জন্ম ব্রিটিশ আমলে, দেখেছেন স্বাধীনতার আন্দোলন, নাগরিকত্ব প্রমাণে লাইনে শতবর্ষ জয়ী গান্ধারী
বর্তমান | ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫
সংবাদদাতা, ঘাটাল: শতবর্ষ পার করা বৃদ্ধাকেও দাঁড়াতে হচ্ছে এসআইআর হিয়ারিংয়ের লাইনে। ১০২ বছর বয়সে ঘাটাল ব্লকের ইড়পালা গ্রাম পঞ্চায়েতের খাসবার গ্রামের বাসিন্দা বৃদ্ধা গান্ধারী জানার নামে নোটিশ আসে। নাগরিকত্বের প্রমাণ দিতে হিয়ারিংয়ের মুখে পড়তে হচ্ছে ঘাটালের ওই বৃদ্ধাকে। বিএলও তাঁর হাতে হিয়ারিংয়ের নোটিশ দেওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়ে তাঁর পরিবার। মঙ্গলবার তাঁর হিয়ারিং ছিল। কিন্তু, তিনি যাননি।
হিয়ারিংয়ে না যাওয়ার পিছনে বৃদ্ধার যুক্তি, ১৯৫২ সালে দেশের প্রথম সাধারণ নির্বাচন থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত প্রতিটি নির্বাচনে গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করেছেন। ভোটের সেই পুরনো দিনের স্মৃতি আজও টাটকা। কাগজের ব্যালট থেকে আজকের ইভিএম সব অভিজ্ঞতাই তাঁর ঝুলিতে রয়েছে। তাই তিনি জানান, নির্বাচন কমিশনের ডাকে তিনি সাড়া দেবেন না। কারণ, তাঁর নাম ২০০২ এবং ২০২৪ সালের ভোটার তালিকাতে রয়েছে। ঘাটাল বিধানসভার ৩২-খাসবাড় হাই স্কুল বুথের বিএলও হীরালাল সিংহ বলেন, এসআইআর ডেটাবেসে তাঁর তথ্য না মেলায় এই বিড়ম্বনার সৃষ্টি হয়েছে। সেজন্যই নোটিশ ধরানো হয়েছিল।
বার্ধক্যের কারণে গান্ধারীদেবীর পায়ে আর তেমন জোর নেই। দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে টোটো-অটোয় চড়ে হিয়ারিংয়ের জন্য ব্লক অফিসে হাজিরা দিতে তিনি রাজি হননি। হিয়ারিংয়ের নোটিশ পাওয়ায় নিবার্ছচন কমিশনের উপর প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ ওই শতায়ু পার করা বৃদ্ধ। তিনি জানিয়েছেন, বাড়ি ছেড়ে কোথাও যাবেন না। নির্বাচন কমিশনকে তাঁর প্রশ্ন, এতদিন নিয়ম মেনে ভোট দেওয়ার পর হঠাৎ কেন এই জটিলতা তৈরি হল? এই ঘটনায় তাঁর পরিবারের সদস্যরাও ক্ষুব্ধ।
বৃদ্ধার ছেলে শৈল্যশ্বর জানা ও নবকুমার জানা বলেন, এত বছর ধরে রাজনৈতিক দলগুলি তাঁকে সসম্মানে বুথে নিয়ে গিয়ে ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে। অথচ আজ সরকারি রেকর্ডের ত্রুটির জন্য এই বয়সে তাঁকে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। এসআইআরের চক্করে পড়ে এসব হচ্ছে।
বিএলও হীরালালবাবু বৃদ্ধার শারীরিক অবস্থা এবং বয়সের কথা বিবেচনা করে যাতে সরকারি কর্মীরাই বাড়িতে গিয়ে তাঁর হিয়ারিং প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন সেজন্য তিনি বিশেষ আবেদন করেছিলেন। নির্বাচন দপ্তর সূত্রে জানানো হয়েছে, এদিন ওই বৃদ্ধের হিয়ারিং ছিল। যেহেতু ২০০২ থেকে শুরু করে ২০২৪ পর্যন্ত সমস্ত ভোটার লিস্টেই তাঁর নাম ছিল তাই ‘টেকনিকাল ত্রুটির জন্য’ এবার এসআইআরের ফাইনাল লিস্টে তাঁর নাম আসেনি। সেজন্য তাঁকে আর শুনানিতে যেতে হয়নি। ২০০২ এর রেফারেন্স এবং ছবি দিয়েই নাম তুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।