সুব্রত ধর, শিলিগুড়ি: বাবা রামকৃষ্ণ দেব। মা সারদা। ইনিউমারেশন ফর্মে এমন তথ্য দিয়ে বেকায়দায় এক সন্ন্যাসী। তাঁর নাম স্বামী রাঘবানন্দ পুরি। এজন্য মঙ্গলবার শিলিগুড়িতে নির্বাচন কমিশনের শুনানিতে হাজিরা দিতে হল তাঁকে। সেনা জওয়ান, অবসরপ্রাপ্ত প্রিসাইডিং অফিসারের পর সন্ন্যাসীর সঙ্গে এমন ঘটনায় সরব তৃণমূল কংগ্রেস। তারা কমিশন ও গেরুয়া শিবিরকে এক পঙতিতে বসিয়ে কামান দেগেছে। যদিও বিজেপির দাবি, এর সঙ্গে তাদের কোনও সম্পর্ক নেই। ওই সন্ন্যাসীর নাম ভোটার তালিকায় থাকবে কি না সেটা কমিশন দেখছে। উভয়পক্ষের এমন বক্তব্য ঘিরে স্থানীয় রাজনীতিতে শুরু হয়েছে জোর বিতর্ক।
দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে শহরের প্রধাননগরে বাঘাযতীন কলোনিতে রামকৃষ্ণ বেদান্ত আশ্রমে থাকেন ওই সন্ন্যাসী। সংশ্লিষ্ট এলাকার বুথ নম্বর ২৭। এটি শিলিগুড়ি বিধানসভা কেন্দ্রের অধীনে। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই সন্ন্যাসীর সচিত্র এপিক কার্ড নম্বর এক্সইকিউ ১৬৬২৭৬৬। ভোটার তালিকায় তাঁর ক্রমিক নম্বর ৩১৪। ইনিউমারেশন ফর্মে বাবা হিসেবে রামকৃষ্ণ দেব এবং মাতা হিসেবে সারদামণিদেবীকে উল্লেখ করেন। এজন্যই এসআইআরের শুনানিতে ওই সন্ন্যাসীকে তলব করা হয়।
এদিন দুপুরে তিনি এক শিষ্যকে নিয়ে মহকুমা শাসকের অফিসে আসেন। সঙ্গে প্যানকার্ড, আধারকার্ড, পাসপোর্ট প্রভৃতি নথি নিয়ে পৌঁছন। সমস্ত নথিতেই তাঁর পিতা হিসেবে রামকৃষ্ণদেব ও মাতা হিসেবে সারদামণিদেবীর নাম উল্লেখ রয়েছে। শুনানির পর ওই সন্ন্যাসী বলেন, কমিশনের কাছে সমস্ত নথি দাখিল করেছি। এখন তারা ভোটার তালিকায় নাম রাখলে রাখবে। তাঁর সঙ্গী তথা রামকৃষ্ণ মিশনের দীক্ষিত তৃণমূল কংগ্রেস নেতা বেদব্রত দত্ত বলেন, সংসার ত্যাগের পর বিরজা হোম করে সন্ন্যাস গ্রহণ করেন উনি। এজন্য নিজের অন্ত্যোষ্টি ক্রিয়া করেছেন তিনি। এরপর স্বামী রাঘবানন্দ পুরি নাম গ্রহণ করে রামকৃষ্ণদেবকে পিতা ও সারদামণিদেবীকে মাতা হিসেবে মানছেন। ২০০২ সাল থেকে তিনি এখানে আছেন। এখানে চারবার ভোট দিয়েছেন। তাঁকে শুনানিতে ডেকে হয়রানি করেছে কমিশন। এটা মানা যায় না।
সংশ্লিষ্ট বুথের বিএলও মণিশা গোস্বামী বলেন, ওই সন্ন্যাসী ইনিউমারেশন ফর্মে ২০০২ সালের তথ্য উল্লেখ করেননি। এজন্য তাঁর নাম ম্যাপহীন অবস্থায় ছিল। তবে ১৯৮১ সালে জন্ম। কমিশনের নির্ধারিত ১৩টি নথির মধ্যে একটি তিনি দেখিয়েছেন। তাঁর সমস্যা মিটবে বলেই আশা করছি।
সেনাবাহিনীর জওয়ান, অবসরপ্রাপ্ত প্রিসাইডিং অফিসারের পর সন্ন্যাসীকে শুনানিতে ডাকায় সরব হয়েছেন তৃণমূল। তারা বিজেপি শাসিত কেন্দ্রীয় সরকার ও নির্বাচন কমিশনের কড়া সমালোচনা করেছে। তৃণমূল নেতা বেদব্রত বলেন, বাংলার মণীষী, বিপ্লবী, দেশের জাতীয় গান বন্দেমাতরম, সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে অপমান করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। এখন বিজেপির হাতের ‘কাঠ পুতুল’ আমাদের রামকৃষ্ণদেব ও সারদা মা’কে চেনে না। কাজেই সন্ন্যাসীকে শুনানিতে ডেকে অপমান করেছেন। এজন্য ওদের ধিক্কার জানাই। এর থেকেই স্পষ্ট মুখে ধর্ম, সনাতনি শব্দ আওড়ালেও গেরুয়া পার্টি কার্যত হিন্দু সন্ন্যাসীদের বিরুদ্ধে।
যদিও তৃণমূলের বক্তব্য মানতে নারাজ পদ্ম শিবির। মাটিগাড়া-নকশালবাড়ির বিজেপি বিধায়ক আনন্দময় বর্মন বলেন, নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বিজেপির সম্পর্ক নেই। বিদায় ঘণ্টা বেজে যাওয়ায় তৃণমূল সর্বত্র বিজেপি ভূত দেখছে। আইন অনুসারেই সন্ন্যাসীকে শুনানিতে ডেকেছে কমিশন। এনিয়ে আপত্তির কিছু নেই। আর সন্ন্যাসী, আধ্যাত্মিকদের নাম ভোটার তালিকায় না থাকলেও চলে। • সন্ন্যাসীর ইনিউমারেশন ফর্ম ও শুনানির নোটিশ। - নিজস্ব চিত্র।