মৌমিতা চক্রবর্তী: আগামী বছর রাজ্যে বিধানসভা ভোট। কিন্তু ভোটগ্রহণ কবে, কলকাতায় এসে তার একটা আগাম ইঙ্গিত দিয়ে দিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। মঙ্গলবার দুপুরে এক সাংবাদিক সম্মেলনে অমিত শাহ বলেন, আজকের দিনে নেতাজি পোর্ট ব্লেয়ারে প্রথমবার স্বাধীন ভারতের পতাকা তুলেছিলেন। ওই ঘটনার এত বছর পর যখন আমরা পেছনে ফিরে দেখি তখন আজ থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত খুবই গুরুত্বপূর্ণ সময়। এপ্রিলে পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা ভোট হতে চলেছে। ভয়, দুর্ণীতি, কুশাসনকে পেছনে ফেলে এক মজবুত সরকার গঠনের ইঙ্গিত বাংলার মানুষ দিচ্ছেন। তৃণমূল কংগ্রেসের ১৫ বছরের শাসনামলে ভয়, ভ্রষ্টাচার ও কুশাসন, বিশেষ করে অনুপ্রবেশকারীদের নিয়ে বাংলার মানুষ চিন্তিত ও আশঙ্কিত। ভারতীয় জনতা পার্টির কর্মকর্তাদের আমি আশ্বাস দিতে চাই যে এখানেও গরিব কল্যাণের সরকার গঠন করা হবে।
বিজেপির সবচেয়ে বড় ইস্যু হল অনুপ্রবেশ। কলকাতায় এসে অমিত শাহ স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, বাংলায় অনুপ্রবেশকারীদের সরিয়ে দেওয়া হবে। এমন ব্যবস্থা করা হবে যে মানুষ তো দূরের কথা পাখিও সীমান্ত পার করে প্রবেশ করতে পারবে না। শুধুমাত্র অনুপ্রবেশকারী রোখাই নয়, রাজ্য থেকে অনুপ্রবেশকারীদের খুঁজে বের করে ফেরত পাঠানো হবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে বাংলায় বিকাশ থমকে আছে। আর এখানে সিন্ডিকেট চলছে। ভয় আর ভ্রষ্টাচার বাংলায় বাসা বেঁধে আছে। ১৫ই এপ্রিল ২০২৬ এর পর বিজেপির সরকার এলে বাংলায় পুনর্জাগরণ হবে বাংলার সংস্কৃতি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বঙ্কিমবাবু , শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের স্বপ্নের বাংলা তৈরি করবে বিজেপি। ২০১৪ এর ভোটে ১৭% ভোট ২ টি আসন পায় বিজেপি । বিধানসভায় ৩ আসন ছিল আমাদের । ২০১৯ সালে ৪১% ভোট ও ১৮ টি আসন পায় বিজেপি। ২০২১ এ ৩৮% ভোট পেয়েছিল বিজেপি এই বাংলায় ৭৭ টি আসন পায়। ৩৪ বছর ধরে রাজত্ব করা সিপিআইএম শুণ্য হয়েছে । ২৬ এ আমাদের সরকার হবেই ।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যাকে বিঁধে অমিত শাহ বলেন, এমন রাজ্য সরকার আছে যে অনুপ্রবেশকারীদের নিজেদের রাজ্যে ঠাঁই দিচ্ছে । অনুপ্রবেশকারী আটকানোর জন্য সরকার কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। CAA এর বিরোধিতা করেছে এই রাজ্য । বিএসএফ এর ভূমিকায় প্রশ্ন তুলেছে রাজ্য। বাংলাদেশ ও রাজ্যের সীমানায় জমি দেয়নি কোন সরকার এটা প্রশ্ন করতে চাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে। আপনার সরকার জায়গা দেয়নি। কেন অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে আপনার প্রশাসন কোন পদক্ষেপ নেয়নি, উত্তর দেবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়? কেন পাঞ্জাব, অসম, কাশ্মীর এর বর্ডার থেকে অনুপ্রবেশ হয় না? আপনার জন্য এই অনুপ্রবেশ হয়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের ভোট ব্যাংক বাঁচাতে এই অনুপ্রবেশ বন্ধ করেননি। অনুপ্রবেশ বাংলার ডেমোগ্রাফিক পরিবর্তন করেছে।
রাজ্যের দুর্নীতি নিয়ে প্রশ্ন তুলে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, এসএসসি, মনরেগা আবাস যোজনা, রেশন দুর্নীতি করছে এই সরকার। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কি উত্তর দিতে পারবেন যে আপনার মন্ত্রীর বাড়ি থেকে ২৭ কোটি টাকা উদ্ধার হয় । পার্থ চট্টোপাধ্যায়, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, অনুব্রত মণ্ডল, জীবনকৃষ্ণ সাহা, চন্দ্রনাথ সিনহা, কুন্তল ঘোষ, কুণাল ঘোষ, পরেশ পাল জেলে যায়। আর আপনি বলেন ভ্রষ্টচার হয়নি! মহিলাদের সুরক্ষা প্রশ্নের মুখে । মহিলারা ৭ টা এর পর বাড়ি থেকে বেরোতে পারবে না এটা দিন দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এটা কি মুঘল আমল! আর জি কর মেডিকেল কলেজ, দুর্গাপুর কলেজ, সাউথ কলকাতা কলেজ, সন্দেশখালির মতো ঘটনা হয়েছে এরাজ্যে।
রাজ্যের আর্থিক পরিস্থিতি নিয়ে অমিত শাহ বলেন, বাংলার মানুষ এখন ৭৩ টাকা ইনকাম করে। দেশের মানুষ ১০০ টাকা ইনকাম করে। জিডিপি এর হাল খারাপ হয়েছে । এই সরকার এর কারণে। ইন্ডাস্ট্রি নষ্ট হচ্ছে বাংলায়। আয়ুষ্মান ভারত এখনো লাগু করতে দেয়নি বাংলায়। যার বদলে স্বাস্থ্যসাথী চালু করেছে । যদি বাংলার মানুষ ভারতের কোনো জায়গায় যায়, সেখানে অসুস্থ হয় তাহলে কি স্বাস্থসাথী কাজ করবে? উত্তর হল, করবে না। বাংলার মানুষ কি দোষ করেছে? এখনও পর্যন্ত ৩০০ এর বেশি কর্মী সমর্থক খুন হয়েছে বিজেপির । গ্রামে বিজেপির কর্মী সমর্থকরা ঢুকতে পারে না তৃণমূল করে না তাই । বাংলার মানুষ ভেবে নিয়েছে এবার বিজেপিকে তারা আনবে।
মুখ্যমন্ত্রীকে বিঁধে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আরও বলেন, বন্দে ভারত ট্রেন উদ্বোধন করতে এরাজ্যে আসেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আসেন না মঞ্চে। সিন্ডিকেট, তোলাবাজি চলছে । মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারে শুধু ভাইপোর অধিকার আছে কামানোর। বাংলার বিকাশের গতি আটকে দিয়েছে এই সরকার। বাংলার শিল্পকে রুখে দিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস সরকার। ৭০০০ এর বেশি কোম্পানি বাংলা ছেড়ে চলে গিয়েছে। বাংলা এমন জায়গায় পৌঁছে গেছে যেখানে অনুপ্রবেশকারী আটকানোর চেষ্টা না হলে এখন কোনোভাবেই বাংলার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা যাবে না । এই সংকট শুধু বাংলার না দেশের । আপনার সকলের কাছে আমার হাতজোড় করে আবেদন অনেক বছর কংগ্রেস সিপিআইএম তৃণমূলকে সুযোগ দিয়েছেন। বিজেপির রেকর্ড হলো যেখানে বিজেপির সরকার হয়েছে সেখানে বিকাশ হয়েছে । গোটা দেশ মোদীর নেতৃত্বে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে । বাংলার মানুষের কাছে নিবেদন বাংলায় বিজেপির সরকার আনুন এখানে আমরা সোনার বাংলা করব । এটা বিজেপিই করতে পারে।