• ‘সস্তা’ অশোধিত তেলে ১ লক্ষ কোটির মুনাফা! পেট্রোল-ডিজেলে সুরাহা নেই জনতার
    বর্তমান | ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫
  • সমৃদ্ধ দত্ত, নয়াদিল্লি: জ্বালানি অর্থনীতির রীতি হল, আন্তর্জাতিক স্তরে অশোধিত তেলের দাম বাড়লে ভারতের বাজারে তার সঙ্গে পাল্লা দেবে পেট্রোল-ডিজেল। আবার অপরিশোধিত তেলের দাম কমে গেলে, সেই সুবিধা পাবে আম আদমি। অর্থাৎ পেট্রোপণ্যের দাম কমবে। অতীতে এরকমই দেখা গিয়েছে সব সরকারের শাসনকালে। কিন্তু মোদি সরকারের আমলে তেল কোম্পানিগুলির (পড়ুন রাজকোষ) মুনাফা উপচে পড়লেও সাধারণ মানুষ তার সুরাহা পাচ্ছে না। আন্তর্জাতিক বাজারে অশোধিত তেলের দাম সর্বনিম্ন হয়েছে। ভারত রাশিয়া থেকে সস্তায় তেল আমদানি করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবের তেলও পাল্লা দিয়ে সস্তা হয়েছে। তার যাবতীয় মুনাফা কে লুটেছে? ভারত সরকারের তেল উৎপাদন সংস্থাগুলি। ক্রিসিলসহ একঝাঁক সমীক্ষক সংস্থার পূর্বাভাস, চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষেই ১ লক্ষ কোটি টাকা মুনাফার পাহাড় ছুঁতে চলেছে তারা। অথচ, দেশের মানুষ এই এক বছর ধরে পেট্রোল-ডিজেল কিনে চলেছে বেশি দামেই।

    সস্তায় কিনে দেশের বাজারে চড়া দামে বিক্রি—এটাই এখন প্রবণতা তেল কোম্পানিগুলির।হিসেব বলছে, গত অর্থবর্ষে ভারত এই সময়সীমায় তেল আমদানি করেছিল ১৫ কোটি ৯০ লক্ষ টন। চলতি আর্থিক বছরে সেটাই দাঁড়িয়েছে ১৬ কোটি ৩৪ লক্ষ টনে। অর্থাৎ, তেল আমদানি বেড়েছে। কিন্তু গত আর্থিক বছরের তুলনায় তেল আমদানির খরচ চলতি বছরের প্রথম ১০ মাসে কমেছে ১২ শতাংশ। ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে অশোধিত তেল আমদানির জন্য ভারতের তেল সংস্থাগুলির ১০ মাসে ব্যয় হয়েছিল ৯ হাজার ১০০ কোটি ডলার। চলতি আর্থিক বছরে সেই খরচ ৮ হাজার কোটি ডলারে এসে নেমেছে। পেট্রোলিয়াম প্ল্যানিং অ্যান্ড অ্যানালিসিস সেলের এই পরিসংখ্যানের পাশাপাশি জানা যাচ্ছে, মুনাফাও ঠিক একই কারণে বিপুল হারে বেড়ে চলেছে। সমীক্ষক সংস্থাদের পূর্বাভাস, তেল সংস্থাগুলির অপারেটিং মুনাফা ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে। ব্যারেল পিছু ১৫ থেকে ১৮ ডলার মুনাফা করছে তেল সংস্থা। ফলে গত আর্থিক বছরে প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকার মতো মুনাফা পৌঁছে যেতে চলেছে প্রায় ১ লক্ষ কোটি টাকায়। অন্তত প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় ত্রৈমাসিকে বিভিন্ন তেল উৎপাদন সংস্থাগুলির নিট মুনাফার গতিপ্রকৃতি সেই ইঙ্গিতই দিচ্ছে। গত বছর যে অশোধিত তেল আন্তর্জাতিক বাজার থেকে কিনতে হয়েছে ব্যারেল পিছু ৮০ ডলারে, সেটাই কমতে কমতে বর্তমানে ৬৫ থেকে ৬৭ ডলারে নেমে এসেছে। ডিসেম্বর মাসে বিগত তিন বছরের মধ্যে সবথেকে কমে গিয়েছে অশোধিত তেলের দাম। সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, বিহার নির্বাচনের প্রাক্কালে পেট্রোল-ডিজেলের দাম কমানো হবে। কিন্তু অজানা কারণে সেই সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়নি। দাম একই রেখে দেওয়া হয়েছে। আর তার ফলশ্রুতি কী? প্রতিদিন এখন দেশীয় বাজারে পেট্রোল-ডিজেল বিক্রি করে গড়ে লিটার পিছু সরকারি তেল সংস্থার মুনাফা হচ্ছে ৮ থেকে ১০ টাকা! মনে রাখতে হবে, এর বাইরে তেলের দামের মধ্যে রয়েছে কিন্তু শুল্কও। সেটাও সরকারেরই লাভ। তেল বাণিজ্যে গৌরী সেন তাহলে কে? আম জনতা!  
  • Link to this news (বর্তমান)