কেউ শয্যাশায়ী-কেউ হাঁটতে পারেন না তারকেশ্বরে শুনানিতে আতঙ্কিত মুখের ভিড়
বর্তমান | ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫
সংবাদদাতা তারকেশ্বর: তারকেশ্বর বালিগড়ি পঞ্চায়েত এলাকায় থাকেন অশীতিপর বৃদ্ধ-বৃদ্ধা। এই দম্পতির একমাত্র পুত্র কয়েকমাস আগে ক্যান্সারে মারা গিয়েছেন। নাতনি উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়ে সংসার চালাতে টোটো চালাচ্ছেন। সবমিলিয়ে করুণ দশা এই পরিবারটির। তাঁদের সমস্যাদীর্ণ সংসারে এবার নয়া আতঙ্ক হয়ে এসে দাঁড়িয়েছে এসআইআর। ২০০২ সালে ভোট দিয়েছিলেন এই দম্পতি। কিন্তু প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণে তালিকায় নাম আসেনি। ফলে পড়েছেন সংকটে। প্রবল শারীরিক যন্ত্রণা নিয়ে প্রায় কাঁদতে কাঁদতে হাজির হলেন শুনানিতে। তাঁরা কি একা এই আতঙ্কের, এই দুর্ভোগের শিকার? না। বিছানায় শয্যাশায়ী প্রৌঢ়া, বার্ধক্যের কারণে দাঁড়াতে পর্যন্ত পারেন না বৃদ্ধাকেও দেখা গিয়েছে তারকেশ্বর বিডিও অফিসে। ধনেখালিতেও একই ছবি। প্রত্যেকেরই বক্তব্য, ‘এই শেষ বয়সে এরকম ভয়ানক যন্ত্রণার মুখোমুখি হতে হবে তা কখনও ভাবিনি।’ নির্বাচন কমিশনের উপর চূড়ান্ত ক্ষুব্ধ তাঁরা।
তারকেশ্বর বিধানসভার বালিগড়ি বাউনার পাড়ের বাসিন্দা অশীতিপর স্বাধীন ভট্টাচার্য ও তাঁর স্ত্রী মিনতিদেবী। দেশের স্বাধীনতাকে জন্ম নিতে দেখেছেন তাঁরা। সে আনন্দ উদযাপন করেছিলেন। আজ তাঁদেরকেই প্রমাণ দিতে হচ্ছে যে, তাঁরাও ভারতের নাগরিক। মাত্র ন’মাস হল ছেলে চন্দনকে হারিয়েছেন। টোটো চালাচ্ছেন নাতনি কোয়েল। তিনিই টোটোয় উঠিয়ে কোনওক্রমে দাদু-ঠাকুমাকে নিয়ে এসেছেন শুনানি কেন্দ্রে। বৃদ্ধা বলেন, ‘হাঁটাচলা করতে পারি না। আমাদের মত মানুষকে কেন এরকম দুর্দশার মধ্যে পড়তে হল?
একই পরিস্থিতির শিকার তারকেশ্বর মোজপুরের মালতি পণ্ডিত। তিনি শিক্ষাদপ্তরের অবসরপ্রাপ্ত কর্মী। কুড়ি বছর আগে একমাত্র সন্তানকে হারিয়েছেন। পরিবারে পুরুষ সদস্য বলতে কেউ নেই। হাঁটা তো দূরের কথা, দাঁড়িয়ে থাকার ক্ষমতা পর্যন্ত নেই মালতিদেবীর। এক অটোচালক তাঁকে নিয়ে এসেছেন কেন্দ্রে। ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় মালতিদেবীর নাম রয়েছে। কিন্তু তাও ডাক পেয়েছেন। আসতে হয়েছে অপরিচিত লোকের কাঁধে ভর করে। এরকম দুর্ভোগের যেন কোনও শেষ নেই। চার জানুয়ারি নির্বাচন কমিশনের ডাক পেয়েছেন তারকেশ্বর পুরসভার ১০ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা অশীতিপর জয়ারানি ঘোষ। তিনি শয্যাশায়ী। তবুও কেন্দ্রে সশরীরে যাওয়ার ফরমান এসেছে। ‘এই বয়সে এ কেমন অত্যাচার?’ বৃদ্ধার প্রশ্ন নির্বাচন কমিশনকে। তারকেশ্বর বিধানসভার বিধায়ক রামেন্দু সিংহ রায় জানান, সর্বদলীয় বৈঠকে ঠিক হয়েছিল প্রতিদিন ৫০ জনকে ডাকা হবে। আজ তারকেশ্বরে প্রায় ৪০০ জনকে ডেকেছে। বৃদ্ধ- বৃদ্ধাদের জন্য হুইলচেয়ার, বসার ব্যবস্থা পর্যন্ত নেই। কি যে সমস্যায় পড়েছেন বয়স্করা তা না দেখলে বোঝা যাবে না। নির্বাচন কমিশনের উল্লেখিত নথির মধ্যে কোনও নথি না থাকলে পরবর্তীকালে সেই নথি জোগাড় করে শুনানিতে ডাকা হবে এই নিশ্চয়তা দিচ্ছে না নির্বাচন কমিশন। এই ধরনের চূড়ান্ত অব্যবস্থাকে ধিক্কার জানাই। নিজস্ব চিত্র