১০০ দিনের কাজের প্রাপ্য বকেয়া কবে পাবে বাংলা! স্ট্যান্ডিং কমিটিকে বলতে পারল না মন্ত্রক
প্রতিদিন | ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫
বিশেষ সংবাদদাতা, নয়াদিল্লি: একশো দিনের কাজ প্রকল্পে (মনরেগা) বাংলার বকেয়া টাকা কবে দেওয়া হবে! কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের কাছে জানতে চাইল সংসদীয় কমিটি। এ বিষয়ে মন্ত্রকের আধিকারিকরা স্পষ্ট জবাব এড়িয়ে গিয়ে এটুকুই জানালেন, রাজ্যের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে, খুব শীঘ্রই সমাধান সূত্রে মিলবে।
মহাত্মার নাম বদল করে রাম নামে প্রকল্প করার পরে সংসদীয় স্থায়ী কমিটির প্রথম বৈঠক বসেছিল সোমবার। সেখানে সরকার আগামী ছয় মাসে নতুন জি রাম জি আইন বাস্তবায়নের রোডম্যাপের কথা বললেও, বিরোধীরা একে ‘গ্রামীণ কর্মসংস্থানের উপর পরিকল্পিত আঘাত’ বলে তীব্র সমালোচনা করেছেন বলেই জানা গিয়েছে। সূত্রের খবর, বৈঠকে একাধিক বিরোধী সাংসদ অভিযোগ করেছেন, এখনও লক্ষ লক্ষ শ্রমিকের মনরেগার মজুরি বকেয়া রয়েছে, অথচ তার নিষ্পত্তি না করেই সরকার নতুন আইনের প্রচারে ব্যস্ত। সেই সময়েই কমিটির চেয়ারম্যান তথা কংগ্রেস সাংসদ সপ্তগিরি উল্কা বৈঠকে উপস্থিত কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন দপ্তরের আধিকারিকদের কাছ থেকে জানতে চান, মনরেগায় বাংলার যে টাকা বকেয়া রয়েছে তা কবে দেওয়া হবে? তাতে আধিকারিকদের পক্ষ থেকে জবাব এড়িয়ে বলা হয়, বাংলার রাজ্য সরকারের সঙ্গে এ বিষয়ে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে, আশা করছি তাড়াতাড়িই সব কিছু মিটে যাবে।
সূত্রের খবর, বৈঠকে বিরোধী সাংসদরা সরাসরি প্রশ্ন তোলেন, মনরেগার মতো অধিকারভিত্তিক আইন তুলে দিয়ে সরকার কি গ্রামীণ দরিদ্রদের কাজের নিশ্চয়তা দুর্বল করতে চাইছে? বিশেষ করে মজুরি বকেয়া, কাজের অভাব এবং প্রশাসনিক অনিয়মের পুরনো অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে তাঁরা আশঙ্কা প্রকাশ করেন, নতুন আইনে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে। কয়েকজন বিরোধী সাংসদ অভিযোগ করেন, মনরেগা শুধু একটি প্রকল্প নয়, এটি গ্রামীণ মানুষের অধিকার। নাম বদল ও কাঠামোগত পরিবর্তনের আড়ালে এই অধিকারকে খর্ব করা হচ্ছে। সূত্র মারফত আরও জানা গিয়েছে, বৈঠকে বাজেট বরাদ্দ নিয়েও চাপানউতোর চলেছে। কেন্দ্র দায় ঝেড়ে রাজ্যগুলির উপর বোঝা চাপাতে চাইছে বলে সরব হয়েছেন বিরোধী সাংসদরা। কেন্দ্রীয় সরকারের বর্তমান আর্থিক অবস্থায় রাজ্যগুলিকে কতটা আর্থিক দায় বহন করতে হবে সেই প্রশ্নও উঠেছে। তবে, সেই প্রশ্নের কোনও সদুত্তর সরকারপক্ষের আধিকারিকরা দিতে পারেননি বলেই জানা গিয়েছে।
সূত্রের খবর, বৈঠকের অন্দরে এক বিরোধী সাংসদ আশঙ্কাপ্রকাশ করেন, মনরেগা দুর্বল হলে গ্রামে কাজ কমবে, শহরমুখী পরিযায়ী বাড়বে। এর দায় কেন্দ্র সরকারকেই নিতে হবে। তাতে মন্ত্রকের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, পাল্টা নতুন আইন আরও দক্ষ এবং তাতে কর্মসংস্থানের পরিধি আরও বাড়বে। সূত্রের খবর, মন্ত্রকের প্রতিনিধিরা কমিটিকে জানিয়েছেন, নতুন ভিবি-জি রাম জি আইনের আওতায় বছরে ১২৫ দিনের কাজের নিশ্চয়তা দেওয়া হবে এবং এতে গ্রামীণ অর্থনীতি আরও চাঙ্গা হবে। তবে বিরোধীদের দাবি, এই আশ্বাস কাগজে-কলমে যতই আকর্ষণীয় হোক, বাস্তবে তার জন্য যে অতিরিক্ত বাজেট ও প্রশাসনিক সক্ষমতা দরকার, সে বিষয়ে সরকার এখনও স্পষ্ট নয়।
কমিটি সূত্রের খবর, মনরেগার রূপান্তর নিয়ে আগামী কয়েকটি বৈঠকেও চুলচেরা বিশ্লেষণ করা হবে এবং আগামী বছরে সংসদের বাজেট অধিবেশনে এ বিষয়ে কমিটির সুপারিশ-সহ একটি রিপোর্টও পেশ করা হবে। কমিটি এ বিষয়ে কী কী সুপারিশ করবে এবং সেই সুপারিশ সরকার কতটা মানবে সেদিকেই এখন নজর রাজনৈতিক মহলের।