তবে, এভাবে শুনানি কেন্দ্রে ডেকে হয়রান না করলেই পারত। নির্বাচন কমিশন বৈধ ভোটার বাছাইয়ের কাজ করছে। কিন্তু আমরা তো ভোট দিই না। সেটা সবার জানা। এসআইআর থেকে আমাদের বাইরে রাখতে পারত।

    অশোক মহারাজ বলেন, নথি দেখাতে আমাদের অসুবিধা নেই। যেদিন ডেকেছে সেদিনই এসেছি। পুরো প্রক্রিয়া অন্য কোনওভাবে করা যেতে পারত। আমরা কেউই বাইরে থেকে আসিনি। সবার কাছেই বৈধ নথি রয়েছে। সেসব দেখিয়েছি। এরপর কী হবে কে জানে।

    স্থানীয়রা বলেন, শুনানি কেন্দ্রে এসে অনেকেই হয়রান হচ্ছেন। বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদেরও শুনানি কেন্দ্রে ডাকা হয়েছিল। এদিন বর্ধমানে মহকুমা শাসকের দপ্তরে হুইলচেয়ার নিয়ে এসেছিলেন ৮৩ বছরের সন্ধ্যা দাস। অফিসের দোতলায় ওঠার ক্ষমতা তাঁর ছিল না। অবশেষে আধিকারিকরা নীচে নেমে তাঁর কাছে নথি দেখেন। ওই বৃদ্ধা বলেন, এই বয়সে এতটা হয়রান হতে হবে, ভাবতে পারিনি। ভোটার হওয়ার পর থেকে প্রতিটি নির্বাচনে ভোট দিয়ে আসছি। এখন নতুন করে বৈধতার প্রমাণ দিতে হচ্ছে।

    এদিন সোনালি মালি নামে এক প্রসূতিরও ডাক পড়েছিল। চিকিৎসক ১জানুয়ারি প্রসব করানোর দিন দিয়েছেন। তাঁর এক আত্মীয় বলেন, কমিশন কী করতে চাইছে, বোঝা যাচ্ছে না। আমরা তো এখানকারই বাসিন্দা। তারপরও কেন এত হয়রান হতে হবে? এক আধিকারিক বলেন, কমিশনের নির্দেশমতো নোটিশ দেওয়া হয়েছে। ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় যাঁদের নাম নেই, আপাতত তাঁদেরই ডাকা হচ্ছে। রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রমের মহারাজরা এসআইআর ফর্ম নিয়েছিলেন। ‘নন ম্যাপিং’ হওয়ার জন্যই তাঁদের ডাকা হয়েছে। সকলেই নির্বাচন কমিশনের ঠিক করে দেওয়া নথি দেখিয়েছেন। সেক্ষেত্রে কারও তেমন অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।
  • Link to this news (বর্তমান)