• ‘পুতুল’ আর নেই, স্মৃতি হাতড়াচ্ছেন জন্ম-শহর জলপাইগুড়ির বাসিন্দারা
    বর্তমান | ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫
  • ব্রতীন দাস, জলপাইগুড়ি: বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার জন্ম জলপাইগুড়িতে। পুরভবনের কাছে শহরের নয়াবস্তির বাড়িতে শৈশবের কয়েকটি বছর কেটেছিল তাঁর। দুধে-আলতা গায়ের রং। খালেদার ডাকনাম ছিল পুতুল। স্থানীয় প্রবীণ ব্যক্তিদের দাবি, জলপাইগুড়ি শহরের স্কুলেই শুরু হয়েছিল খালেদার প্রাথমিকের পাঠ। দেশভাগের পর খালেদার বাবা ইসকান্দার মিয়াঁ, জনৈক অমরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর সঙ্গে সম্পত্তি বিনিময় করে চলে যান দিনাজপুরে (বর্তমানে বাংলাদেশ)। 

    বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর প্রয়াণে শোকের ছায়া জলপাইগুড়ির নয়াবস্তিতে। একসময় যেটি খালেদাদের বাগানবাড়ি ছিল, বেশ কয়েকবার হাতবদল হয়ে এখন সেটি গোপ পরিবারের বাসস্থান। পাশেই চক্রবর্তী পরিবারের বংশধরদের বাস। তাদের বাড়িটি যেখানে, সেখানেই ছিল পুতুল ওরফে খালেদা জিয়াদের বসতবাড়ি। ঠিক উলটো দিকে বাড়ি জলপাইগুড়ি জেলা ক্রীড়া সংস্থার সম্পাদক ভোলা মণ্ডলের। তাঁর দাবি, আমার মা বিজনবালা মণ্ডলের কোলে-পিঠে বড় হয়েছেন খালেদা জিয়া। মায়ের কাছে শুনেছি, তিনি অত্যন্ত সুন্দরী ছিলেন। জলপাইগুড়িতে খালেদার বাড়ি কোথায় ছিল, এখন সেখানে কী অবস্থা, গতবছরও তাঁর আত্মীয়রা এসে তা দেখে গিয়েছেন। 

    উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান আনন্দগোপাল ঘোষের দাবি, চায়ের ব্যবসার সূত্রে খালেদার বাবা জলপাইগুড়িতে এসেছিলেন। ১৯৫০ সালের পর ইসকান্দার পরিবার নিয়ে ওপার বাংলায় ফিরে যান। জলপাইগুড়ির বিখ্যাত ফুটবলার ফজলার রহমানের ছেলে পুটু রহমান বলেন, আমার বাবার সঙ্গে খালেদার পরিবারের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। ইসকান্দার মিয়াঁ চাকরি সূত্রে জলপাইগুড়িতে পা রেখেছিলেন। পরে চাকরি ছেড়ে তিনি চায়ের ব্যবসায় যুক্ত হন। খালেদা প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন তৎকালীন বাংলাদেশ সরকারের আমন্ত্রণে ওপার বাংলায় গিয়েছিলেন পুটু। সে-সময় জলপাইগুড়ি নিয়ে তাঁর সঙ্গে খালেদার কথাও হয়েছিল। 

    ১৯১৯ সালে বর্তমান বাংলাদেশের ফেনি থেকে জলপাইগুড়িতে আসেন ইসকান্দার মজুমদার। বোনের বাসায় থেকে তিনি ম্যাট্রিক পাশ করেন এবং চায়ের ব্যবসায় যুক্ত হন। ১৯৩৭ সালে তোয়াবুর রহমানের কন্যা তৈয়বার সঙ্গে জলপাইগুড়িতেই বিয়ে হয় ইসকান্দারের। এরপর থেকেই তাঁদের ঠিকানা হয় জলপাইগুড়ির নয়াবস্তি। তিন বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে খালেদা ছিলেন তৃতীয়। মেজ বোন বিউটি তাঁর নাম দিয়েছিলেন পুতুল। এটিই খালেদার ডাক নাম হিসেবে রয়ে যায়। জলপাইগুড়ি শহরের প্রবীণ বাসিন্দাদের কারও দাবি, সদর গার্লস স্কুলের প্রাথমিক বিভাগে ভর্তি হয়েছিলেন খালেদা। যদিও ইতিহাসবিদ আনন্দগোপাল ঘোষের মতে, জলপাইগুড়ির পাহাড়িপাড়া কিংবা আদরপাড়া স্কুলেই খালেদার পড়ার সম্ভাবনা বেশি। 

    জলপাইগুড়ির নয়াবস্তিতে খালেদার বাড়ির উলটো দিকের বাসিন্দা ভোলা মণ্ডলের দাবি, আমরা খ্রিস্টান। খালেদারা মুসলিম। আমাদের পাড়ায় সেসময় হিন্দুরাও ছিলেন। মায়ের কাছে শুনেছি, প্রতিবেশী হিসেবে খালেদার পরিবার খুবই ভালো ছিল। কোনও ঝামেলা, অশান্তি ছিল না।  জলপাইগুড়ি সুনীতিবালা সদর প্রাথমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অরূপ দে বলেন, বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া আমার স্কুলে ভরতি হয়েছিলেন বলে শুনেছি। এবিষয়ে বিস্তারিত খোঁজখবর নেব। খালেদাদের একসময়ের বাগানবাড়িতে এখন যাঁদের বাস, সেই গোপ পরিবারের প্রবীণ সদস্যা ঝরনা গোপ বলেন, আমরা নব্বইয়ের দশকে জায়গাটি কিনি। তখন এটি ফাঁকা জমি ছিল। শুনেছি, এখানেই খালেদা জিয়াদের বাগানবাড়ি ছিল। আর পাশেই এখন যেটি চক্রবর্তী পরিবারের বাস, সেখানে বসতবাড়ি ছিল খালেদাদের। 
  • Link to this news (বর্তমান)