• এবার দুই-তৃতীয়াংশ ফের স্বপ্ন ফেরি শাহের
    বর্তমান | ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্বকে ২০০ আসন জয়ের টার্গেট দিয়েছিলেন অমিত শাহ। বাস্তবে তা এসে ঠেকেছিল ৭৭’এ। পাঁচ বছর পর ২০২৬’এর ভোটে দুই-তৃতীয়াংশ আসন জিতে এপ্রিলেই পশ্চিমবঙ্গে সরকার গঠনের স্বপ্ন ফেরি করলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। মঙ্গলবার সল্টলেকে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে এই দাবি করেন অমিত শাহ। গতবারের মতো নির্দিষ্ট আসন সংখ্যা বেঁধে দেননি শাহ। অতীত থেকে ‘শিক্ষা নিয়ে’ এবার শতাংশের ভুলভুলাইয়ায় নিজেকে আটকে রাখলেন প্রাক্তন সর্বভারতীয় সভাপতি। একইসঙ্গে তৃণমূলের দুর্নীতি-অপশাসন-কাটমানির মতো ইস্যুগুলি জনমানসে দাগ কাটছে না—সেই বোধোদয় হয়েছে কেন্দ্রের এই বিজেপি নেতার। পাশাপাশি, ডবল ইঞ্জিন সরকারের উন্নয়ন-যজ্ঞের সাতকাহনও এদিন বিশেষ শোনাননি তিনি। বরং গুজরাতি ‘মোটা ভাই’ স্পষ্ট করে দিয়েছেন, বিধানসভা ভোটে গেরুয়া শিবিরের মূল অস্ত্র হতে চলেছে অনুপ্রবেশ ইস্যুই।

    অনুপ্রবেশ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সরাসরি আক্রমণ করেছেন শাহ। তাঁর অভিযোগ, ‘সাতটা চিঠি মমতাজিকে লিখেছি। গত ছ’বছরে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব তিনবার এসে এখানকার মুখ্যসচিবের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তাও ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে বেড়া দেওয়ার জন্য রাজ্য জমি দিচ্ছে না।’ জোড়াফুল সুপ্রিমোর উদ্দেশে শাহের তির, ‘আপনার প্রশ্রয়েই এখানে অনুপ্রবেশ হচ্ছে। বাংলার জনবিন্যাস বদলে যাচ্ছে।’ সমীকরণ স্পষ্ট, বঙ্গীয় অনুপ্রবেশকে জাতীয় পর্যায়ে নিয়ে গিয়ে ভোটের বাজারে অন্যতম ‘মুদ্দা’ করার কৌশল নিয়েছে দিল্লি। তার প্রতিধ্বনিই শোনা গিয়েছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যে। এদিন অমিত শাহ বলেন, ‘বাংলার সীমান্ত দিয়ে যে অনুপ্রবেশ হচ্ছে, তা শুধু বাংলার বিষয় নয়। পুরো দেশের নিরাপত্তা সংক্রান্ত প্রশ্ন। বাংলায় এমন মজবুত সরকার গড়ুন, যাঁরা অনুপ্রবেশ পুরোপুরি রুখবে। বিজেপি এখানে ক্ষমতায় এলে বেছে বেছে অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের তাড়াবে। সীমান্ত দিয়ে ছোট পাখিও গলতে দেব না।’

    এই মুহূর্তে বঙ্গ রাজনীতিতে সবচেয়ে বড় বিতর্কিত ও চর্চিত বিষয়, এসআইআর। খসড়া তালিকা প্রকাশের পর মতুয়াদের নাম বাদ পড়া নিয়ে চরম অস্বস্তিতে রয়েছে বিজেপি। তাই মতুয়াদের পাশে থাকার বার্তা দিতেই অমিত শাহের নির্দেশে এদিন সকাল সকাল সেক্টর ফাইভের হোটেলে পৌঁছে যান মতুয়া সংঘাধিপতি তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর। সাংবাদিক সম্মেলনে অমিত শাহের সাথে বসার সুযোগ পান বনগাঁর এই এমপি। মতুয়াদের উদ্দেশে শাহের আশ্বাসবাণী, ‘ভয় পাওয়ার কারণ নেই। যে শরণার্থীরা পশ্চিমবঙ্গে এসেছেন, তাঁরা ভারতীয় নাগরিক। এটা বিজেপির প্রতিশ্রুতি। তাঁদের কেউ ক্ষতি করতে পারবে না।’ যদিও তাতে চিঁড়ে কতখানি ভিজবে, তা নিয়ে সংশয়ে বঙ্গ বিজেপি নেতারাই। সূত্রের দাবি, ভোটার তালিকায় নাম না থাকা নিত্যদিনের অভিযোগের বহর সইতে না পেরে গত সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি দিয়েছেন গাইঘাটার বিজেপি বিধায়ক তথা ঠাকুরবাড়ির আর এক সংঘাধিপতি সুব্রত ঠাকুর। উপরন্তু, মমতা বন্দ্যেপাধ্যায়ের গুচ্ছ জনমুখী আর্থ-সামাজিক প্রকল্পে রাজ্যবাসী যে উপকৃত, তা আড়ালে স্বীকারও করেন বিজেপি নেতারা। তাই লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, কন্যাশ্রীর মতো প্রকল্পের পালটা কিছু দিতে পারছে না গেরুয়া শিবির। জনমানসে গুঞ্জন, বিজেপি সরকার এলে এইসব প্রকল্প বন্ধ হয়ে যাবে। তা কানে গিয়েছে স্বয়ং অমিত শাহের। তাই এদিন সেই বিভ্রান্তি কাটাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাফ বলেন, ‘এসব নিয়ে অপপ্রচার চলছে। বর্তমানে চলা সব সরকারি প্রকল্প বিজেপি সরকার এলেও জারি থাকবে।’ 
  • Link to this news (বর্তমান)