এই সময়: বয়স্ক ও অসুস্থদের শুনানিতে ডাকা নিয়ে সোমবারই রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের কাছে আপত্তি জানিয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেস। তার পরে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল নির্বাচন কমিশন জানিয়ে দিয়েছিল, ৮৫ ঊর্ধ্বদের শুনানিতে হাজিরা দিতে হবে না। যাঁদের শুনানির নোটিস দেওয়া হয়ে গিয়েছে, বিএলও–রা তাঁদের ফোন করে এ বিষয়ে জানিয়ে দেবেন। হাজিরা থেকে ছাড় দেওয়া হয়েছিল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন, সন্তানসম্ভবা এবং বিশেষ ভাবে সক্ষমদেরও। কিন্তু এই বিজ্ঞপ্তির পরেও শুনানি ঘিরে বয়স্কদের হয়রানি চলছে বলে অভিযোগ উঠল।
নিজের গ্রাম তো বটেই, এলাকার সবথেকে বয়জ্যেষ্ঠ, ১০২ বছরের গান্ধারী জানা। পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল ব্লকের খাসবাড় গ্রামের বাসিন্দাকে গত ২৩ ডিসেম্বর বাড়িতে গিয়ে নোটিস ধরিয়ে মঙ্গলবারের শুনানিতে হাজির হতে বলেছিলেন বিএলও। কিন্তু অভিযোগ, কমিশনের নতুন বিজ্ঞপ্তির কথা তাঁকে বা তাঁর বাড়ির কাউকে জানানো হয়নি। বৃদ্ধার বড় ছেলে নবকুমার বলেন, ‘মা জানিয়ে দিয়েছিলেন এই বয়সে তিনি কোথাও যাবেন না। আমরাও বিএলও–কে সে কথা জানাই। মাকে অত দূরের ব্লক অফিসে নিয়ে যাওয়া সম্ভব ছিল না।’ বিষয়টি নিয়ে হইচই শুরু হওয়ায় মঙ্গলবার বিএলও জানিয়ে দেন, বৃদ্ধাকে শুনানিতে যেতে হবে না। ২০০২–এর তালিকায় গান্ধারীর নাম থাকলেও কেন ম্যাপিংয়ে সমস্যা হলো, তার জবাব অবশ্য েকউ দেননি।
বীরভূমের বোলপুর-শান্তিনিকেতন ব্লক অফিসে নাকে রাইলস টিউব লাগিয়ে শুনানিতে হাজির হলেন মার্চেন্ট নেভির অবসরপ্রাপ্ত কর্মী, শান্তিনিকেতনের বাসিন্দা ৬৫ বছরের সজল বাগ। শুনানির অপেক্ষায় বসা সজল বলেন, ‘আমার দুর্ভাগ্য, আমাকে প্রমাণ করতে হচ্ছে যে, আমি ভারতীয়।’ নদিয়ার কৃষ্ণনগরের বাসিন্দা ৭৫ বছরের রোকেয়া বেগমকে ওয়াকার নিয়ে হাঁটতে হয়। দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে পারেন না। মঙ্গলবার তাঁর সঙ্গে শুনানিতে এসেছিলেন স্বামী, কৃষ্ণনগর সরকারি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম। তাঁরও ভরসা লাঠি। দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে পারবেন না বলে দুটো চেয়ার ভাড়া করেছিলেন দু’জনে। সব নথি জমা দেওয়ার পরেও তাঁদের শুনানিতে ডাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন বৃদ্ধ দম্পতি।
শুনানি কেন্দ্রে বয়স্ক ও অসুস্থদের জন্য পৃথক ব্যবস্থার দাবি তুলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ রায়। মঙ্গলবার দু’টি শুনানি কেন্দ্রে অসুস্থদের দেখে মন্ত্রী বলেন, ‘অসুস্থরা দোতলায় উঠবেন কী করে? তাঁদের জন্য কেন পৃথক ব্যবস্থা করা হবে না?’
বর্ধমান শহরের পুলিশ লাইনে অসুস্থ শরীরে শুনানিতে হাজির হতে হলো ৮৪ বছরের সুমিতা মুখোপাধ্যায়কে। শহরের মেহেদিবাগান এলাকার বাসিন্দা রিতু রজককে কোলে করে নিয়ে আসেন স্বামী অমরনাথ রজক। রিতু বিশেষ ভাবে সক্ষম। কেন এই হয়রানি, এই প্রশ্ন তুলে প্রতিবাদ জানান বর্ধমান দক্ষিণের বিধায়ক খোকন দাস। দুর্গাপুর গভর্নমেন্ট কলেজে শুনানিতে এসে অসুস্থ হন এক বৃদ্ধা। হাসপাতালে ভর্তি করে বাইপ্যাপ দিতে হবে বলে শুনানি কেন্দ্র থেকে দ্রুত তাঁকে নিয়ে বেরিয়ে যান পরিবারের লোকেরা। কোমরের ব্যাথায় শয্যাশায়ী বৃদ্ধ ৬৫ বছরের বৃদ্ধ সুনীল বারুইকে বারাসত থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরের শুনানি সেন্টারে অ্যাম্বুল্যান্স ভাড়া করে যেতে হয়। তাঁর পরিবারের লোকেরাও তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।