পরিযায়ী শ্রমিকদের স্বার্থে উন্নয়ন পর্ষদের হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর চালু
বর্তমান | ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: এসআইআর পর্বে শুনানি সংক্রান্ত কোনও বিষয়ে সহযোগিতার জন্য পরিযায়ী শ্রমিকদের পাশে দাঁড়ল উন্নয়ন পর্ষদ। চালু হল হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর। এছাড়া আগে থেকেই রয়েছে টোল ফ্রি নম্বর। রাজ্য পরিযায়ী শ্রমিক উন্নয়ন পর্যদের চেয়ারম্যান সামিরুল ইসলাম বলেন, পরিযায়ী শ্রমিককে এসআইআর প্রক্রিয়ায় শুনানির সময় সশরীরে হাজির হতে হবে, এমন কোনও নির্দেশ নির্বাচন কমিশনের তরফে লিখিত আকারে নেই। ফলে পরিযায়ী শ্রমিকদের আসতে হবে না। তাঁরা সমস্যায় পড়লে ফোন এবং হোয়াসটঅ্যাপে আমাদের জানাতে পারেন। হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরটি হল ৭৬০৩০৯১১২২। এছাড়া হেল্পলাইন নম্বরটি হল ১৮০০১০৩০০০৯।
রাজ্যের পোর্টালে ৩০ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিকের নাম, ফোন নম্বর নথিভুক্ত রয়েছে। তাঁদেরেকে এসআইআর প্রক্রিয়ার শুরুতে ইনিউমারেশন ফর্ম জমা দেওয়ার সংক্রান্ত তথ্য এসএমএস করে জানানো হয়েছিল উন্নয়ন পর্যদের তরফে। পরবর্তী সময়ে কয়েক লক্ষ শ্রমিককে ফোনও করা হয়েছিল। দু-একটি সমস্যা ছাড়া বড় কোনও বিষয় পর্যদের নজরে আসেনি। এখন এসআইআর প্রক্রিয়ায় শুনানি পর্ব চলছে। এইসময় কোনও পরিযায়ী শ্রমিককে তাঁর কর্মস্থল ছেড়ে আসতে হবে না, এমনই বার্তা দেওয়া হয়েছে। শুনানির জন্য কোনও পরিযায়ী শ্রমিককে ডাকা হলে, তাঁর কাগজপত্র ও নথি নিয়ে পরিবারের সদস্যরা যাবেন নির্বাচন কমিশনের দপ্তরে।
তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় উল্লেখ করেছেন, পরিযায়ী শ্রমিকরা রাজ্যের বাইরে কোনও জায়গায় কর্মস্থলে রয়েছেন। তাঁদের আসা-যাওয়ার খরচ কমিশন দেবে না। ফলে কেন পরিযায়ী শ্রমিকরা আসবেন?
রাজ্য পরিযায়ী শ্রমিক উন্নয়ন পর্যদের চেয়ারম্যান সামিরুল ইসলাম বলেন, কোনও পরিযায়ী শ্রমিক মুম্বইতে আছেন। আবার কেউ আছেন ওড়িশায়। তাঁদের আসা-যাওয়া মিলিয়ে প্রায় দু’হাজার টাকা খরচ। এটা তো নির্বাচন কমিশন দেবে না। কমিশনের কোনও নির্দেশ আমরা দেখিনি। ফলে কোনও পরিযায়ী শ্রমিক অসুবিধায় পড়লে আমাদের জানাবেন। আমরা আইনি লড়াই করব।
তাৎপর্যপূর্ণ হল, বাংলাভাষী পরিযায়ী শ্রমিকদের উপর লাগাতার আক্রমণ ও অত্যাচারের ঘটনা সামনে আসছে। বিজেপি-শাসিত অসম, উত্তরপ্রদেশ, দিল্লি, ওড়িশা প্রভৃতি রাজ্যে এই ঘটনা প্রায়ই ঘটছে বলে খবর আসছে। এখনও পর্যন্ত ১১৪৩টি গ্রুপ থেকে অভিযোগ এসেছিল পরিযায়ী শ্রমিক উন্নয়ন পর্যদের কাছে। ওই গ্রুপে ৫-১০ জন করে ছিলেন। ঠিক এই প্রেক্ষাপটে বিরোধীদের উদ্দেশে কড়া বার্তা দিয়েছেন সামিরুল ইসলাম। তাঁর বক্তব্য, বাংলা ভাষায় কথা বলা কি অপরাধ? বাংলায় কথা বললে তাঁকে মারধর কেন করবে? পশ্চিমবঙ্গে বিভিন্ন ভাষার পরিযায়ী শ্রমিক আছেন। অন্য রাজ্য থেকে তাঁরা এসেছেন। তাঁদের উপর একটিও অত্যাচারের ঘটনা সামনে আসেনি। তাহলে শুধু বাংলাভাষীদের উপরেই আক্রমণ কেন? কেন্দ্রের উচিত, বাংলাভাষী পরিযায়ী শ্রমিকদের নিরাপত্তার যথাযথ ব্যবস্থা করা।
বিজেপি প্রশ্ন তুলেছে, বাংলার শ্রমিকরা অন্য রাজ্যে কেন কর্মসংস্থানের জন্য যাচ্ছেন? তার মানে, এখানে কাজ নেই। এর উত্তরে সামিরুলের দাবি, একজন মানুষ অন্য রাজ্যে কাজের জন্য যেতে পারবেন না, এই নিয়ম তো কোথাও নেই। অন্য রাজ্য থেকেও এখানে আসছেন কাজ করতে। পরিযায়ী শ্রমিক উন্নয়ন পর্ষদ দাবি করেছে, রাজ্য সরকার সর্বতোভাবে পরিযায়ী শ্রমিকদের পাশে আছে। উন্নয়ন বোর্ড তৈরি করেছে। মৃত্যু ও দুর্ঘটনাজনিত অর্থ সাহায্য করা হচ্ছে। মৃতদের রাজ্যে ফিরিয়ে আনতে সবরকম সহযোগিতা করা হচ্ছে। এখনও পর্যন্ত ৭৬ জন পরিযায়ী শ্রমিককে রাজ্যে ফিরিয়ে আনতে সরকার খরচ করেছে ১৯ লক্ষ টাকা। আর যাঁরা এরাজ্যে ফিরে আসছেন তাঁদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।