সংবাদদাতা, বহরমপুর: একদিনে তিন ডিগ্রি পতন পারদের! সপ্তাহের প্রথম কাজের দিনেই মুর্শিদাবাদ জেলায় হাড়হিম করা ঠান্ডা পড়ল। সোমবার তাপমাত্রা ছিল ৮ডিগ্রি সেলসিয়াস। সারাদিনে একবারের জন্যও সূর্যের দেখা মেলেনি। মরশুমের শীতলতম দিন। দুপুরেও চারদিক কুয়াশার চাদরে মোড়া ছিল। তার উপর কনকনে ঠান্ডা হাওয়া হাড় কাঁপিয়ে দিয়েছে। তাই সকাল থেকে বহরমপুর শহরের রাস্তাঘাটে তেমন লোকজনের দেখা মেলেনি। শহরের বিভিন্ন রাস্তার পাশে আগুন জ্বালিয়ে হাত-পা গরম করার ছবি চোখে পড়েছে। সেইসঙ্গে চায়ের দোকানে ধোঁয়া ওঠা কাপে চুমুক দিয়ে শীত নিয়ে চর্চা করলেন কেউ কেউ।
রবিবার তাপমাত্রার পারদ ১১ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে এসেছিল। তাতেই জবুথবু হয়েছিলেন জেলাবাসী। আবহাওয়াবিদরা জানান, সোমবার ভোরে তা ৮ডিগ্রিতে নেমে আসে। ভোরে দৃশ্যমানতা কমে যাওয়ায় ১২নম্বর জাতীয় সড়কের দু’পাশে গাড়ি দাঁড় করিয়ে চালকরা কুয়াশা কাটার অপেক্ষা করেন। ট্রেন ছুটেছে ধীর গতিতে। কুয়াশার চাদর ঠেলে ভাগীরথী নদীতে খেয়া পারাপার চলে। তবে যাত্রীসংখ্যা ছিল খুবই কম। সকাল ১০টা পর্যন্ত দৃশ্যমানতার খুব একটা পরিবর্তন হয়নি। সারাদিন একটানা হাওয়া শীত আরও বাড়িয়ে তুলেছিল। যাঁরা দুপুরে সূর্যের দেখা পাওয়ার আশা করেছিলেন, তাঁদের সেই আশা পূরণ হয়নি। অন্যদিন শীতের দুপুরে ব্যারাক স্কোয়ার ময়দানে মিঠে রোদ পোহাতে দেখা যায় অনেককেই। কিন্তু সেই মাঠ এদিন জনশূন্য ছিল।
শহরের সূর্য সেন মূর্তির কাছে একটি গ্যারাজ এদিন সকাল সকালই খুলেছিল। কিন্তু ঠান্ডার দাপটে বাইক সারানোর কাজ বাদ দিয়ে রাস্তার পাশে আগুন জ্বালিয়ে একদল যুবকের সঙ্গে হাত সেঁকছিলেন মেকানিক হানিফ শেখ। তিনি বলেন, গত দু’বছরে এত ঠান্ডা অনুভব করিনি। আগুনের পাশে থাকলে একটু স্বস্তি মিলছে। ডিআইবি মোড়ে একটি চায়ের দোকানে বেশ কয়েকজন ক্রেতার দেখা মিলল। চায়ের দোকানের আড্ডায় এক যুবক বলেন, আজ শীত জানান দিয়ে গেল। মঙ্গলবারও এমন আবহাওয়া থাকলে কাজকর্ম শিকেয় উঠবে।
বিকেল গড়াতেই ফের কুয়াশার চাদর ঘন হতে শুরু করে। এমনিতেই শীতের দাপটে সকাল থেকে সোয়েটার, টুপি খোলার কথা ভাবতেই পারেননি অনেকে। সন্ধ্যায় তাতেও যেন শীত বাধ মানছিল না। তাড়াতাড়ি খাওয়াদাওয়া করে লেপের আশ্রয় নেন বহু মানুষ। গভীর রাতে তাপমাত্রা কোথায় এসে নামবে, কবে পরিস্থিতির উন্নতি হবে-সেটাই ভাবছিলেন অনেকেই।
কুয়াশার কারণে রাতে গাড়ি চালকদের অসতর্কতা অবলম্বন করতে নির্দেশ দিয়েছে জেলা পুলিশ। ঠান্ডার প্রকোপে মানুষ রাস্তায় না বেরনোয় এদিন বহরমপুর শহরের টোটো চালকদের তেমন ভাড়া হয়নি। টোটো চালক সত্যেন সাহা বলেন, এই কুয়াশার মধ্যে সকাল থেকে টোটো চালিয়ে দুপুর অবধি মাত্র ১০০টাকা ভাড়া পেয়েছি। অন্যদিন ৫০০-৬০০টাকার ভাড়া হয়ে যায়। আরও কয়েকদিন এরকম চললে সংসারে অভাব দেখা দেবে। বিবেকানন্দপল্লির বাসিন্দা পশুপ্রেমী রাজীব শীল বলেন, এই ঠান্ডায় পথকুকুরদের কথা ভেবে খুব খারাপ লাগছে। সারমেয়দের বাচ্চাদের অবস্থা আরও করুণ। পাড়ায় পাড়ায় তাদের জন্য কিছু ব্যবস্থা করা দরকার। • নিজস্ব চিত্র