নিজস্ব প্রতিনিধি, হাওড়া: জীর্ণ লোহার কাঠামোর উপর কোনওক্রমে দাঁড়িয়ে রয়েছে কংক্রিটের গ্যাংওয়ে। তাতে আবার মাঝ বরাবর বড়ো ফাটল। একদিকে, ঝুঁকে পড়েছে পুরো কাঠামো। কোথাও কোথাও খসে পড়েছে কংক্রিটের আস্তরণ। বন্ধ শিবপুর লঞ্চঘাটের এই বেহাল গ্যাংওয়ে ও জেটিতে ঝুঁকি নিয়েই ভিড় জমাচ্ছে নানা বয়সের মানুষ। স্থানীয় বাসিন্দারা বারবার নিষেধ করলেও বিকেল গড়াতে না গড়াতেই কিশোর-কিশোরী, যুবক-যুবতীদের আনাগোনা বাড়ছে সেখানে। সূর্যাস্তে গঙ্গার ছবি তোলা, কিংবা নিছক আড্ডা বা রোমাঞ্চের জন্যই হিড়িক পড়ে বিপজ্জনক গ্যাংওয়েতে ওঠার। যে কোনও দিন দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
হুগলি নদী জলপথ পরিবহণ সমিতির অধীনে শিবপুর লঞ্চঘাট থেকে বাবুঘাট পর্যন্ত লঞ্চ পরিষেবা চালু ছিল। প্রতিদিন কয়েক হাজার যাত্রী এই রুটে যাতায়াত করতেন। ঘাটের তিনটি কাউন্টারেই দিনভর নিত্যযাত্রীদের ভিড় লেগে থাকতো। কিন্তু গত কয়েক বছরে ধরে জেটি সংস্কারে গাফিলতি এবং পুরনো লঞ্চের বেহাল দশার কারণে পরিষেবা প্রায়ই বিঘ্নিত হচ্ছিল। পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে ২০২৪ সালের মার্চ মাসে। আচমকা বানের তোড়ে জেটিতে যাওয়ার রাস্তা, অর্থাৎ গ্যাংওয়ের নীচের লোহার কাঠামো ভেঙে যায়। বিপজ্জনকভাবে একদিকে বেঁকে যায় গ্যাংওয়ে। ক্ষতিগ্রস্ত হয় জেটিও। সেই সময় থেকেই শিবপুর লঞ্চঘাট থেকে ফেরি পরিষেবা পুরোপুরি বন্ধ।
বর্তমানে গ্যাংওয়ের গেটে তালা ঝুললেও বন্ধ গেট টপকে কিংবা পাশের রেলিং বেয়ে গ্যাংওয়েতে ঢুকে পড়ছে কিশোর-যুবকের দল। গরমের দিনে কেউ কেউ সেখান থেকে গঙ্গায় ঝাঁপ দিয়ে সাঁতার কাটছে। স্থানীয়দের আশঙ্কা, গ্যাংওয়ে বা জেটি ভেঙে পড়লে প্রাণহানি পর্যন্ত হতে পারে। তাঁরা বলেন, ‘সবাই তো সাঁতার জানে না। ওদিকে যেতে বারণ করা হলেও কেউ শোনে না। পুলিশেরও নজরদারি নেই।’
চলতি বছরের শুরুতে শিবপুর লঞ্চঘাট থেকে পরিষেবা ফের চালুর পরিকল্পনা নিয়েছিল পরিবহণ দপ্তর। গত মার্চে ক্ষতিগ্রস্ত গ্যাংওয়ে সংস্কারের কাজও শুরু হয়। গঙ্গা থেকে প্রায় ৩০ টন ওজনের ভারী অ্যাঙ্কর তোলার কাজ চললেও জোয়ার-ভাটার সমস্যায় বারবার তাতে বিঘ্ন ঘটে। কিছুদিনের মধ্যেই অজানা কারণে কাজ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। হুগলি নদী জলপথ পরিবহণ সমবায় সমিতির ডিরেক্টর অজয় দে বলেন, ‘লঞ্চঘাটের সম্পূর্ণ সংস্কার না হলে পরিষেবা চালু করা সম্ভব নয়। কবে সংস্কার হবে জানা নেই।’ এদিকে, ঝুঁকি নিয়ে গ্যাংওয়েতে ভিড় বাড়তে থাকায় সমিতিও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। হাওড়া সিটি পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত জেটিঘাটে যাওয়ার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তা সত্ত্বেও ভিড় হচ্ছে কি না, খতিয়ে দেখা হবে।’ নিজস্ব চিত্র