২০০২ সালের তালিকায় নাম থাকা সত্ত্বেও শুনানিতে ডাক আসায় আতঙ্ক, পুরুলিয়ায় লাইনে অসুস্থ বৃদ্ধ, বৃদ্ধারা, হয়রানি
বর্তমান | ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫
সংবাদদাতা, পুরুলিয়া: ‘বয়স্ক মানুষ, প্রচুর হয়রানি হচ্ছে। আমার নাম ২০০২-এর তালিকায় রয়েছে। তবুও এসেছে শুনানির নোটিশ পেয়ে।’ ক্ষোভের সঙ্গে কথাগুলি বলছিলেন পুরুলিয়া ২ নম্বর ব্লকের বেলমা অঞ্চলের বাসিন্দা ষাটোর্ধ্ব বাসুদেব মাহাত।
শুধু বাসুদেববাবু নন, জেলাজুড়ে চলা ভোটার তালিকার নিবিড় সংশোধনের (এসআইআর) কাজ ঘিরে এমনই বিভ্রান্তি ও হয়রানির শিকার সাধারণ মানুষ। খসড়া তালিকায় নাম না থাকায় বুথ লেভেল অফিসাররা (বিএলও) বাড়ি বাড়ি নোটিশ বিলি করেছেন। সেই নোটিশের ভিত্তিতেই ২৭ তারিখ থেকে পুরুলিয়ার ১ ও ২ নম্বর ব্লকে শুরু হয়েছে শুনানি। কিন্তু অভিযোগ, ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় নাম থাকা সত্ত্বেও কমিশনের সফটওয়্যারে অনেককে ‘নো ম্যাপিং’ দেখানো হয়েছে। ফলে তাঁদের কাছেও পৌঁছেছে শুনানির নোটিশ। আর তাতেই তীব্র আতঙ্ক ও ভোগান্তির সৃষ্টি হয়েছে।
পুরুলিয়া ২ নম্বর ব্লকের বাসিন্দা বেলমা অঞ্চলেরই বাসিন্দা বিশ্বনাথ মাহাত, নিতাই মাহাত ও লালমোহন সহিসদের ক্ষোভ, ‘নির্বাচন কমিশনের গাফিলতিতে আমাদের আজ এখানে আসতে হয়েছে। ২০০২-এর তালিকায় নাম থাকা সত্ত্বেও কেন আমাদের বাড়িতে নোটিশ গেল? এই গাফিলতি কার?’
পুরুলিয়া ১ নম্বর ব্লকের বাসিন্দা রূপকুমার দত্ত বা সন্তোষ রক্ষিতদের প্রশ্ন, দীর্ঘদিন ভোট দেওয়ার পরেও কেন নতুন করে প্রমাণের দায় নিতে হবে? কাজ ফেলে লাইন দিয়ে শুনানিতে হাজিরা দিতে হচ্ছে। পুরুলিয়া শহরের বাসিন্দা প্রিয়াঙ্কা দে ক্ষোভ উগরে দিয়ে বলেন, ‘আমার বাবার নাম ২০০২-এর তালিকায় থাকা সত্ত্বেও আমাকে এবং আমার বৃদ্ধ বাবাকে নোটিশ দিয়ে শুনানির জন্য ডাকা হয়েছে। বয়স্ক বাবাকে নিয়ে আসতে হয়েছে, লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে।’
এই আতঙ্ক কতটা গ্রাস করেছে মানুষকে, তা বোঝা গেল সোমবারের ঘটনায়। পুরুলিয়ার পাড়া থানা এলাকার দুর্জন মাঝি (৮২) নামে এক বৃদ্ধের দেহ রেল লাইন থেকে উদ্ধার হয়। পরিবারের অভিযোগ, ২০০২ সালের তালিকায় নাম থাকা সত্ত্বেও ‘নো ম্যাপিং’ হওয়ায় শুনানির ডাক পেয়ে আতঙ্কে তিনি আত্মঘাতী হয়েছেন।
প্রশাসনের একাংশের দাবি, নোটিশ জেনারেট হওয়ার পরেই কমিশনের নতুন নির্দেশ আসে। পুরুলিয়া ২ ব্লকের বিডিও বাপি ধর বলেন, ‘এই নোটিশ অনেক আগেই জেনারেট ও বিলি করা হয়েছিল। একদিন আগে আমরা নির্দেশ পাই যে, ২০০২-এর তালিকায় নাম থাকলে আর ডাকার প্রয়োজন নেই। আমরা বারণ করা সত্ত্বেও অনেকে নাম বাদ পড়ার ভয়ে চলে আসছেন। আমরা তালিকা দেখে তাঁদের ছেড়ে দিচ্ছি।’
এ বিষয়ে বিভ্রান্তি কাটাতে পুরুলিয়া জেলাশাসক কোন্থাম সুধীর বলেন, ‘কোনও কারণে তাঁদের নাম বিএলও অ্যাপে ওঠেনি, তাই ওটা ‘নো ম্যাপিং’ হয়ে গিয়েছে। নো ম্যাপিং হওয়ার জন্য ওদের নামে নোটিশ গিয়েছে। গতকাল আমরা নির্বাচন কমিশন থেকে নির্দেশ পেয়েছি যাদের নাম ২০০২-এর তালিকায় থাকা সত্ত্বেও ‘নো ম্যাপিং’ হয়ে গিয়েছে তাদের ডাকতে হবে না। যাদের বাড়িতে নোটিশ চলে গিয়েছে, তাদের ফোন মারফত ও বিএলও মারফত জানিয়ে দিচ্ছি আর আসতে হবে না।’ নিজস্ব চিত্র