সংবাদদাতা, করিমপুর: প্রায় জনা কুড়ি তরতাজা মানুষকে এই গ্রামে কেড়েছে আর্সেনিক। এখনও অনেকেই আক্রান্ত রয়েছেন। গত পঁচিশ বছরে করিমপুরের হোগলবেড়িয়ার যাত্রাপুর গ্রামে অনেককিছু বদলালেও আজও আর্সেনিকমুক্ত পানীয় জলের অভাব দূর হয়নি। বাসিন্দাদের অভিযোগ, হোগলবেড়িয়ার যাত্রাপুর, কালীগাঙ্গি পোড়াঘাটি গ্রাম এলাকার মানুষ আর্সেনিকের ভয়ে জল কিনে খান। এখনও কেনা জলই ভরসা গ্রামের বাসিন্দাদের। ওই গ্রামে বিশুদ্ধ জলসরবরাহের জন্য প্রায় তেরো বছর আগে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দপ্তর নলকূপবসায়। এছাড়াও ব্লক প্রশাসনের তরফে গ্রামে দু’টি সজলধারা জলপ্রকল্প তৈরি করা হলেও সমস্যা রয়ে গিয়েছে সেই তিমিরেই। এলাকাবাসীর অভিযোগ, এখন ট্যাপকলগুলি থেকেজল পড়ে না। দু’টি সজলধারার মধ্যে একটি পুরোপুরি বিকল। ফলে গ্রামের প্রায় দু’শো পরিবার ওস্কুলের খুদে পড়ুয়াদের বিশুদ্ধ পানীয় জলের জন্য এখনও দূর থেকেই জল বয়ে আনতে হয়।গ্রামে আর্সেনিকমুক্ত পানীয় জলের ব্যাপারে প্রশাসনের মুখে কুলুপ।
হোগলবেড়িয়ার যাত্রাপুর গ্রামের বিপ্লব ঘোষ বলেন, এখানে বেশিরভাগটিউবওয়েলের জলেই আর্সেনিক রয়েছে এবং তা মাত্রাতিরিক্ত। যাত্রাপুর দাসপাড়ায়সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে আর্সেনিকে। এখনও প্রতি পরিবারের অনেকেই আর্সেনিকেআক্রান্ত। কিছুদিন আগে কয়েকটি বাড়িতে ট্যাপ কলের সংযোগ দিলেওতা পানের অনুমতি দেয়নি এবং অধিকাংশ বাড়িতে কলের সংযোগ হয়নি। গ্রামেরআরএক বাসিন্দা রুস্তম মণ্ডলের কথায়, সেই আটের দশক থেকে এলাকার লোকজনগ্রামে বিশুদ্ধ পানীয় জলের জন্য প্রশাসনের বিভিন্ন মহলে বহুবার জানানোর পরেবিকল্প পানীয় জল সরবরাহের জন্য একসময় গ্রামে জলের ব্যবস্থা করেছিলজনস্বাস্থ্য কারিগরি দপ্তর। কিন্তু তার বেশিরভাগই এখন খারাপ। যে কারণে দূরের শীতলীতলার ট্যাপকল থেকে রোজ জল আনতে হয়। মাঝে মাঝে সেখানেও জল বন্ধ থাকে। এলাকার অভিভাবকরা জানান, বহুদিন আগে থেকেই গ্রামের একমাত্র প্রাথমিক স্কুল যাত্রাপুর তারক শিক্ষানিকেতনে পানীয় জলের সমস্যা রয়েছে। স্কুলের মিড ডে মিল রান্নার জন্য পাশের বাড়ির টিউবওয়েল থেকে জল আনাহয়। রান্নার মহিলাদের জল টেনে আনতেও অসুবিধা হয়। খুদে পড়ুয়ারা সবাই বাড়িথেকে বোতলে জল ভরে আনে। গরমের সময় জল ফুরিয়ে যায়। সমস্যার কথা মেনে নিয়ে পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্য চাঁদমিরা বিবি জানান, বিশুদ্ধ পানীয় জলের কষ্টে ভুগতে হয় যাত্রাপুর, দাসপাড়া ও কালীগাঙ্গি গ্রামের মানুষদের। একসময় টিউবয়েলের জলে খেয়ে এলাকার বহু মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন এবং তাদের অনেকেই মারা গিয়েছেন। স্থানীয় প্রশাসন থেকে নলকূপ বা সজলধারার ব্যবস্থা করলেও পানীয় জলের সমস্যা রয়েই গিয়েছে। করিমপুর ১-এর বিডিও অনিরুদ্ধ মণ্ডল বলেন, ওই গ্রামগুলিতে বেশ কয়েকটি সজল দ্বারা প্রকল্প হয়েছে। তবে সমস্যা মেটাতে বিশুদ্ধ পানীয় জল সরবরাহ করতে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দপ্তরকে জানিয়ে পদক্ষেপ করা হবে। -নিজস্ব চিত্র