• ১০০ শতাংশ গ্রামেই বিদ্যুৎ? কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি, ক্যাগ রিপোর্টে বেআব্রু মোদি সরকার
    বর্তমান | ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫
  • বাপ্পাদিত্য রায়চৌধুরী, কলকাতা: দেশজুড়ে, বিশেষত গ্রামীণ এলাকার প্রতিটি বাড়িতে সুষ্ঠু বিদ্যুৎ পরিষেবা পৌঁছে দিতে প্রধানমন্ত্রী ‘সহজ বিজলি হর ঘর যোজনা’ বা ‘সৌভাগ্য’ স্কিম এনেছিল কেন্দ্র। পাশাপাশি আনা হয় দীনদয়াল উপাধ্যায় গ্রাম জ্যোতি যোজনাও। ২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার পর নরেন্দ্র মোদি সরকার এই প্রকল্প দু’টি ঘোষণা করে। সরকারের দাবি ছিল, ১০০ শতাংশ গ্রামীণ এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহের যে লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছিল, তা সফল হয়েছে। সত্যিই কি তাই? সম্প্রতি প্রকল্প দু’টি নিয়ে সংসদে রিপোর্ট পেশ করেছে কম্পট্রলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল অব ইন্ডিয়া বা ক্যাগ। সেখানে তারা জানিয়েছে, প্রকল্প দু’টিতে ছত্রে ছত্রে আর্থিক অনিয়ম। ১০০ শতাংশ গ্রামীণ বিদ্যুদয়ন দূরঅস্ত, সংযোগের হার সরকারি দাবির ধারেকাছেও নেই। 

    মনমোহন সিং সরকারের দেশব্যাপী বিদ্যুদয়নের অন্যতম ফ্ল্যাগশিপ প্রকল্প ছিল রাজীব গান্ধী গ্রামীণ বৈদ্যুতিকীকরণ যোজনা। সেই প্রকল্পেরই নাম পালটে দেয় মোদি সরকার। আনা হয় দীনদয়াল উপাধ্যায়ের নামানুসারে। দীনদয়াল নামাঙ্কিত প্রজেক্টের আওতায় মোট ৬০৫টি প্রকল্পকে রাখা হয়। ক্যাগ বলছে, এগুলির মধ্যে ৪৯৪টি প্রকল্পই নিয়ম মেনে হয়নি। কী সেই অনিয়ম? বলা হয়েছে, কোন কোন গ্রামে প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে, সে ব্যাপারে নির্দিষ্ট সময়ে যথাযথ সমীক্ষাই করা হয়নি।

    প্রতিটি রাজ্যে তৈরি হয়েছিল একটি করে কমিটি। প্রকল্প শুরুর আগে তার গুণমান যাচাইয়ের পাশাপাশি কোন সংস্থাকে দিয়ে বিস্তারিত প্রকল্প রিপোর্ট  (ডিপিআর) তৈরি হবে, সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা ছিল ওই কমিটিগুলির। কিন্তু দেখা গিয়েছে, রাজ্যগুলিকে এড়িয়ে ডিপিআর জমা পড়েছে কেন্দ্রের কাছে। সেগুলি নির্বিবাদে গ্রহণও হয়েছে। ক্যাগ বলছে, একাধিক রাজ্যে এই প্রকল্পের আওতায় প্রায় ৫৪২ কোটি টাকা আগেই দিয়ে বসে আছে কেন্দ্র। অথচ বিভিন্ন ক্ষেত্রে টাকা পাওয়ার ৩৬০ দিন পর প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট এজেন্সি নিয়োগ হয়েছে। মোট কথা, সব প্রাথমিক কাজ শেষে অর্থ বরাদ্দ নয়, বরং তার বহু আগেই ১ হাজার ৬০৪ কোটি টাকা দিয়ে বসে আছে কেন্দ্র।

    সৌভাগ্য প্রকল্পের বাস্তব হাল কী? ক্যাগ জানাচ্ছে, ৩ কোটি বাড়িতে এই প্রকল্পের আওতায় বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার কথা ছিল কেন্দ্রের। পরে তারা জানায়, তিন কোটি নয়, ২ কোটি ৬৩ লক্ষ বাড়িতে সেই সংযোগ দেওয়া হবে। ২০১৯ সালের মার্চ মাসের মধ্যে সেই লক্ষমাত্রার ১০০ শতাংশ পূরণ হয়ে গিয়েছে বলে সরকারিভাবে ঘোষণা করে মোদি সরকার। কিন্তু বাস্তবে ১ কোটি ৫২ লক্ষ বাড়িতে সেই সময়ের মধ্যে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয় বলে জানিয়েছে ক্যাগ। অর্থাৎ সরকারের দাবি ও বাস্তবের মধ্যে ফারাক বিস্তর। ক্যাগের হিসেব, ৭টি রাজ্যেই বিদ্যুৎবিহীন বাড়ি ১৯ লক্ষের বেশি।  

    দীনদয়াল নামাঙ্কিত প্রকল্প ও সৌভাগ্য প্রকল্পের মধ্যে যে কোনও একটির মাধ্যমে বিদ্যুৎ সংযোগ পাওয়ার কথা গ্রাহকদের। সমীক্ষায় প্রায় ১৭ হাজার বাড়ির ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, একইসঙ্গে দু’টি প্রকল্পের হাত ধরেই তারা বিদ্যুৎ পেয়েছে। অর্থাৎ, বাস্তবে একবার সংযোগ দিয়ে দু’টি প্রকল্পের টাকা নিয়েছে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার সংস্থা। শুধু সাধারণ গ্রাহকই নন, বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থাগুলির একাংশকেও একই কাজের জন্য দু’টি প্রকল্পের আওতায় দু’বার পেমেন্ট করা হয়েছে। সৌভাগ্য প্রকল্পের খরচের জন্য যেখানে কেন্দ্রীয় সংস্থার হাতে সাড়ে তিনশো কোটি টাকারও বেশি পড়েছিল, তখন তারা বাজেট অনুমোদনের বাইরে গিয়ে চড়া সুদে বাজার থেকে ৫০০ কোটি টাকা ধার করে। দেখা যায়, প্রকল্প শেষে তার মাত্র ৯৫ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। ক্যাগ জানিয়েছে, বাদবাকি টাকা স্রেফ পড়ে আছে। অথচ তার জন্য দিতে হয়েছে চড়া অঙ্কের সুদ। অর্থাৎ স্বচ্ছতার ধ্বজাধারী নরেন্দ্র মোদি সরকারের আর্থিক অনিয়মের ঘটনা বেআব্রু করে ছেড়েছে ক্যাগ।
  • Link to this news (বর্তমান)