• পুলিশ, প্রশাসন ও বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ বন্ধ করল ভাঙা মেলা
    বর্তমান | ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫
  • সংবাদদাতা, বোলপুর: আদালতের রায় মেনে ভাঙা মেলা তুলতে তৎপর হল প্রশাসন। সোমবার সকালে নিষেধ অগ্রাহ্য করে কিছু স্টলে জিনিসপত্র বিক্রি হচ্ছে খবর পেয়েই বোলপুরের এসডিপিও রিকি আগারওয়াল, জেলা পরিষদের সভাধিপতি কাজল শেখ ও বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ মাঠে হাজির হন। তাঁরা ব্যবসায়ীদের তাড়াতাড়ি স্টল খালি করার নির্দেশ দেন। কাজল শেখ জানান, শান্তিনিকেতনের ঐতিহ্যবাহী পৌষমেলা কোর্টের নির্দেশ মেনে ছ’ দিন ধরে চলেছে। কোর্টের অর্ডার মেনে ভাঙা মেলা রাখা সম্ভব হয়নি। এদিন সকাল থেকেই ব্যবসায়ীদের জল ও বিদ্যুৎ পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। মেলার বেশিরভাগ ব্যবসায়ী স্টল খালি করে দেন। কিছু ব্যবসায়ী জিনিসপত্র গোছানোর পাশাপাশি টুকটাক বিক্রিও করছিলেন। শালপট্টির শীতবস্ত্রের দোকানগুলিতে এই ছবি দেখা যায়। পুলিশের তৎপরতায় সেইসব স্টলে বিক্রি বন্ধ হয়। বেলা গড়াতেই ব্যবসায়ীরা জিনিসপত্র গুছিয়ে স্টল খালি করে বাড়ি ফিরে যান। স্টলের কাঠামো খোলার কাজও চলতে থাকে সারাদিন ধরে। আগামীকাল থেকে মাঠ পরিষ্কারের কাজ হবে এমনটাই জানা গিয়েছে।  পরিষ্কারের পর বুধবার মাঠ আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়া হবে বলে জানান মেলা কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক অমিত হাজরা। 

    রবিবার রাতেই পুলিশ প্রশাসন ও বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ মাইকিং করে নির্দিষ্ট সময়ে স্টল বন্ধের অনুরোধ জানিয়েছিল। রাত বারোটা বাজতেই মেলা প্রাঙ্গণের সবক’টি গেট বন্ধ করে দেওয়া হয়। সোমবারও পর্যটকদের মেলা প্রাঙ্গণে প্রবেশ বন্ধ করতে প্রতিটি গেটে পুলিশি নজরদারি ছিল। আগে ভাঙা মেলায় সব জিনিসই বিক্রি হয়ে যেত। এখন এইসব জিনিস নিয়ে বাড়ি ফিরতে হবে। আগে মেলা শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও ভাঙা মেলা চলত। এবারে ভাঙা মেলা না থাকায় আক্ষেপ করেছেন ব্যবসায়ী ও পর্যটকরা। লাভপুর থেকে আসা কম্বল ব্যবসায়ী লালু শেখ জানান, এবার মেলায় বেচাকেনা ভালোই হয়েছে। তবে কিছু জিনিস রয়ে গিয়েছে। ভাঙা মেলাটা থাকলে ভালো হতো। 

    উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে পৌষমেলার স্টল উচ্ছেদকে কেন্দ্র করে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছিল। নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরেও স্টলের জায়গা দখল করে রাখার অভিযোগ ওঠে ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে। এবার এমন ঘটনা এড়াতে আগে থেকেই তৈরি ছিল বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ ও জেলা পুলিশ প্রশাসন। শান্তিনিকেতনের ঐতিহ্যবাহী পৌষমেলা এবারে ছিল সম্পূর্ণ অন্যরকম। মেলায় স্টল যেমন বেড়েছে তেমনি বিক্রিবাটাও ভালো হয়েছে বলে জানা যায়। সোমবার মেলা প্রাঙ্গণে আসার রাস্তার দু’ ধারে ফুটপাতের স্টলগুলিতে সকালের দিকে ভিড় দেখা যায়। এইসব দোকানগুলিতে মূলত বিভিন্ন ধরনের খাবার ও হাতের কাজ সামগ্রী বিক্রি হচ্ছিল। 

    অন্যদিকে ছ’ দিনের মেলা শেষ হতেই তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয় বোলপুর শান্তিনিকেতন শহরজুড়ে। এদিন সকাল থেকেই সৃজনী শিল্প গ্রামের রাস্তা অবরুদ্ধ হয়ে যায়। সোনাঝুরির রাস্তায়ও একই ছবি দেখা যায়। শহরের অন্যান্য জায়গাতেও যানজটের কারণে বিপাকে পড়েন বাসিন্দারা। এসডিপিও বোলপুর রিকি আগারওয়াল জানান, মেলায় প্রচুর পুলিশ মোতায়েন ছিল। অন্যান্য জেলা থেকে আসা বাহিনী ফিরে গেলেও বিভিন্ন জায়গায় পুলিশি নজরদারি চলছে। এদিকে পৌষমেলার স্টল বন্টন নিয়ে এক ব্যবসায়ী অভিযোগ তোলেন। তিনি জানান নির্দিষ্ট ম্যাপে কয়েকজন ব্যবসায়ী দোকান বুকিং করেও বসতে পারেননি। বুকিংয়ের টাকা ফেরত দেওয়ার দাবি জানান তিনি। বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত জনসংযোগ আধিকারিক অতিগ ঘোষ জানান, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।
  • Link to this news (বর্তমান)