মা দুর্গার নামে শপথ, বাংলার প্রত্যেক নাগরিকের অধিকার রক্ষা করব: মমতা
বর্তমান | ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: এসআইআর আতঙ্ক পশ্চিমবঙ্গে প্রাণ কেড়েছে ৫০’এর বেশি মানুষের। ভোটাধিকার রক্ষায় দীর্ঘ লাইনে দাঁড়াতে হচ্ছে বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের। ২০০২-এর এসআইআর তালিকায় নাম থাকা সত্ত্বেও চূড়ান্ত হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে বহু নাগরিককে। প্রজন্মের পর প্রজন্ম এই দেশের মাটিকে আঁকড়ে ধরে থাকার পরও প্রমাণ দিতে হচ্ছে, তাঁরা নাগরিক। এসআইআরের মাধ্যমে ‘বৈধ ভোটারের নাম বাদ দেওয়ার এই গেরুয়া চক্রান্তে’র বিরুদ্ধে সোমবার ফের তোপ দাগলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নিউটাউনে ‘দুর্গা অঙ্গন’-এর শিলান্যাস অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকে মানুষের এই চরম হয়রানির বিরুদ্ধে তাঁর গর্জন—‘মনে রাখবেন ধৈর্য ধরছি, সহ্য করছি, কিন্তু সহ্যেরও একটা লিমিট থাকে। বাংলার মানুষ মাথা নত করে না, প্রত্যেক মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষিত হবে। লড়াই চলছে এবং লড়াই চলবে। মা দুর্গার অঙ্গনে শপথ নিয়ে বলে যাই, মানুষের অধিকার কাউকে কেড়ে নিতে দেব না। ২০২৬ নতুন পথ দেখাবে।’
নিউটাউন বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন ৫৪ মিটার উচ্চতা এবং ২ লক্ষ বর্গফুট এলাকাজুড়ে গড়ে উঠবে ‘দুর্গা অঙ্গন’। শাস্ত্রীয় নিয়ম মেনে থাকবে ১০৮ দেবদেবীর মূর্তি ও ৬৪ শিবমন্দির। মূল মণ্ডপ ছাড়াও সিংহদুয়ার, প্রদক্ষিণ পথ, পবিত্র কুণ্ড, প্রসাদ তৈরির ঘর এবং একটি সাংস্কৃতিক মিউজিয়াম। ১০০৮টি স্তম্ভের এই মন্দিরে একদিনে ১ লক্ষ ১০ হাজার মানুষ আসতে পারবেন। ইতিমধ্যে মূর্তি কেনার টাকা জোগাড় হয়ে গিয়েছে এবং দু’বছরের মধ্যে কাজ শেষ হয়ে যাবে বলেও জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন সব ধর্মের প্রতিনিধিরা। ছিলেন খেলাধুলা, চলচ্চিত্র জগৎ থেকে শুরু করে সমাজের নানা স্তরের মানুষ। তাঁদের সাক্ষী রেখেই এদিন দেবী দুর্গার নিত্যসেবার এই অঙ্গনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন মুখ্যমন্ত্রী। ঐতিহাসিক এই মুহূর্ত সাক্ষী রেখেই ধর্মনিরপেক্ষতার পক্ষে সরব হয়ে ওঠেন তিনি। শুধু তাই নয়, ডবল ইঞ্জিন রাজ্যগুলিতে স্রেফ বাংলা বলার জন্য লাগাতার বাঙালি নিগ্রহের বিরুদ্ধেও তোপ দাগেন তিনি। স্বাধীনতা সংগ্রামে বাঙালিদের আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করিয়ে দেন মমতা। সেইসঙ্গে সরাসরি কোনও শিবিরের নাম না করে মহিষাসুরমর্দিনী মা দুর্গার কাছে ‘অশুভ শক্তির বিনাশে’র প্রার্থনা করেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘মায়ের কাছে প্রার্থনা করি, মনুষ্যত্ব ফিরিয়ে দাও। এই একমাসের মধ্যে ৫০-এর বেশি মানুষ মারা গিয়েছেন বা আত্মহত্যা করেছেন। আর এসব সহ্য হচ্ছে না মা। অশুভ শক্তির বিনাশ করো মা।’