• এসএসসি ছাড়াই নিয়োগ! শিক্ষকের বিরুদ্ধে তদন্ত, ডিআইয়ের রিপোর্ট তলব, তোলপাড় তমলুক
    বর্তমান | ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, তমলুক: এসএসসি পরীক্ষা ছাড়াই তমলুক ব্লকের খামারচক হাইস্কুলে শিক্ষক নিয়োগ হয়েছিল। ওই ঘটনায় আগেই শুভেন্দু হাটুয়া নামে এক শিক্ষকের চাকরি বাতিল করে দিয়েছে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। স্কুলের আরও এক শিক্ষক অয়নকুমার দাসের বিরুদ্ধেও পর্ষদ বিভাগীয় তদন্ত শুরু করেছে। এজন্য জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক(মাধ্যমিক) পলাশ রায়ের কাছে রিপোর্ট তলব করেছে পর্ষদ। অভিযুক্ত শিক্ষক অয়ন সাসপেনশনে আছেন। তাঁর মাইনে বন্ধ আছে। চাকরি বাতিল হবে কি না, তা নিয়ে বিভাগীয় তদন্ত চলছে। এজন্য ডিআইয়ের রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে।

    পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক(মাধ্যমিক) পলাশ রায় বলেন, সোমবার খামারচক হাইস্কুলে আমার যাওয়ার কথা ছিল। সেখানে অয়নকে ডেকে পাঠানো হয়েছিল। তাঁর বক্তব্য নথিভুক্ত করা হবে। কিন্তু সাসপেনশনে থাকা ওই শিক্ষক মেডিকেল সার্টিফিকেট পাঠিয়ে সোমবার আসতে পারবেন না বলে জানান। তাই এদিন যাওয়া হয়নি।

    তমলুক ব্লকের খামারচক হাইস্কুলে স্কুল সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষা ছাড়াই শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মী নিয়োগ হয়েছে বলে অভিযোগ। রাজ্যজুড়ে এরকম বেশ কয়েকটি জায়গায় নিয়োগ হয়েছিল। প্রতিটি ঘটনায় সিআইডি তদন্ত করে। পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় শুধুমাত্র খামারচক হাইস্কুলে এরকম ঘটনা সামনে আসে। কর্মরত শিক্ষকদের নথি যাচাই চলাকালীন ওই ভুয়ো নিয়োগের ঘটনা সামনে আসে। ২০২৪সালে শুভেন্দু হাটুয়া নামে একজন শিক্ষক গ্রেফতার হন। ২০২৫সালের ১১মার্চ অয়নকুমার দাস নামে ওই স্কুলের আরও একজন শিক্ষক গ্রেফতার হন। ভুয়ো শিক্ষক নিয়োগের ঘটনায় ধরা পড়েন প্রাক্তন জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক(মাধ্যমিক) চাপেশ্বর সর্দার ও স্কুলের প্রধান শিক্ষক অশোককুমার হাটুয়া। এছাড়াও, ওই স্কুলের দু’জন আপার ডিভিশন ক্লার্কও ধরা পড়েন। তাঁদের সাসপেন্ড করে পর্ষদ।

    এসএসসি পরীক্ষা ছাড়া‌ই একজন গ্রুপ-ডি কর্মীকেও ওই স্কুলে নিয়োগ করা হয়েছে বলে অভিযোগ। দীর্ঘ কয়েকমাস তিনি আসছেন না। তাঁর মাইনে বন্ধ করা হয়েছে। একটি স্কুলে এসএসসি ছাড়া এরকম পরপর শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মী নিয়োগ হয়েছে বলে অভিযোগ। গ্রেফতার হওয়া প্রত্যেকে এই মুহূর্তে জামিনে আছেন। শুভেন্দু হাটুয়ার চাকরি বাতিল করে দিয়েছে পর্ষদ। অয়নকুমার দাসকে সাসপেন্ড করা হলেও এখনও চাকরি বাতিল হয়নি। তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় পদক্ষেপ নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তার আগে জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শকের রিপোর্ট চেয়েছে পর্ষদ।

    সিআইডি ওই ঘটনায় চার্জশিট জমা করেছে। দীর্ঘ সময় ধরে স্কুলে পরিচালন কমিটি নেই। জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক(মাধ্যমিক) স্বয়ং প্রশাসক হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন। তাঁকে ‘ম্যানেজ করে’ স্কুলের প্রধান শিক্ষক স্কুল সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষা এড়িয়ে গোপনে নিয়োগ করেছেন বলে অভিযোগ। এক্ষেত্রে বিস্তর লেনদেন হয়েছে বলেও অভিযোগ। ভুয়ো দুই শিক্ষক ৮-১০ বছর চাকরি করেছেন। মাইনে তুলেছেন। ভেরিফিকেশন চলাকালীন তাঁদের নিয়োগে জালিয়াতির খবর সামনে আসে। দু’দফায় জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শকরা এনিয়ে তমলুক থানায় এফআইআর করেন। ২০২৪সালের ফেব্রুয়ারি ও ২০২৫সালের মার্চ মাসে পরপর দুই শিক্ষক গ্রেফতার হন। সেইসঙ্গে নিয়োগ দুর্নীতির মূল অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষকও দু’দফায় গ্রেফতার হন। ওই প্রধান শিক্ষক অবসর নেওয়ার পর পেনশনের সুবিধা থেকেও বঞ্চিত। নিয়োগে এমন বিতর্ক জেলায় অন্য কোনও স্কুলে ঘটেনি।
  • Link to this news (বর্তমান)