ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধনের (এসআইআর) শুনানি-পর্বে হয়রানি নিয়ে চাপানউতোর তুঙ্গে। এরই মধ্যে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে শুনানিতে ডাক পাওয়া তিন জনের মৃত্যুর জন্য এসআইআর-আতঙ্ককে দায়ী করেছে পরিবার। বিষয়টিকে সামনে রেখে নির্বাচন কমিশন ও বিজেপিকে নিশানা অব্যাহত রেখেছে তৃণমূল কংগ্রেস। বিহারের এসআইআর-পর্বের উদাহরণ দিয়ে তৃণমূলকে পাল্টা বিঁধেছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য।
হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে রবিবার রাতে হাওড়ার আমতার ব্রাহ্মণগ্রামের শেখ জামাত আলি (৬৫) নামে এক জনের মৃত্যু হয়েছে। পরিজনেরা জানিয়েছেন, আগামী বুধবার শুনানিতে ডাক পাওয়ায় আতঙ্কে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন জামাত। যদিও সরকারি তরফে বিষয়টি নিয়ে কোনও খবর নেই বলে জানিয়েছেন বাগনান ১-এর বিডিও মানসকুমার গিরি।
পুরুলিয়ার পাড়া ব্লকে এ দিন চৌতালা গ্রামের বৃদ্ধ দুর্জন মাঝি (৮২) নামে এক জনের ট্রেনে কাটা পড়া দেহ উদ্ধার হয়েছে। তাঁর শুনানিও ছিল এ দিন। এসআইআর-আতঙ্ককে দায়ী করে প্রশাসনে অভিযোগও করেছেন বৃদ্ধের ছেলে কানাই। তাঁর বক্তব্য, “বাবার নাম ২০০২-এর ভোটার তালিকায় ছিল। গণনা-পত্রও পূরণ করেছিলেন। তার পরেও শুনানির ডাক আসার জন্য চিন্তায় ছিলেন।” পরিবারের সঙ্গে এ দিন দেখা করে পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। প্রশাসন সূত্রে দাবি, দুর্জনের নাম ২০০২-এর তালিকায় থাকলেও অনলাইন তালিকায় নাম মেলেনি। শুনানি-আতঙ্কে মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে নদিয়াতেও। ২০০২-এর তালিকায় নাম থাকা সত্ত্বেও শুনানিতে ডাক পেয়েছিলেন কল্যাণীর কাঁচরাপাড়া পঞ্চায়েতের চর যদুবাটি গ্রামের জহরলাল মাহাতো (৭২)। সেই মতো, অসুস্থ অবস্থাতেই তাঁকে শনিবার শুনানিতে নিয়ে যাওয়া হয়। জহরলালের ছেলে চমকলাল জানিয়েছেন, আতঙ্কে এ দিন সকালে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে তাঁর বাবার। কল্যাণীর বিডিও খন্দকার আল মাহমুদ বলেছেন, “অনেকের ক্ষেত্রেই ২০০২-এর তালিকায় নাম থাকা সত্ত্বেও কোনও কারণে ম্যাপিং হয়নি। তাই তাঁদের নোটিস দেওয়া হয়েছে।”
পরপর এই মৃত্যুকে ঘিরে অব্যাহত রয়েছে রাজনৈতিক তরজা। তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের তোপ, “কমিশনকে প্রতিটি মৃত্যুর দায় নিতে হবে। বিজেপির সুবিধা করে দিতে কমিশন যে ত্রাসের পরিস্থিতি তৈরি করেছে, ধারাবাহিক মৃত্যু তারই পরিণতি।” এসআইআর-প্রক্রিয়া যে ভাবে চলছে, তা নিয়ে ফের সরব হয়েছে সিপিএম, কংগ্রেসও। দু’দলের নেতৃত্বেরই অভিযোগ, কমিশন যথাযথ প্রস্তুতি ছাড়া তাড়াহুড়ো করে এসআইআর করতে নেমেছে। এক দিকে বিজেপি এবং অন্য দিকে তৃণমূল নেতাদের লাগাতার হুঙ্কার মানুষকে আরও আতঙ্কিত করে তুলছে। প্রাণ যাচ্ছে নিরীহ নাগরিকের।
যদিও বিজেপির রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্যের বক্তব্য, “বিহারে এসআইআর-এর সময়ে লোক মারা গেলেন না কেন? আমাদের রাজ্যের মানুষ কি অপুষ্টিতে ভোগেন? সাপের ছোবলে, প্রেমে ব্যর্থ হয়ে কেউ আত্মহত্যা করলেও তৃণমূল বলছে, কমিশন দায়ী!’’ তাঁর পাল্টা দাবি, ‘‘তৃণমূলের চাপে কেউ কেউ আত্মহত্যা করেছেন।”