• পাঞ্জানিয়া পাহাড় কাটার প্রতিবাদে রাস্তায় সিধো-কানহো বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা
    বর্তমান | ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫
  • সংবাদদাতা, পুরুলিয়া: দক্ষিণবঙ্গের অন্যতম প্রাকৃতিক সম্পদ পুরুলিয়ার পাহাড় ও জঙ্গল আজ অস্তিত্বের সঙ্কটে! সরকারি নির্দেশেই চলছে হুড়া ব্লকের ৩৬০ মিটার উঁচু প্রাচীন পাঞ্জানিয়া পাহাড় কাটার কাজ। প্রকৃতির এই ধ্বংসলীলা রুখতে রবিবার প্ল্যাকার্ড হাতে পথে নামেন সিধো-কানহো-বিরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগের অধ্যাপক, গবেষক, পড়ুয়া ও স্থানীয় বাসিন্দারা। শুধু পাঞ্জানিয়া নয়, তিলাবনী, বেড়ো সহ জেলার একাধিক পাহাড় কেটে গ্রানাইট উত্তোলনের চক্রান্ত চলছে বলে অভিযোগ।

    প্রশাসনিক সূত্রে খবর, মাইনস অ্যান্ড মিনারেল ডেভেলপমেন্ট ট্রেডিং কর্পোরেশনের অনুমতি নিয়ে একটি বেসরকারি সংস্থা ২০১৬ সাল থেকে এখানে গ্রানাইট উত্তোলনের কাজ শুরু করে। তবে সেই কাজ নিয়ম বিরুদ্ধ হওয়ায় গ্রামবাসীদের প্রবল বাধার মুখে পড়ে সংস্থাটি। গ্রামবাসীদের কথায়, এই পাহাড় তাঁদের কাছে শুধু পাথরের স্তূপ নয়, তাঁদের জীবন ও জীবিকার উৎস। পাহাড়ের উপরেই রয়েছে গ্রামদেবতার থান। পাহাড় থেকে গড়িয়ে নামা বৃষ্টির জলেই এলাকার পুকুর ও কুয়ো সজীব থাকে। চাষের জমি জল পায়। পাহাড় কাটা পড়লে এলাকায় তীব্র জলকষ্ট দেখা দেবে। মরুভূমির মতো পরিস্থিতি তৈরি হবে। তাছাড়া জ্বালানি ও ঔষধি গাছ সংগ্রহের জন্য স্থানীয়রা পুরোপুরি এই পাহাড়ের উপর নির্ভরশীল।

    আন্দোলনে শামিল সিধো-কানহো-বিরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বিশ্বজিৎ বেরা বলেন, ‘এই পাহাড়গুলি প্রায় ৫০ থেকে ৬০ কোটি বছরের পুরনো প্রিক্যামব্রিয়ান যুগের সাক্ষী। পৃথিবীর সৃষ্টির আদিপর্বের ইতিহাস জড়িয়ে আছে এই শিলাস্তরে। পাথর বিক্রির সামান্য অর্থের জন্য এই অমূল্য জিও-হেরিটেজ ধ্বংস করা অনুচিত।’ বিশেষজ্ঞদের মতে, পাহাড় কাটার ফলে বাতাসে ধূলিকণা  মিশে গিয়ে এলাকাবাসীর ফুসফুসের মারাত্মক ক্ষতি করবে। অধ্যাপকের দাবি, পাহাড় কেটে পাথর বিক্রির বদলে এই এলাকাকে ‘জিও ট্যুরিজম’ বা পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুললে সরকার অনেক বেশি রাজস্ব পাবে এবং পরিবেশও রক্ষা পাবে।

    হুড়ার বিডিও আরিকুল ইসলাম বলেন, গত শনিবার পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, বিএলএলআরও, ডিএলআরও প্রতিনিধি এবং গ্রামবাসীদের সম্মিলিত একটি সভা হয়েছে। পরবর্তীতে ষোলআনা প্রতিনিধিদের সঙ্গে মিটিং করা হবে। সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে।

    খননকারী সংস্থার ম্যানেজার সোমনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, গ্রামবাসীদের আন্দোলনের কারণে বর্তমানে গ্রানাইট তোলার কাজ খুবই ধীরগতিতে চলছে।  এছাড়াও মেন্টেনেন্স-এর জন্য দিনে খুব কম সময় এই কাজ চলছে। সরকারি নিয়ম মেনেই পাহাড়ের নীচের অংশ থেকে নির্দিষ্ট মাপে পাথর তোলা হচ্ছে। কোনও অনিয়ম হয়নি। -নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)