• কাটোয়ায় কোলে করে নবতিপর ঠাকুমাকে নিয়ে শুনানিতে নাতিরা, কুলটির লাইনে পক্ষাঘাতে আক্রান্ত
    বর্তমান | ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, আসানসোল, সংবাদদাতা, কাটোয়া ও কালনা: এসআইআরের জনশুনানির দ্বিতীয় দিনেও হয়রানির শিকার হতে হল প্রবীণ নাগরিকদের। নোটিশ পেয়ে কাটোয়ায় নব্বই ঊর্ধ্ব অথর্ব বৃদ্ধাকে চ্যাংদোলা করে শুনানি কেন্দ্রে হাজির হলেন নাতিরা। ওই বৃদ্ধার অসুস্থ বয়স্ক মেয়েকেও চাদরে জড়িয়ে আনা হয়। পশ্চিম বর্ধমান জেলাজুড়েও বয়স্ক বৃদ্ধ-বৃদ্ধার শুনানি কেন্দ্রে হয়রানির অভিযোগ ওঠে। কুলটির বিএলএলআরও অফিসে শুনানি কেন্দ্রে হাজির হয়েছিলেন প্যারালাইসিসে আক্রান্ত বৃদ্ধ অনিল বাউরি। ওয়াকার নিয়েই তাঁকে আসতে হয়েছে। কুলটির বেজডি থেকে বহু কষ্ট করে এই শুনানি কেন্দ্রে হাজির হয়েছেন তিনি, তাঁর ও ছেলে। 

    অনিলবাবুর স্ত্রী শিবানী বাউরি বলেন, স্বামী প্যারালাইসিসে আক্রান্ত। ভোটার কার্ডের নাম কেটে গেলে হয়তো সরকারি প্রকল্প বন্ধ হয়ে যাবে। তখন আমাদের সংসার চলবে না। তাই আসতেই হল। 

    কাটোয়া-১ ব্লকের সুদপুর অঞ্চলের রাধাকৃষ্ণপুর গ্রামের বাসিন্দা নবতিপর মুক্তিবালা প্রামাণিক ১৫ বছর ধরে অসুস্থ। মুক্তিবালাদেবীর কোমর ভাঙা রয়েছে। ভোটার কার্ড অনুযায়ী তাঁর বয়স ৯০ বছর হলেও পরিবারের দাবি তিনি শতায়ু। তিনি ও তাঁর মেয়ে ৪৭ নম্বর বুথের বাসিন্দা। তাঁর মেয়ে যশোদা হাজরার বয়স ৬৫ বছর। তাঁর হাত ও পা ভাঙা রয়েছে। দু’জনেই কয়েক বছর ধরে শয্যাশায়ী হয়ে রয়েছেন। পরিবারের অভিযোগ, ২০০২ সালের তালিকায় নাম থাকা সত্ত্বেও তাঁদের শুনানিতে ডাকা হয়েছে। বাধ্য হয়ে চার কিমি দূর থেকে দুই বৃদ্ধাকে শীতে জবুথবু অবস্থায় নিয়ে আসা হয়েছিল ব্লক অফিসে। 

    ওই দুই বৃদ্ধার নাতি পরিতোষ প্রামাণিক বলেন, খুবই হয়রানি হতে হয়েছে। ঠাকুমাকে যেভাবে আনতে হল, তাতে তাঁর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারত। 

    এনিয়ে কাটোয়ার মহকুমা শাসক অনির্বাণ বোস বলেন, আমরা বিষয়টি জানতাম না। জানা থাকলে সমস্যা হতো না। কাটোয়ার তৃণমূল বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, এটা চরম অমানবিক ঘটনা। যদিও মহকুমা শাসক আমাদের কথা দিয়েছেন এরপর থেকে তাঁরা প্রবীণ নাগরিকদের বাড়ি যাবেন। কাটোয়া শহরের বাসিন্দা প্রতিবন্ধী বুবি খাতুনকেও শুনানিতে ডাকা হয়েছিল। তিনি কথা বলতে পারেন না। পাশাপাশি গোলাম রব্বানি নামে মানসিকভাবে অসুস্থ ব্যক্তিকেও শুনানিতে ডাকা হয়েছিল। তাঁদের পরিবারের সদস্যরাও ক্ষোভ প্রকাশ করেন, তবে অন্য ছবিও দেখা গিয়েছে। কাটোয়া মহকুমা শাসক স্বয়ং রাস্তায় এসে টোটোতে বসে থাকা অসুস্থ বৃদ্ধা দীপ্তি বন্দ্যোপাধ্যায়ের শুনানি করেন।  কালনা-১ ও ২ ব্লকেও শুনানিতে আসা মানুষরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। বৃদ্ধ-বৃদ্ধা থেকে শুরু করে প্রতিবন্দীদেরও শুনানির জন্য লাইন দিতে হয়েছে বলে অভিযোগ। মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ ফোনে জেলার এক আধিকারিককে বিষয়টি দেখার জন্য বলেন। স্বপনবাবু বলেন, সাধারণ মানুষ হয়রানির শিকার হচ্ছেন। একজনও বৈধ ভোটার যাতে বাদ না যায় তারজন্য আমরা ভোট রক্ষা শিবির করে পাশে আছি। কুলটির ওই কেন্দ্রেই পুনরি গ্রাম থেকে ৯০ বছরের বৃদ্ধা এসেছেন শুনানি কেন্দ্রে। আতঙ্কে কিছু বলতে চাইলেন না। বিপাকে পড়েছেন আসানসোল দক্ষিণ বিধানসভা এলাকার বার্নপুর শহরের নেপালি পাড়ার বহু মানুষ। ইস্কো কারখানা গড়ে ওঠার সময় থেকে নেপাল থেকে বহু মানুষ নিরাপত্তারক্ষীর কাজ করতে এখানে এসেছিলেন। তারপর থেকে এখানে স্থায়ীভাবে থেকে যান। এঁদের অনেককেই নোটিশ ধরিয়েছে কমিশন।  নবতিপর ঠাকুমা মুক্তিবালা প্রামাণিককে পাঁজাকোলা করে নিয়ে এসআইআরের শুনানিতে নিয়ে যাচ্ছেন নাতি। সোমবার কাটোয়া ১ ব্লকে।  -নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)