সংবাদদাতা, রামপুরহাট: নির্বাচন কমিশনের নির্দেশের পরও হিয়ারিংয়ের নামে হয়রানি অব্যাহত অশীতিপর বৃদ্ধ, বৃদ্ধা ও তাঁদের পরিজনদের। গত সোমবার কমিশন জানিয়ে দেয়, ৮৫ বছর বা তার উপরে বয়স হলে, বিশেষ ভাবে সক্ষম, অসুস্থ, অন্তঃসত্ত্বাদের ক্ষেত্রে বাড়ি গিয়ে তথ্য যাচাই করতে হবে। কিন্তু মঙ্গলবারও কমিশনের সিদ্ধান্ত অগ্রাহ্য করা হয়েছে।
রামপুরহাট ১ ব্লকের বাধা গ্রামের বছর পঁচাশির জয়াবতী মহান্ত বয়সের ভারে ন্যুব্জ, অসুস্থ। হিয়ারিংয়ের নোটিশ পেয়ে এদিন তাঁকে টোটোয় চাপিয়ে ব্লক অফিসে নিয়ে আসেন নাতি তমালচন্দ্র দাস। তিনি বলেন, ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় দিদিমার নাম ছিল না, তাই হিয়ারিংয়ে ডাকা হয়েছে। দিদিমা কংগ্রেস করতেন। ওই বছর ভোটার তালিকা রিভিশনের সময়ে দিদিমার নাম কেটে দিয়েছিল সিপিএম। এখন কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের খামখেয়ালিপনার জন্য এই বয়স্ক মহিলাকে নিয়ে বিডিও অফিসে আসতে হয়েছে। নির্বাচনের সময়ে অশীতিপরদের বাড়িতে গিয়ে ভোট নিয়ে আসছেন কমিশনের লোকেরা। আর এখন এসআইআরের শুনানির জন্য কেন কষ্ট করে দিদিমাকে বিডিও অফিসে আসতে হবে। এই পরিস্থিতির জন্য কেন্দ্রের বিজেপি সরকার ও রাজ্যের পূর্বতন বাম সরকার দায়ী।
এদিন আয়াস গ্রাম থেকে নাতির সঙ্গে ব্লক অফিসে হিয়ারিংয়ে এসেছিলেন ৮৫ বছরের ডলি বেওয়া। কনকনে ঠান্ডায় কাঁপতে কাঁপতে অসুস্থ বৃদ্ধা হিয়ারিংয়ে এসেছেন নাতিকে সঙ্গে নিয়ে। তাঁর নামে ভুল আছে। বললেন, হিয়ারিংয়ে না এলে নাগরিকত্ব হারাতে হবে, তাই কষ্ট করেও এসেছি।
আয়াস গ্রামের ষাটোর্ধ্ব বিষ্ণুনাথ মণ্ডল কিছুদিন আগে হার্নিয়া অপারেশন করিয়েছেন। হাইড্রোসিলও রয়েছে। অসুস্থ শরীরে শুনানিতে আসতে হয়েছে তাঁকেও। অন্যদিকে নলহাটি ১ ব্লকে অশীতিপর পারুল ঝাঁ তাঁর অন্ধ ছেলে আলোড়ন ঝাঁকে নিয়ে শুনানিতে হাজির হয়েছিলেন। বাড়ি ব্লক অফিস থেকে ১৫ কিমি দূরের ঝাড়খণ্ড লাগোয়া হরিদাসপুর গ্রামে। কে যে কাকে সামলাবে তার ঠিক নেই। মা সামনে হাঁটছেন। তাঁর লাঠি ধরে হেঁটে আসছেন ছেলে। আলোড়ন জানান, ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় আমার ও মায়ের নাম নেই। বাবা উত্তর ২৪ পরগনায় চাকরি করতেন। অসুস্থ অবস্থায় এসেছিলেন। প্যারালাইসিস হয়ে গিয়েছিল। ২০০২ সালে নাম ওঠেনি। দাদা, বউদির নাম রয়েছে। তাই শুনানির নোটিশ পেয়ে অনেক কষ্ট করে, টাকা খরচ করে ব্লক অফিসে এসেছি। কমিশনের লোকদের যে আমাদের মতো ভোটারদের বাড়ি যাওয়ার কথা, তা কেউ জানায়নি। যদিও ব্লকের ইলেকশন অফিসার সুমন রায় বলেন, বিএলওদের আগেই এ ব্যাপারে বলা হয়েছিল। হয়তো ইনফরমেশনটা তাঁদের কাছে যায়নি। তবে তাঁদের আগে হিয়ারিং হয়েছে। এদিকে সাঁইথিয়া ব্লকের দক্ষিণসিজা গ্রামের সত্তরোর্ধ্ব আলমিনা বিবি বছর দেড়েক আগে দুর্ঘটনায় পিঠ ও কোমরে আঘাত পেয়েছিলেন। তখন থেকেই কার্যত শয্যাশায়ী তিনি। ব্যথার জন্য তাঁকে প্রায়ই হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। দু’ দিন আগেও হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। এদিন ট্রলিতে শুয়ে ব্লকে হাজির হন তিনি।
এদিকে বোলপুরের বাসিন্দা সজল বাগ ভারতীয় মার্চেন্ট নেভিতে কাজ করতেন। কাজের সূত্রে ২০০২ সালে তিনি বাড়িতে ছিলেন না। কিছুদিন আগেই তাঁর মুখের সমস্যার জন্য অপারেশন হয়। ডাক্তার বেড রেস্টে থাকতে বলেছেন। এই অবস্থাতেও বোলপুর ব্লক অফিসে এসআইআরের লাইনে দাঁড়াতে হয়েছে তাঁকে। সজলবাবু জানান, এটা আমার দুর্ভাগ্য যে ৬৫ বছর বয়সে এসে আমাকে প্রমাণ করতে হচ্ছে আমি ভারতীয়। এটা আমার কাছে লজ্জার।