• মন্দিরগুলিতে বিগ্রহকে পরানো হচ্ছে শীতবস্ত্র, গর্ভগৃহে চলছে রুম হিটার
    বর্তমান | ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫
  • সংবাদদাতা, নবদ্বীপ: গত কয়েকদিন ধরে জেলাজুড়ে ঠান্ডার দাপট বেড়েছে। শীতের কামড়ে জবুথবু নবদ্বীপও। শহরে সকাল-সন্ধ্যায় অনেককেই রাস্তার পাশে কাঠকুটো জ্বেলে আগুন পোহাতে দেখা যাচ্ছে। তেমনি এই প্রচণ্ড ঠান্ডায় ভগবানও কষ্ট পাচ্ছেন, এমনটাই মনে করছেন আপামর ভক্তকুল। তাই নবদ্বীপের বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের মানুষজন বিগ্রহের গায়ে জড়িয়ে দিচ্ছেন শীতবস্ত্র। নবদ্বীপের বিভিন্ন মন্দিরে আরাধ্য দেবতাকে পরিয়ে দেওয়া হচ্ছে টুপি, সোয়েটার, শাল, মাফলার, দস্তানা, মোজা। রাতে প্রচণ্ড ঠান্ডায় বিগ্রহকে উষ্ণ কম্বলে মুড়ে দেওয়া হচ্ছে। এমনকি, মন্দিরে রুম হিটার চালানো হচ্ছে। শীতের দিনগুলিতে ভক্তের অনুভূতিতে ভগবানের প্রতি এই সেবার নাম ‘আত্মবৎসেবা’।

    নবদ্বীপের শ্রীচৈতন্য জন্মস্থান মন্দির, গৌরাঙ্গ মহাপ্রভুর মন্দির, রাধামদনমোহন মন্দির, বলদেব জিউ মন্দির, ভবতারিণী মন্দির, বিভিন্ন শিবমন্দির, টোলমন্দির সহ সমস্ত মন্দিরে বিগ্রহকে শীতবস্ত্রে মুড়ে দেওয়া হয়েছে। তবে, শুধু পোশাকে নয়, দেবতার মধ্যাহ্নভোগেও লেগেছে শীতের ছোঁয়া। মন্দির কর্তৃপক্ষ শীতকালীন নানা ধরনের নতুন সবজি থেকে পিঠেপুলি, মিষ্টি সমস্ত কিছুই প্রাণের দেবতাকে নিবেদন করছে। অনেক মন্দিরে প্রাতঃরাশ ভোগে থাকছে গরম খিচুড়ি থেকে শুরু করে মটরশুঁটির কচুরি। সঙ্গে বিভিন্ন ভাজা।

    এই প্রচণ্ড ঠান্ডায় নবদ্বীপের ধামেশ্বর গৌরাঙ্গ মহাপ্রভুর শ্রীঅঙ্গে এবং চরণে বালাপোষ দেওয়া হয়। শরীর গরম রাখতে প্রভুর শ্রীঅঙ্গে দেওয়া হয় রাজস্থানের জয়পুর থেকে আনানো বিশেষ আতর। শহরের অন্যতম প্রাচীন ব্রজানন্দ গোস্বামী রোডের রাধামদনমোহন মন্দির। সেখানে মদনমোহন ও রাধারানিকে উলের টুপি, সোয়েটার ও শাল পরানো হয়েছে। নিতাই-গৌরকে পরানো হয়েছে মোটা চাদর, মাথায় টুপি। একইভাবে বলদেব জিউ মন্দিরে বলদেবকে সোয়েটার, শাল, মাফলার, টুপি, মোজা পরানো হয়েছে। রাতে কম্বলে মুড়ে দেওয়া হচ্ছে। একই ছবি দেখা গেল প্রাচীন মায়াপুরের শ্রীচৈতন্য জন্মস্থান মন্দিরেও। সেখানে রয়েছেন চৈতন্য মহাপ্রভুর বাবা জগন্নাথ মিশ্র ও মা শচীদেবী এবং তাঁদের আরাধ্য দেবতা রাজরাজেশ্বর নারায়ণ শিলা, রাধারানি, নিতাই-গৌর, গোপাল, শিব। সব বিগ্রহকে বিভিন্ন শীতবস্ত্র পরানো হয়েছে।

    ধামেশ্বর গৌরাঙ্গ মহাপ্রভু মন্দিরের অন্যতম সেবাইত সুদিন গোস্বামী বলেন, আমরা যেমন প্রচণ্ড শীতে কাঁপছি, ঠিক তেমনি আমাদের গৌরসুন্দরেরও ঠান্ডা লাগছে। আত্মবৎসেবায় এই অনুভব থেকেই বালাপোষ ও কম্বল দিয়ে মহাপ্রভুকে আচ্ছাদিত করে রাখা হয়। শুধু তাই নয়, রাজস্থানের জয়পুর থেকে আতর আনা হয়েছে। গরমে একধরনের আতর পাওয়া যায়, সেটি লাগালে শরীর ঠান্ডা থাকে। আবার ঠান্ডায় প্রভুর শরীর গরম রাখতে অন্য ধরনের বিশেষ আতর দেওয়া হয়। শ্রীশ্রীরাধামদনমোহন মন্দিরের সেবাইত নিত্যগোপাল গোস্বামী বলেন, পৌষমাসে ঠাকুরকে শীতের পোশাক পরানো হয়। শ্রীঅঙ্গে উত্তাপের জন্য সামনে কাঠকয়লার ছোট উনুন রাখা হয়। অভিষেকের জন্য ঈষদুষ্ণ গঙ্গাজল ব্যবহার করা হয়। এই একমাস ভুনোখিচুড়ি ভোগ এবং রাতে লুচিভোগের সঙ্গে গরম পিঠেপুলি নিবেদন করা হয়। নবদ্বীপ গৌড়ীয় বৈষ্ণব সমাজের মহাসচিব কিশোরকৃষ্ণ গোস্বামী বলেন, বৈষ্ণবীয় সেবা হচ্ছে আত্মবৎসেবা। ভগবানের শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা বলে কিছু নেই। কিন্তু আমরা মনে করি, আমাদের মতোই ভগবানেরও ঠান্ডা লাগে। তাই বেশি ঠান্ডা পড়লে বলদেব মন্দিরে গর্ভগৃহে রুম হিটার চালানো হয়। -নিজস্ব চিত্র 
  • Link to this news (বর্তমান)