জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: এসআইআর-এর শুনানিতে 'হেনস্থা', অসুস্থ কবি জয় গোস্বামীকে তলব ঘিরে তুঙ্গে বিতর্ক।
রাজ্যে এসআইআর (SIR in Bengal) বা বিশেষ ভোটার তালিকা সংশোধন প্রক্রিয়ার শুনানিতে এবার প্রখ্যাত কবি জয় গোস্বামীর (Poet Joy Goswami) নাম জড়ানোয় তীব্র বিতর্ক ও অসন্তোষ দানা বেঁধেছে বাঙলা সাহিত্যপ্রেমী মানুষের মনে। এমনিতেই (SIR hearing in Bengal) শুনানি নিয়ে এমনিই বিতর্ক ও বিরোধের অন্ত নেই। এসআইআর (SIR) প্রক্রিয়ার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়—হিয়ারিং বা শুনানি। কিন্তু এই পর্ব ঘিরেই এখন সাধারণ মানুষের ক্ষোভ তুঙ্গে। বিশেষ করে বয়স্ক ও অসুস্থ নাগরিকদের ক্ষেত্রে এই প্রক্রিয়া 'শারীরিক ও মানসিক হেনস্থা'র রূপ নিচ্ছে বলে অভিযোগ। কোথাও BLO-কে বুথ থেকে বের করে দেওয়া, কোথাও নব্বইয়ের বয়স্ককে হিয়ারিঙে ডাকা হয়েছে। বাংলার এই হাড়কাঁপানো ঠান্ডায় হিয়ারিঙ যেন মানসিক অত্যাচারে সামিল। আর এর মধ্যেই দীর্ঘদিনের অসুস্থ, সদ্য হাসপাতাল থেকে মুক্ত, শয্যাশায়ী কবি জয় গোস্বামীকে ডাকা হয়েছে হিয়ারিঙে। সেই বিতর্কের আগুনে ঘি ঢালল বিশিষ্ট কবি জয় গোস্বামীর পরিবারকে (Author Joy Goswami is called for SIR heraing) দেওয়া শুনানির নোটিস। খসড়া তালিকায় নাম থাকা সত্ত্বেও অসুস্থ কবিকে সশরীরে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেওয়ায় হতভম্ব তাঁর পরিবার ও গুণমুগ্ধরা। অসুস্থ শরীরে তাঁকে সশরীরে শুনানিতে ডাকার ঘটনায় নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা এবং প্রশাসনিক সমন্বয় নিয়ে উঠছে বড় প্রশ্ন।
ঘটনার সূত্রপাত
জয় গোস্বামী, তাঁর স্ত্রী কাবেরী গোস্বামী এবং কন্যা দেবত্রী—তিনজনেই নিয়ম মেনে এনুমারেশন ফর্ম জমা দিয়েছিলেন। খসড়া তালিকায় নাম ওঠায় তাঁরা নিশ্চিন্ত ছিল। কিন্তু সোমবার আচমকাই ফোনে জানানো হয়, আগামী ২ জানুয়ারি যাদবপুরে শুনানির জন্য জয় ও তাঁর কন্যাকে উপস্থিত থাকতে হবে। উল্লেখ্য, কবি দীর্ঘকাল রাসবিহারীতে ভোট দিলেও বর্তমানে তাঁরা সল্টলেকের বাসিন্দা, তবে ভোটার হিসেবে নথিভুক্ত যাদবপুর কেন্দ্রে। গত নভেম্বর মাসেই তিনটি বড় অস্ত্রোপচারের পর হাসপাতাল থেকে ফিরেছেন বাড়িতে। চিকিৎসকদের কড়া নির্দেশ—সংক্রমণের ভয়ে আপাতত এক মাস সম্পূর্ণ নিভৃতে থাকতে হবে তাঁকে। কিন্তু এই শারীরিক সংকটের মাঝেই তাঁর দরজায় কড়া নাড়ল প্রশাসনিক বিড়ম্বনা।
অসুস্থ কবির সংকট
গত নভেম্বর মাসেই গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন কবি। তাঁর শরীরে তিনটি বড় অস্ত্রোপচার হয়েছে। বর্তমানে বাড়িতে থাকলেও তিনি কড়া বিধিনিষেধের মধ্যে আছেন। কবির স্ত্রী কাবেরী গোস্বামী জানান: 'জয়ের তিনটে অপারেশন হয়েছে। সংক্রমণের ভয়ে ওঁর সামনের ঘরেই বসা নিষেধ। এই অবস্থায় ওঁর পক্ষে গাড়িতে করে অত দূর যাওয়া অসম্ভব। বিএলও-কে সে কথা জানালেও কোনও সদুত্তর মেলেনি।'
নথি ও পরিচয়ের লড়াই
কাবেরীদেবী আরও জানান, ২০০৮ সাল থেকেই তাঁরা নিয়মিত ভোট দিয়ে আসছেন। এমনকি প্রয়াত আত্মীয়দের নথি জমা দেওয়ার পরেও কমিশন কেন সন্তুষ্ট হতে পারল না, তা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন তিনি। কবির কন্যা দেবত্রীর কণ্ঠেও ঝরে পড়েছে আক্ষেপ। তাঁর প্রশ্ন, 'এত বছর এখানে থাকার পর, এত কাজ করার পর এখন আবার প্রমাণপত্র দিতে হবে? এই হেনস্থার মানে কী?'
প্রশাসনিক জটিলতা ও রাজনৈতিক প্রশ্ন
বিএলও-র পক্ষ থেকে এই তলব আসার পর কাবেরী গোস্বামী প্রশ্ন তুলেছেন শাসক ও বিরোধী রাজনৈতিক শিবিরের সমন্বয় নিয়ে। তাঁর প্রশ্ন, 'জয় গোস্বামীর মতো একজন মানুষকে যদি এই পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়, তাহলে সাধারণ মানুষের অবস্থা কী হচ্ছে?'
চিকিৎসকদের নিষেধাজ্ঞা
কবির কন্যা বুকুন (দেবত্রী) সোশ্যাল মিডিয়ায় জানিয়েছিলেন, গত দুই সপ্তাহ তাঁদের পরিবারের ওপর দিয়ে 'রোলার-কোস্টার' গিয়েছে। চিকিৎসকদের কঠোর নির্দেশ, আগামী এক মাস কবি যেন সম্পূর্ণ বিশ্রামে থাকেন এবং কারও সঙ্গে যোগাযোগ না করেন। এই অবস্থায় প্রশাসনিক এই ডাক কবির স্বাস্থ্যকে ঝুঁকির মুখে ফেলে দিচ্ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
এসআইআর প্রক্রিয়ার মূল লক্ষ্য নির্ভুল ভোটার তালিকা তৈরি করা হলেও, জয় গোস্বামীর মতো প্রবীণ ও অসুস্থ মানুষের ক্ষেত্রে সশরীরে উপস্থিতির দাবি ঘিরে প্রশাসনের সংবেদনশীলতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। এখন দেখার, এই প্রতিবাদের পর নির্বাচন কমিশন বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কবির পরিবারের জন্য কোনও বিকল্প ব্যবস্থার পথে হাঁটে কি না।
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন)