কাটা হচ্ছে আম বাগানের পুরোনো গাছ, চলছে প্লটিং করে জমি বিক্রি, শ্যামনগরের কাউগাছি পঞ্চায়েতে রাতারাতি বদল হচ্ছে জমির চরিত্র
বর্তমান | ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, বারাকপুর: শ্যামনগরের কাউগাছি ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের নীলতলা এলাকায় আম বাগানের গাছ কেটে রীতিমতো ম্যাপ টাঙিয়ে প্লটিং করে জমি বিক্রি করা হচ্ছে। অভিযোগ, জমি মাফিয়ারা সক্রিয় হয়ে উঠেছে ওই এলাকায়। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় তীব্র চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে। এমনকি, জমির চরিত্র বদল করা হচ্ছে দেদার। পঞ্চায়েতও ছাড়পত্র দিয়েছে। স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান বলছেন, ‘আমার হাত-পা বাঁধা। জমির চরিত্র বদল করার ক্ষেত্রে বনদপ্তরের অনুমতি রয়েছে। তাই বাধ্য হয়ে আমরা ছাড়পত্র দিয়েছি।’
স্থানীয় সূত্রে খবর, নীলতলা এলাকায় গত কয়েকদিন ধরে নির্বিচারে কেটে ফেলা হচ্ছে বহু পুরোনো আম গাছ। সেই দৃশ্য দেখে এলাকার মানুষ রীতিমতো স্তম্ভিত। কারণ প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনও আপত্তি আসেনি। সংশ্লিষ্ট গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান সমীর চক্রবর্তীর দাবি, অভিযোগ পেয়ে তাঁরা একবার কাজ বন্ধ করে দিয়েছিলেন। কিন্তু এখন জমির চরিত্র বদল করে বাস্তু করে দেওয়া হয়েছে। যাঁরা গাছ কাটছেন, তাঁদের কাছে এখন বনদপ্তরের অনুমতি আছে। যাঁরা ওই জমি প্লটিং করে বিক্রি করছেন, তাঁদের একজন মৈনাক বিশ্বাস। তাঁর দাবি, সব কাগজপত্র ঠিক আছে। এই বাগানগুলি জঙ্গলে পরিপূর্ণ হয়ে গিয়েছিল। এলাকায় সাপের উপদ্রব বেড়েছিল। তাই কয়েকটা গাছ কেটে জমি পরিষ্কার করা হচ্ছে। বনদপ্তর তাঁদের ১১টি আম গাছ, তিনটি নারকেল গাছ ও একটি জাম গাছ কাটার অনুমতি দিয়েছে। কিন্তু এই জমি যেভাবে প্লট করে বিক্রির বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে, তা নিয়ে মুখে কুলুপ মৈনাক বিশ্বাসদের।
স্থানীয় বাসিন্দাদের কথায়, ‘একটা সময় কাউগাছি এলাকার হিমসাগর আমের খ্যাতি এতটাই ছিল যে এখানকার আম রাষ্ট্রপতি পুরস্কার পেয়েছিল। এলাকায় অসংখ্য আমবাগান ছিল। আমের পাশাপাশি জাম, কাঁঠাল ও অন্যান্য গাছ ছিল। বহু গাছ শতাব্দীপ্রাচীন। কিন্তু আজ প্রায় সব শেষ হতে বসেছে। বনদপ্তরের এক কর্তা বলেন, ‘বাস্তু জমিতে গাছ কাটার অনুমতি দিতে বাধা নেই। গাছ কাটলে আবার গাছ লাগানোর মুচলেকা দিতে হয়। সেই সঙ্গে কিছু টাকা জমা করতে হয়। এক্ষেত্রে তা হয়েছিল কি না, দেখা হচ্ছে।’
বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছেন বারাকপুরের প্রাক্তন সাংসদ অর্জুন সিং। তাঁর দাবি, ‘তৃণমূল কংগ্রেসের মদতে জমি মাফিয়ারা এলাকায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। তাঁদের প্রভাব এতটাই যে রাতারাতি জমির চরিত্র বদলে দেওয়া হচ্ছে।’ আদালত খুললেই তিনি কাউগাছি ১ পঞ্চায়েতে আমবাগানের গাছ কাটা নিয়ে মামলা দায়ের করবেন বলে জানিয়েছেন। জগদ্দলের তৃণমূল বিধায়ক সোমনাথ শ্যাম বলেন, ‘আমার বিধানসভা অনেক বড়। বিষয়টি আমার জানা নেই। ভূমিসংস্কার দপ্তর এবং বনদপ্তরের থেকে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করছি। বেআইনি কিছু হয়ে থাকলে পদক্ষেপ করা হবে।’ নিজস্ব চিত্র