নিজস্ব প্রতিনিধি, হাওড়া: শুনানি কেন্দ্রের বাইরে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে অ্যালজাইমারের রোগী, একজন আবার পায়ে প্লাস্টার নিয়েই এসে দাঁড়িয়েছেন কেন্দ্রের বাইরে। নাগরিকত্ব প্রমাণের লাইনে অপেক্ষা প্রায় আড়াই ঘণ্টা। এসআইআরের শুনানি প্রক্রিয়ায় সোমবার এমনই ভোগান্তির ছবি উঠে এসেছে হাওড়া শহরের একাধিক কেন্দ্রে। ডোমজুড়ের একটি ব্লকে প্রায় হাজার ভোটারের নাম খসড়া তালিকায় ‘প্রবাসী’ হিসেবে দেখানোয় তীব্র বিভ্রান্তি ও ক্ষোভ ছড়িয়েছে।
হাওড়া ময়দানে ডিস্ট্রিক্ট লাইব্রেরিতে মধ্য হাওড়া বিধানসভা এলাকার চারটি পার্টের শুনানি চলছে। সেখানে পরিবারের সঙ্গে হাজির কাসুন্দিয়ার বাসিন্দা ৭৬ বছরের জোৎস্না ঘোষ। বয়সজনিত দুর্বলতার পাশাপাশি স্মৃতিভ্রংশের সমস্যায় ভুগছেন তিনি। ওষুধের উপর নির্ভরশীল জ্যোৎস্নাদেবীকে এদিন প্রায় এক ঘণ্টারও বেশি সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। পরিবারের এক সদস্য বলেন, ‘ওনাকে একা বাইরে যেতে দেওয়া নিষেধ। ভিড় দেখলেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। কিন্তু সরকারি নিয়মের গেরোয় এই অসুস্থ মানুষকেও নিয়ে আসতে হয়েছে।’ প্রবীণ ও অসুস্থ ভোটারদের বসার উপযুক্ত ব্যবস্থা না থাকায় তাঁদের সামলাতে হিমশিম খেতে দেখা যায় পুলিশকেও। একই ছবি ধরা পড়ে উত্তর হাওড়ার প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন দপ্তরের শুনানি কেন্দ্রে। বামনগাছির বাসিন্দা ষাটোর্ধ্ব কলাবতী গুপ্তা কিছুদিন আগেই পড়ে গিয়ে পা ভেঙেছেন। সেই অবস্থাতেই স্বামীর সঙ্গে হাজির শুনানি কেন্দ্রে। সেখানে তাঁকে প্রায় আড়াই ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। স্বামী রাজেন্দ্র গুপ্তার অভিযোগ, ‘স্ত্রীর শারীরিক অবস্থা জানানোর পরেও কোনও সহানুভূতি দেখানো হয়নি। তিনি সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠবেন কী করে? কেউ কিছুই শুনছে না।’
হয়রানির অভিযোগ ওঠে ব্রিজ অ্যান্ড রুফ কারখানার শুনানি কেন্দ্রেও। তৃণমূলের হাওড়া জেলা সদরের সভাপতি গৌতম চৌধুরীর দাবি, ‘চূড়ান্ত অব্যবস্থার মধ্যে শুনানি চলছে। অসুস্থ ও বৃদ্ধ ভোটারদের কথা কেউ ভাবছে না।’ এদিকে ডোমজুড়ের সংখ্যালঘু অধ্যুষিত নিবড়ার একটি বুথে ১২৭০ জন ভোটারের মধ্যে ৯৯৯ জনকে খসড়া তালিকায় ‘প্রবাসী’ হিসেবে দেখানো হয়েছে বলে অভিযোগ। বিষয়টি নিয়ে ভোটারদের সঙ্গে বিক্ষোভে শামিল হন তৃণমূল নেতা ডোমজুড়ের বিধায়ক কল্যাণ ঘোষ। তাঁর বক্তব্য, ‘এই বাসিন্দারা কোনওদিন বিদেশে যাননি। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সংখ্যালঘু ভোটারদের প্রবাসী দেখিয়ে রোহিঙ্গা তকমা দেওয়ার চেষ্টা চলছে।’ হাওড়ার জেলাশাসক পি দীপাপ প্রিয়া জানান, বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই সংশ্লিষ্ট ইআরও’র কাছে রিপোর্ট তলব করা হয়েছে।