আলাদা করে শুনানির ব্যবস্থা নেই, দুর্ভোগ চরমে, বাড়ছে ক্ষোভ, কনকনে শীতে দাঁড়িয়ে বিশেষ চাহিদা সম্পন্নরা
বর্তমান | ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, বর্ধমান ও সংবাদদাতা, কাটোয়া: সকাল ১১টাতেও সূর্যের তেজ বাড়ছে না। যুবক-যুবতীরা ঠান্ডায় জবুথবু হয়ে যাচ্ছেন। এই শীতেও বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ব্যক্তি বা অসুস্থ বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের রাস্তায় বের না হয়ে উপায় নেই। কারণ, এসআইআর চলছে যে। গণতন্ত্রের অধিকার বজায় রাখতে তাঁরা লাইনে দাঁড়াচ্ছেন। বর্ধমান থেকে কাটোয়া, কালনা সব জায়গাতেই ছবিটা একই রকম। চাপে পড়ে কমিশন ৮৫ ঊর্ধ্বদের বাড়িতেই শুনানির নির্দেশ দিয়েছে। কিন্তু যাঁরা ৮০-র দোরগোড়ায় এসেছেন, তাঁরা এখন আর ‘যুবক’ নেই। বিভিন্ন ধরনের রোগ তাঁদের ঘিরে ধরেছে। তাঁরা চাইছেন, অন্তত অসুস্থ ও বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ব্যক্তিদের আলাদাভাবে শুনানির ব্যবস্থা করা হোক।
একসময় ট্রেনে হকারি করতেন বর্ধমানের মাঠপাড়ার বাসিন্দা শেখ গোলাম। ট্রেন থেকে পড়ে গিয়ে তাঁর পা বাদ চলে যায়। ক্র্যাচ নিয়ে চলাফেরা করেন। শুনানিতে ডাক পেয়েছিলেন। তিনি বলেন, সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে কষ্ট হচ্ছিল। বহু বছর ধরে ভোট দিয়ে আসছি। এখন হঠাৎ করে কী হল, বুঝতে পারছি না। শুনানি কেন্দ্রে কিছু নথি আনতে বলেছিল। তা এনেছি।
কাটোয়া-১ ব্লকে শুনানির জন্য নিয়ে আসা হয় বছর সাতাত্তরের বৃদ্ধা ভানু মাঝিকে। তিনি কাটোয়ার উত্তর নলাহাটি গ্রামের ৫৩ নম্বর বুথের বাসিন্দা। রেলে কর্মসূত্রে তিনি আগে চুঁচুড়ায় থাকতেন। তাই ২০০২ সালের তালিকায় তাঁর নাম নেই। মঙ্গলবার ছেলে রবিন মাঝি তাঁকে নিয়ে আসেন। রবিনবাবু বলেন, মায়ের কোমরে অপারেশন রয়েছে। ভালো করে চলতে পারেন না। লাঠিতে ভর দিয়ে কোনওমতে হাঁটাচলা করেন। আমরা বিএলওকে বলেছিলাম, তাও আমাদের এভাবে এসে হয়রান হতে হল। কাটোয়ার গাঁফুলিয়া গ্রামের ২৫১ নম্বর বুথের বাসিন্দা সত্তরোর্ধ্ব পাঁচকড়ি ঘোষকেও এদিন শুনানি কেন্দ্রে আসতে হয়েছে। তিনি দীর্ঘদিন ধরেই পায়ের ব্যথায় ভুগছেন। ভালো করে চলতে পারেন না। তিনি বলেন, বিএলও আমাকে বলেছেন শুনানিতে আসতে হবে।
এদিন খবর পেয়ে ব্লক অফিসে সরকারি আধিকারিকরা তড়িঘড়ি যাওয়ার পরই অফিস চত্বরে ভানুদেবীর শুনানির ব্যবস্থা করা হয়। ওই বুথের বিএলও দীপককুমার নন্দী বলেন, আমি কমিশনের নির্দেশ পাইনি। তাই আসতে বলেছিলাম। এটা সম্পূর্ণ আমার ব্যর্থতা। কাটোয়ার মহকুমা শাসক অনির্বাণ বসু বলেন, আমরা বয়স্ক বা অসুস্থ মানুষদের বাড়ি গিয়ে শুনানি করাতে বারবার বিএলওদের বলেছিলাম। কিন্তু বিএলও কেন এরকম করলেন, তা আমরা দেখব।
কেতুগ্রাম-২ ব্লকের বিল্বেশ্বর পঞ্চায়েতের চিতাহাটি গ্রামের বাসিন্দা সরস্বতী প্রধান দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে পক্ষাঘাতগ্রস্ত। তিনি ব্রেনস্ট্রোকে পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়েন। এদিন তাঁর স্বামী তাঁকে পাঁজাকোলা করে শুনানি কেন্দ্রে নিয়ে আসেন। তাঁর স্বামী গৌতম প্রধান বলেন, বিএলও আমাদের কিছুই বলেনি। ২০০২ সালের তালিকায় আমার স্ত্রীর নাম না থাকায় শুনানিতে আসতে বলা হয়েছিল। এদিকে অসুস্থ স্ত্রীকে পাঁজাকোলা করে নিয়ে স্বামীকে ব্লক অফিস থেকে বের হতে দেখে বিধায়ক শেখ শাহনেওয়াজ ছুটে যান। তিনি তড়িঘড়ি ওই অসুস্থ প্রৌঢ়াকে কম্বল দান করেন। বিধায়ক বলেন, কমিশন অসুস্থ মানুষদের হয়রান করছে। এঁদের ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার চক্রান্ত করা হচ্ছে।